যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এস আলমের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার। ইসলামী ব্যাংক কয়লা আমদানির এলসির অর্থ ছাড় না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকি কয়লাবোঝাই জাহাজ বহির্নোঙ্গরে থাকলেও এলসির অর্থ পরিশোধ না করায় খালাস করা যাচ্ছে না। এদিকে, বর্তমানে কেন্দ্রটিকে যে পরিমাণ কয়লার মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি তিন দিন চালানো যাবে। আর একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন করলে মজুদকৃত কয়লা দিয়ে সাত দিন চলবে। আজ-কালের মধ্যে কয়লা খালাস না করলে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে চলমান লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেন্দ্রটি চালাতে দৈনিক ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক যে এলসির অর্থ ছাড় করছে, সেটা আমরা গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে জেনেছি। আমাদের আগে জানানো হয়নি। আগে জানতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তিনি বলেন, তারপর প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করব। এসএস পাওয়ারের পাওনা টাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার দেড়শ কোটি টাকা রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে বলেও জানান পিডিবি চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর এসএস পাওয়ারের এলসি খোলা নিয়ে বিরূপ আচরণ করছে ইসলামী ব্যাংক। চট্টগ্রামে বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় অবস্থিত বাঁশখালী ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে শতভাগ মার্জিন দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮টি এলসি খোলা হয়। এর মধ্যে ৫টি এলসির কয়লা খালাস করা হয়েছে। তবে এই ৫টি এলসির অর্থ ছাড় করেনি ইসলামী ব্যাংক। এসব এলসির মধ্যে ৩টির অর্থছাড় করার নির্ধারিত সময় ছিল যথাক্রমে গেল ৬ আগস্ট, ১১ ও ২২ আগস্ট। আগের কয়লার বিল না পাওয়ার কারণে রপ্তানিকারকরা বর্তমানে বহির্নোঙ্গরে থাকা তিনটি জাহাজের কয়লা খালাস বন্ধ রেখেছে। এই তিনটি জাহাজে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার টন কয়লা রয়েছে। শুধু তাই নয়, আগের বিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কয়লা ছাড় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানিকারক বেনিফিশিয়ারি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংককে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এসএস পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। রপ্তানিকারক, ব্যাংক ও সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্রুত কয়লা ছাড় করা না গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমরা আশা করছি, তার আগেই বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যাবে। এলসি ছাড় না করায় একদিকে যেমন উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি জাহাজ বসে থাকা দৈনিক ৬০ হাজার ডলার জরিমানা যোগ হচ্ছে। এরই মধ্যে ১ মিলিয়ন ডলারের ওপর জরিমানা হয়েছে।
তিনি জানান, এসএস পাওয়ারের নামে ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখায় ঋণ নেই। শুধু ইসলামী ব্যাংক কেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাংককেই ঋণ নেই। যা ঋণ রয়েছে সবটাই বিদেশি ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংক গুলশান সার্কেল-১ ব্র্যাঞ্চে চলতি হিসাব রয়েছে। সেখানে এলসির বাইরে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার মতো আমানত রয়েছে। সেই হিসাব থেকেও অর্থ ছাড় না করায় চীনা প্রকৌশলীদের বেতন দেওয়াসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ট্যান ঝেলিং আরও বলেন, ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে সাড়া না পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে গত ১২ আগস্ট। তারপরও কোনো সুরাহা করা হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসের শুরু থেকে সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে, যা এখানো বিদ্যমান। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে আছে। আর খরচ বেশি হওয়ায় তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। এই অবস্থা এখন কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন যদি কয়লাভিত্তিক একটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে লোডশেডিং অনেক বেড়ে যাবে।
বর্তমানে দেশে কয়লাভিত্তিক পাঁচটি কেন্দ্র রয়েছে। গত অর্থবছরে ৫টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে এস এস পাওয়ারে। কেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ২০ টাকা ৫৩ পয়সা।