পবিত্র রমজান মাসকে তিন দশকে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত বা ক্ষমা অর্জনের আর তৃতীয় ১০ দিন নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির। এরই মধ্যে রহমতের ১০ দিন বিদায় নিয়েছে। আজ পবিত্র রমজানের এগারোতম রাত। শুরু হচ্ছে মাগফিরাতের দশক। অতএব, মাগফিরাত অর্জনের এখনই সময়।
মাগফিরাত আরবি শব্দ। অর্থ হলো ক্ষমা। ১১ রমজানের প্রথম প্রহর থেকে ২০ রমজানের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই দশকের সময়। আল্লাহ তায়ালা রমজানের দ্বিতীয় দশকে তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর একটি সিফাতি নাম ‘ক্ষমাশীল’। তিনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা : ১৫)
মানুষ সারা বছর জানা-অজানা অনেক গুনাহে লিপ্ত হয়। সেই সব গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার অনন্য সময় রমজান মাস। রমজান মাসে মুমিন-মুসলমান নিজেকে আল্লাহর দরবারে সঁপে দেয়। প্রথম ১০ দিন সব ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত কামনায় অতিবাহিত করে। তারা আল্লাহর দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়। তারপর দ্বিতীয় দশক শুরু করে অতীত গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের আবেদন নিয়ে। একপর্যায়ে গুনাহ থেকেও মুক্তি হয়। আল্লাহ রহমতপ্রাপ্তদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারপর আসে নাজাত বা মুক্তির দশক। বান্দা যখন রহমতের চাদরে মুড়িয়ে গুনাহমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন তিনি বান্দাকে নাজাত দেন। জাহান্নামের শাস্তির বদলে তার জন্য নির্ধারণ করেন চির সুখের জান্নাত।
হজরত সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখের এক বক্তৃতায় আমাদের বললেন, ‘হে লোক সকল, তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে একটি মহান মাস, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি নফল কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে যে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হলো যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। এটা ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস, এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সেটা তার জন্য পাপরাশির ক্ষমা স্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এটা এমন মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ দিন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আর যে এ মাসে নিজ দাসদাসীর প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন।’ (মেশকাত)
এরই মধ্যেই রহমতের ১০ দিন আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমরা কি রহমতের চাদর গায়ে মোড়াতে পেরেছি? পূর্ণ হক আদায় করে রোজা পালন করতে পেরেছি? পেরেছি কি নবীজির দেখানো পথে রমজানের প্রথম ১০ দিন অতিবাহিত করতে? আমি পারি বা না পারি দশক কিন্তু ঠিকই বিদায় নিয়েছে। নতুন করে এসেছে মাগফিরাতের দশক। দেখতে দেখতে এই দশকও শেষ হবে। কিন্তু আমরা কি এবারও গাফেল থাকব? এবারও কি লুটে পড়ব না প্রভুর ইবাদতে; ক্ষমা প্রার্থনার আরজি নিয়ে? আসুন, এই দশকটা অন্তত কাজে লাগাই। রোজা, তারাবি, কোরআন তেলাওয়াতসহ নফল ইবাদতের পাশাপাশি অতীত পাপের কথা স্মরণে এনে তওবা করি আর কায়োমানবাক্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করি।
লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ
মন্তব্য করুন