সকালে অফিস করেন মোহাম্মদপুর আর বিকেলে মিরপুর। যানজটের এই শহরে সাত কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে থাকা দুই অফিস সামলাচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম। দুজন কর্মকর্তার দুই অফিসে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও এখন তা একা পালন করছেন মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের এই ডিসি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলামের মতো ডিএমপি সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার থেকে শুরু করে যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে নিজ দপ্তরের পাশাপাশি অতিরিক্ত এক বা একাধিক দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একজনকে একাধিক দপ্তরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে কাজের গতি কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পুলিশে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বিশেষ করে ডিএমপিতে দায়িত্বশীল যারা ছিলেন, তাদের প্রত্যেককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। আর তাদের শূন্যস্থান পূরণে ঢাকার বাইরে যারা ছিলেন তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু যে হারে ডিএমপি থেকে বদলি করা হয়েছে, সে হারে অফিসার বাইরে থেকে ডিএমপিতে বদলি করা হয়নি।
ডিএমপির একজন যুগ্ম কমিশনার জানান, বিগত সময়ে ডিএমপির দায়িত্বশীলরা আওয়ামী লীগের অনুগত হয়ে কাজ করেছেন। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। একটি অংশ ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। বিগত সময়ে যারা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদের মূল্যায়ন করে ডিএমপিতে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের অনুগতদের আনার চেষ্টা করছেন। অধিকাংশ পদে নতুন মুখ এসেছে। বাকি শূন্য পদগুলো পূরণের চেষ্টা চলছে।
দুই বিভাগে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে ডিসি মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘কিছুটা অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। দুই অফিস দুই জায়গায়। সকালে মোহাম্মদপুরে থাকি। বিকেলে যাই মিরপুর। এভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি ৩০ অক্টোবর নতুন পদে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করছি।’
একাধিক অফিসে দায়িত্ব পালনের কারণে কাজের পরিধি বাড়ার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে জটিলতাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক ওয়ারী ও মতিঝিল বিভাগের ডিসি মো. আনোয়ার সাঈদ। তিনি বলেন, ‘জটিলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।’
দায়িত্ব পালনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিসি স্যার আমাদের অফিসে থাকলে অন্য অফিসের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ফাইল নিয়ে আমাদের অফিসে ছুটতে হয়। আর স্যার ওই অফিসে থাকলে আমাদের ছুটতে হয়। একইভাবে স্যারকেও ছুটতে হয় দুই অফিসে। এতে সঠিক সময়ে নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কাজের গতি কমছে।’
তবে একাধিক অফিসের কাজ গুছিয়ে উঠতে সময় লাগলেও সামলানো যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন করেছেন ট্রাফিক উত্তরা ও গুলশান বিভাগের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী। তিনি বলেন, ‘ডিসি হিসেবে আমার কাজ কো-অর্ডিনেট করা। গুছিয়ে উঠতে সময় লাগলেও সামলানো যাচ্ছে।’
অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে যেসব বিভাগ চালানো হচ্ছে সেখানে নতুন ডিসি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগের ডিসি মো. আমীর খসরু। তিনি বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব দীর্ঘ সময় পালন করতে হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব বিভাগে নতুন ডিসি পদায়ন করা হবে। এখন পর্যাপ্ত ডিসি না থাকায় অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ডিএমপিতে ডিসি আসলেই পদায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা কালবেলাকে বলেন, এখন একটা সংকটময় সময় চলছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একজনকে একাধিক বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে চালানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাজের গতি কিছুটা কমলেও এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার লিডারশিপের পরীক্ষা হচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময় এভাবে না রেখে দ্রুত পদায়ন করা উচিত।
ডিএমপিতে অন্য যারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (সদর দপ্তর) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ডিবির রমনা বিভাগের দায়িত্বে আছেন ডিসি শামসুর রহমান ভূঁইয়া। অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ডিবি মতিঝিল বিভাগে। অপারেশন ও ক্রাইম বিভাগে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ এফ এম তারিক হোসেন খান। এর মধ্যে ক্রাইমে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন। ডিসি মো. মিজানুর রহমান ডিবি তেজগাঁও ও ডিবি মিরপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। ডিবি ওয়ারী ও লালবাগে অতিরিক্ত ডিসি হিসেবে আছেন মো. রেজাউল করিম। ট্রাফিক লালবাগ ও রমনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ডিসি দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী। একই সঙ্গে প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন বিভাগ এবং সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগে অতিরিক্ত ডিসি হিসেবে আছেন মো. আমীর খসরু। ট্রাফিক তেজগাঁও (অতিরিক্ত) ও মিরপুরে আছেন ডিসি মো. রফিকুল ইসলাম। ট্রাফিক ওয়ারী ও মতিঝিল (অতিরিক্ত) বিভাগের ডিসি মো. আনোয়ার সাঈদ।