আদালতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার (বর্তমানে খুলনা রেঞ্জে কর্মরত) উপপরিদর্শক (এসআই) আজমাইন এশার নামে মোটরসাইকেল ছিনতাই মামলা করে এখন উল্টো বিপদে শংকর এলাকার রাজন নামে এক ব্যক্তি। এসআইকে আসামি করায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান। তিনি মামলার বাদী রাজনকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি কেন পুলিশের নামে মামলা দিলেন। এই ঘটনায় আমি খুবই অপমানিত বোধ (অফেন্ডেন্ট ফিল) করছি।’
ভুক্তভোগী রাজন রায় এবং এসি শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামানের কথোপকথনের এমন একটি অডিও এসেছে কালবেলার হাতে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে রাজনকে উদ্দেশ করে এসি তারিকুজ্জামান বলেন, ‘আপনাকে আমরা মামলা করতে বললাম, আপনি মামলা করলে আমাদের জন্য সুবিধা। আপনি আবার আমাদের এসআই আজমাইনের নাম দিয়ে মামলা করলেন কেন।’ তখন রাজন বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা আদালতে বলেছি। পাশাপাশি আমার কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজসহ সব কিছু দিয়েছি। আর এই ঘটনায় এসআইও ছিল। আমি সব তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার পরে আদালতে মামলা হয়েছে।’ এসি বলেন, ‘আমাদের একজন এসআইর নামে মামলা হলে আমরা আসলে শেইম ফেইজে থাকা যাচ্ছে না। সমস্যা নাই। মামলা হবে, কিন্তু আমাকে আগে জানালে বলতাম আজমাইনের নাম এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’ জবাবে রাজন বলেন, ‘এই ঘটনায় জড়িতদেরই নাম দেওয়া হয়েছে।’
বাদীকে ভয় দেখানোর বিষয়ে এবং অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে এসি তারিকুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘বাদীকে বলেন আমার সঙ্গে কথা বলতে।’ এই কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আর ফোন ধরেননি।
রাজন জানান, শুরুতে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা না নেওয়ায় ১৬ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি নথিভুক্ত করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। কিন্তু মামলার তদন্ত নিয়ে কোনো ধরনের সাহায্য না করে উল্টো তাকে অযথা জেরা করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেননি। এ ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। অভিযোগে রাজন উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদের নেতাদের পরিচয় ব্যবহার করে মোহাম্মদপুরজুড়ে ছিনতাই, চুরি ও প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। চক্রটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অস্ত্রের মুখে আমার বাসার গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সে সময় ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ দিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন এসআই আজমাইন মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন। বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকাও নিয়েছিলেন তিনি; কিন্তু পরে মোটরসাইকেলটি সেই ছিনতাইকারীদের দিয়ে দেন তিনি। উল্টো আমাকে মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ফের থানায় অভিযোগ করি। কিন্তু থানা মামলা না নেওয়ায় এসআই আজমাইন, ঠিকাদার রিসাদ রহমান, ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হক, ইব্রাহিম খলিল, সামিউল ইসলাম, ইমন খানসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দিই।
রাজন বলেন, ৫ আগস্টের পর আজমাইনের বদলি হয়েছে। থানায় ফের অভিযোগ দিলে গত ১৪ অক্টোবর এক নারী আইনজীবী পরিচয়ে আমাকে নানা ধরনের হুমকি দেন। তিনি বলেন, তার স্বামী একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার স্বামী আমার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ে রাখছেন। আমি কার সঙ্গে যোগাযোগ করি, তিনি সব দেখছেন। ফলে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করি ধানমন্ডি থানায়।
রাজন আরও বলেন, আদালতে মামলা করেও থানা পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছি না। উল্টো এসআই আজমাইনকে আসামি করায় হয়রানি করছে। পুলিশকে আসামি না করলে তারা আমার মোটরসাইকেল উদ্ধার করে দিত।
রাজন বলেন, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ধানমন্ডি থানার এসআই সাব্বির হায়দার শুভ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ওসি স্যার নির্দেশ দিলে আমি আসামি ধরব। ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সবাই আমাকে শুধু হয়রানি করছে।
এসব বিষয়ে জানতে ধানমন্ডি থানার তৎকালীন এসআই আজমাইন এশার সঙ্গে যোগাযোগ করে কালবেলা। তিনি বলেন, ‘আমি এসবের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি আমার মতো করে কাজ করে এসেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ধানমন্ডি থানার ওসিকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি। এরপর থানায় গেলে পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, ওসি অসুস্থ, থানায় আসেননি।