চেনা পথঘাট সময় সময় হয়ে উঠছে অচেনা। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে সারা দেশের মতো এমন চিত্র চট্টগ্রাম মহানগরীতে। নগরবাসী বলছেন, আগে রাতে ছিনতাইকারীর ভয় ছিল। এখন দিনরাত সব সময় ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাইয়ে বাধা দিলেই জখম করছে। নগরবাসী বলছেন, এখন ছিনতাইয়ের ধরনও ভিন্ন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি মারছে ছিনতাইকারীরা। তাদের ভয়ে পথ চলা দায়। সুযোগ পেলেই পথচারী, রিকশা আরোহী কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রের মুখে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার ফল বলে নগরবাসীর অভিযোগ।
একাধিক সূত্রমতে, নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন আটমাসিন. সিআরবি, লালখান বাজার, কাজীর দেউড়ি, রেলস্টেশন, নালাপাড়া, গোয়ালপাড়া, কদমতলী, পাথরঘাটা ইত্যাদি এলাকায় ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেশি। বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ, বাংলাবাজার, টেকনিক্যাল, রুবি গেট, ডেবার পাড়, চন্দ্রনগর, রেলগেট, অক্সিজেন, লিংক রোড ইত্যাদি এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রম চলে। সদরঘাট থানাধীন রশিদ বিল্ডিং, মাদারবাড়ী, শুভপুর বাসস্টেশন, পোড়া মসজিদ ইত্যাদি এলাকায় ছিনতাই চলে। পাঁচলাইশ থানাধীন প্রবর্তক মোড়, ষোলশহর রেলস্টেশন, মুরাদপুর, বাকলিয়া থানাধীন লাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, নতুন ব্রিজ, এক্সেস রোড, চান্দগাঁও থানাধীন বাহারসিঙ্গেল, বহদ্দারহাট, খতিবের হাট, হালিশহর থানাধীন ছোটপুল, নয়াবাজার, ফইল্যাতলী, সাগরপাড়, আউটার রিংরোড, হালিশহর সিগন্যাল ঘর, বন্দর থানাধীন কলসিদীঘির পাড়, আনন্দবাজার, ধূপপোল, কাস্টমব্রিজ, সল্টগোলা, ডবলমুরিং থানাধীন বিল্লাপাড়া, মিস্ত্রিপাড়ার মুখ, দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার, পাহাড়তলী ডিটি রোড, মনসুরাবাদ, পাঠানটুলী রোড, মোগলটুলী কাটা বটগাছ, আগ্রাবাদ ঢেবার পশ্চিমপাড়, আগ্রাবাদ বনানী, ইপিজেড থানাধীন সল্টগোলা মোড়, পকেট গেট, খেজুরতলা, তালতলা, পতেঙ্গা থানাধীন কাটঘর, আব্দুরপাড়া, নেভাল রোড, প্রজাপতি পার্ক মোড়, চকবাজার থানাধীন প্যারেড কর্নার, নার্সারি, শিল্পকলা, গোলপাহাড়, পাঁচলাইশ থানাধীন কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা ইত্যাদি ছিনতাইয়ের স্পট।
২০ নভেম্বর রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন কাপাসগোলা পোল এলাকায় ছিনতাইকারীর মারধরের শিকার হন বিজয় নামে এক যুবক। ছিনতাইকারীরা তার আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্যামেরা, মানিব্যাগ নিয়ে যায়। কালবেলাকে বিজয় বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসায় রওনা হই। কাপাসগোলা পোলের কাছাকাছি সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার সময় ৫ থেকে ৬ কিশোর পেছন থেকে ডাক দেয়। মুহূর্তের মধ্যে তারা সামনে এসে আমার ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করে। এ সময় তাদের বাধা দিলে ধস্তাধস্তি হয়। তারা আমাকে আঘাত করে ক্যামেরাসহ ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। তাদের হাতে রামদা, কিরিচ ও রড ছিল।
২৮ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন কাজীর দেউড়ির আলমাস মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন মর্তুজা চৌধুরী (৪৩) নামে এক ব্যবসায়ী। রাতে অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। মর্তুজা চৌধুরী বলেন, তিনি বাসার জন্য টাইলস কিনে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় আলমাস মোড়ে সাত-আটজনের একটি দল তার রিকশার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে মারধর শুরু করে। এরপর পকেটে থাকা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মানিব্যাগে থাকা সাড়ে ১১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ছাড়া মানিব্যাগে থাকা চারটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড ও তিনটি চেকও নিয়ে যায়।
২২ অক্টোবর ভোররাতে চান্দগাঁও থানার বেপারিপাড়া ব্রিজে অপরিচিত কয়েকজন লোক গতিরোধ করে ছুরিকাঘাত করে জালাল মিয়া (৫০) নামে এক ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকে। এ সময় ছিনতাইকারীরা তার অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয়।
২৪ নভেম্বর নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন ফলমন্ডি এলাকায় রেজাউল করিম সাকিব নামে এক কর্মচারীকে চোখে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে এবং ছুরিকাঘাতে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।
১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জ্যেরটেক সিডিএ আবাসিক এলাকায় চালককে গাছের সঙ্গে বেঁধে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও নগরবাসীর প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা নেই। অন্যদিকে, ছিনতাই রোধে পুলিশ নানা পদক্ষেপের কথা জানালেও কার্যত ছিনতাই কমেনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) মো. রইছ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধের জন্য ছিনতাইয়ের স্পটগুলোয় মোবাইল টিমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। তা ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।