ষাটতম জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই ঢাকা থেকে টেলিফোনে মায়ের শুভেচ্ছা পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিবসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জীবনের ৫৯ বছর পূর্ণ করলেন গতকাল বুধবার। তবে এ বছর জন্মদিনে ছিল না আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি।
১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর তার জন্ম। জরুরি অবস্থার সময় ২০০৮ সালে সপরিবারে লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই সেখানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন তারেক, সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, প্রতি রাতেই ম্যাডাম তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল রাতেও কথা বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই জন্মদিনের উইশ করেছেন ম্যাডাম। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যও টেলিফোনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
স্থায়ী কমিটির দুজন নেতা বলেছেন, এসএমএসের মাধ্যমে তারা তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্মদিনে প্রতি বছরই দলের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল হয়। এবার ব্যতিক্রম। দলের পক্ষ থেকে এবার কোনো ধরনের অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বর্তমান ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে’ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্মদিনের কোনো কর্মসূচি পালন না করতে বলা হয়। এই নির্দেশনা যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বাবা জিয়াউর রহমানের দর্শনে তারেক রহমানের রাজনীতি শুরু হয় ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে। ওই বছর তিনি বগুড়ার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। ১৯৯৮ সালের ১৮ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক অরাজনৈতিক সংগঠন ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে মা খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে বিএনপিকে শক্তিশালী করায় মনোযোগ দেন তারেক। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও নেপথ্যে থেকে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৫ সালে দেশব্যাপী তৃণমূল সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে প্রান্তের মানুষের কাছে সাড়া জাগানিয়া বার্তা দেন তারেক। ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন তিনি। ২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় দল। তখন থেকে যুক্তরাজ্যে থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ১৩টি দুর্নীতির মামলা করা হয়।
প্রায় ১৮ মাসের কারাবাসে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। মুক্তির পর তাকে যেতে হয় হাসপাতালে। এরপর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে নির্বাসিত জীবনে হারিয়েছেন একমাত্র ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে। মা খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব আর অসুস্থতা তাকে দেখতে হয়েছে দূর পরবাস থেকে।