ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আমূল পরিবর্তন আনতে নেপথ্যের তথ্য বের হচ্ছে রেলওয়েতে। এসব তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন সাবেক রেলমন্ত্রী ও শীর্ষ আমলারাও। এর মধ্যে বেশি প্রশ্ন উঠেছে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী ও রামু হয়ে কক্সবাজারের রেললাইন প্রকল্প ঘিরে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরে রয়েছে নানা অভিযোগও। সব মিলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্তারা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স, তমাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা রয়েছেন নানা দুশ্চিন্তায়। সরকার পতনের পর কেউ কেউ ভোল পাল্টে ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। আবার অনেকে নতুন প্রকল্পের দায়িত্ব নিতে মরিয়া বলে গুঞ্জন উঠেছে।
এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রেলওয়ে পরিদর্শক (জিআইবিআর) প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ এই রেললাইন পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন পূর্বাঞ্চল রেলের জিএম, প্রকল্প পরিচালক, চিফ অফিসারসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। নতুন জিআইবিআর প্রধানের চট্টগ্রাম রেললাইন পরিদর্শন ঘিরে শঙ্কায় রয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জিআইবিআর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম পরিদর্শন করব। রেলপথে লেভেল ক্রসিং, পয়েন্ট ক্রসিং, নিরাপত্তাসহ নানা ক্রটি থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া রেললাইন বা যাতায়াত ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে যাত্রীদের। সেই সেবা নিশ্চিত করাই রেলের অন্যতম প্রধান কাজ।
রেলের বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। গত সরকার পতনের পর তিনি কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলেন বলেও জানা গেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এই রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পটি পদে পদে ভুলে ভরা। রেলপথটিতে পর্যাপ্ত সেতু, কালভার্ট নির্মাণ না করায় গত বছর সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। রেলপথটি নির্মাণের সময় স্থানীয়দের মতামতকে উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে রেলওয়ে স্থানীয়দের দাবির মুখে আরও ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করলেও ওই এলাকায় এখনো বন্যার ঝুঁকি রয়ে গেছে।
একই চিত্র দেখা যায় রেলপথ নির্মাণের পাহাড়ি এলাকায় রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রেও। রেলপথের উভয়পাশে শক্তিশালী ও উঁচু রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ না করায় বর্ষা মৌসুমে রেললাইনে পাহাড় ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। রিটার্নিং ওয়াল নিচু হওয়ার পাশাপাশি ওয়ালের পকেট গেটগুলো অরক্ষিত রাখায় রেললাইনের ওপর হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি একটি বাচ্চা হাতির সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে হাতিটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের সবচেয়ে বড় ত্রুটি দেখা গেছে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশন নির্মাণে। সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমে এই রেলওয়ে স্টেশনের ওপর থেকে পানি চুইয়ে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করেছে। প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলওয়ে স্টেশন ভবনে পানি প্রবেশের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়েছে।
অন্যদিকে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নয়টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বর্ষার সময় পানি প্রবেশের ঘটনা ঘটছে। প্ল্যাটফর্মের শেডের উচ্চতা স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে উঁচু হওয়ায় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীদের বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া স্টেশন ভবনের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় প্রকল্পটির নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।