মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে আবারও বন্ধ হলো মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনালটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ জানুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে ১৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পেট্রোবাংলা জানায়, এ সময় অন্য টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫৫০ থেকে ৫৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এ ঘাটতির
ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে গ্যাস সংকট আরও তীব্র হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, পাইপলাইনের ত্রুটি এবং কিছু যান্ত্রিক সমস্যা মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এক্সিলারেট এনার্জি ত্রুটির সুনির্দিষ্ট বিবরণ না দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
গ্যাস সংকটের বহুমুখী প্রভাব: টার্মিনাল বন্ধ থাকায় ঢাকাসহ দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। পোশাক, সিরামিক, সিমেন্ট, এবং ইস্পাত খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। গ্যাসের চাপ কম থাকায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। এর পাশাপাশি, আবাসিক গ্রাহকরাও রান্নার কাজে বাধ্য হয়ে মাটির চুলা ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ শিল্পাঞ্চলগুলোতে উৎপাদন ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে, যা শ্রমিক ও মালিক উভয়ের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি পাম্পেও দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
শীত মৌসুমে সংকট আরও তীব্র: প্রতি শীতেই গ্যাস সংকট দেখা দিলেও এবার তা চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর ডেমরা, মাতুয়াইল, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাসাবাড়ি ও রেস্টুরেন্টগুলোয় রান্নার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি বাড়ছে। প্রয়োজনীয় ২০০ বার চাপের পরিবর্তে বর্তমানে মাত্র ১৩০ থেকে ১৪০ বার চাপের গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
গ্যাস সরবরাহের বর্তমান অবস্থা: দেশে বর্তমানে দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে, যা দৈনিক ১,১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারে। পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে জানা গেছে, বর্তমানে দৈনিক চাহিদা ৩,৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ মাত্র ২,৭১৭ মিলিয়ন ঘনফুট। একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় এ ঘাটতি আরও প্রকট হবে।
এ অবস্থায় গ্যাস সংকট সামাল দিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংকট নিরসনে টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং গ্যাস সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।