আরিফিন তুষার, বরিশাল
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৯ এএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নেতারা কোথায় কেউ জানে না গ্রেপ্তার আতঙ্কে কর্মীরা

বরিশাল আওয়ামী লীগ
নেতারা কোথায় কেউ জানে না গ্রেপ্তার আতঙ্কে কর্মীরা

বরিশালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই প্রভাব, শক্তি আর ক্ষমতায় প্রায় সমানে সমান। অথচ গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর গা ঢাকা দিয়েছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এখন বিএনপির মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরছাড়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় ১৬ বছর তাদের নেতাকর্মীদের অসংখ্য মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধশতাধিক মামলাও। এসব মামলায় অনেক নেতাকর্মী বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন। কেউ গুমের শিকার হয়েছেন। এখন দু-চারটি মামলায় তারা কাত হলে চলবে কীভাবে?

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার ১৬ বছরে শুধু বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুইশর বেশি মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলার বাদী পুলিশ। সম্প্রতি আওয়ামী সরকার পতনের পর কয়েকটি মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতারা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছেন বিসিসির সাবেক ১৯ কাউন্সিলর। ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে আটকের পর বিএনপির করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসন অধ্যায়। এরপর পাল্টাতে থাকে রাজনীতির চিত্র। নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। ক্ষমতা হারানোর আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সরকার পতনের দুদিন আগে বরিশাল ছাড়েন তার ছোট ভাই বরিশাল সিটির সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস কোথায় আছেন কেউ জানেন না। ৫ আগস্ট নগরীর কালীবাড়ি রোডে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়। ঘটনার সময় সেই বাড়িতেই ছিলেন সাদিক। এরপর সেখান থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে, নেতাকর্মীদের পালিয়ে থাকা অবস্থায় শুরু হয় মামলা। চলতে থাকে একের পর এক গ্রেপ্তার। অনেকের বাসা-বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে। এসব দেখে ভয়ে দিন পার করছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলের নেতাকর্মীরা।

মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোতোয়ালি মডেল থানায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে এখন পর্যন্ত ৪টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগের ৫০৪ জনের নামে মামলা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার জনকে।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, মামলায় যাদের নাম আছে, তারা জেনে-বুঝেই আত্মগোপনে আছেন। অনেক নেতা আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই আত্মগোপনে গেছেন। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পড়েছেন বড় সংকটে। তারা ‘অজ্ঞাতপরিচয় আসামি’ আতঙ্কেই বেশি কাতর। একেকটি মামলায় ২০০ থেকে ১ হাজার জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে। যে কাউকে যে কোনো সময় আটক করে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে ভয়ে রয়েছেন তারা।

মহানগর আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি বলেন, মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে অনেক সময় আত্মগোপনে যেতে হয়। আমাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়। একদিকে হামলার ভয়, অন্যদিকে গ্রেপ্তারের ভয়। তার ওপর উচ্চ আদালতে গিয়েও মিলছে না জামিন।

তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, স্বৈরশাসকের ক্ষমতার আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় তিনশ মামলা হয়েছে। আমি একাই ৫৩ মামলার আসামি। সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। সেই ঘটনার মামলায় আমাকেই উল্টো আসামি করা হয়। আওয়ামী লীগ মাত্র চারটি মামলায় উধাও হয় কীভাবে?

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দিয়েছিল। এসব মামলায় নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কেউ আবার মাসের পর মাস কারাভোগ করেছেন।

তবে মামলা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অনেককেই আসামি করা হয়েছে, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। প্রতিহিংসা নয়, সহানুভূতি থাকা দরকার।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মামলায় নাম উল্লেখসহ যেমন আসামি করা হয়েছে, তেমনি অজ্ঞাত আসামিও রয়েছে। অনেককে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। তবে নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওয়ার্ল্ড ভিশনে চাকরির সুযোগ

লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীর জানাজায় অসুস্থ হয়ে জামায়াত নেতার মৃত্যু

আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? জেনে নিন রাশিফলে

থানচিতে জরায়ু ক্যানসারের টিকা পাবে ১২৩৫ কিশোরী

কিউবায় তিন দিন পর বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আশরাফুল মুনিম

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

২২ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি 

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১০

চাঁদপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

১১

অটোমেটেড মেশিনের দিকে ঝুঁকছে পোশাক কারখানার মালিকরা

১২

ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার

১৩

মধ্যরাতে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা

১৪

ব্যারিস্টার সুমন কি গ্রেপ্তার হয়েছেন?

১৫

আইটেক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ভারতে গেলেন ১০ কর্মকর্তা

১৬

চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

১৭

শুরু হলো আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প

১৮

বাবা হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

১৯

দৌলতদিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক

২০
X