মনোয়ার হোসেন মান্না
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ এএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিষ্ক্রিয় সার্ক সচলের উদ্যোগ বাংলাদেশের

আঞ্চলিক সহযোগিতা
নিষ্ক্রিয় সার্ক সচলের উদ্যোগ বাংলাদেশের

দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির দর্শন নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চিন্তাধারা থেকে ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে আঞ্চলিক জোট সার্ক। ওই বছরের ৭ থেকে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা সম্মেলনের মাধ্যমে জোটটি সাংগঠনিক কাঠামো পায়। পরে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য পদ লাভ করায় জোটটির সদস্য হয় ৮টি দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সমন্বয়ের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও নানা কারণে প্রায় ১০ বছর ধরে সংস্থাটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

এখন পর্যন্ত সার্কের ১৮টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালে নেপালে সর্বশেষ সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে সার্কের ১৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের উরির সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সম্মেলন বয়কট করে ভারত। দেশটির সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। এরপর থেকে মোটামুটি অকার্যকর দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় এ সংস্থা।

নিষ্ক্রিয় সার্ক সচলের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্কের পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে আগ্রহী। দায়িত্বগ্রহণের পর এ ব্যাপারে কয়েকবার কথা বলেছেন তিনি।

সম্প্রতি ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তবে এটি এখন কেবল কাগজে কলমে আছে, কাজ করছে না। ‘সার্কের চেতনার’ পুনরুজ্জীবন হওয়া উচিত। আট সদস্যের এই জোট আঞ্চলিক অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে।

সর্বশেষ গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক রাষ্ট্রগোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভারত এবং অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্য এবং সমতার ভিত্তিতে।’

পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, তিনি চলতি মাসের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। সার্কভুক্ত দেশগুলোর সব রাষ্ট্রপ্রধান একত্রিত হয়ে একটি ছবি তোলার চেষ্টা করব। সার্ক একটি মহৎ উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল; এটি এখন কেবল কাগজ-কলমে বিদ্যমান। আমরা সার্কের নাম ভুলে গেছি, আমি সার্কের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। অনেক দিন সার্ক সম্মেলন হচ্ছে না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, সার্ক সচলের বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় আছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাওয়ার আগে হয়তো পরিকল্পনার মধ্যে এটি যুক্ত হবে। এখন বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তাও সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাবেন। সেখানে অধিবেশনের ফাঁকে অনেকের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে, এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরাও হয়তো থাকবেন। তখন এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। আলোচনার পরে অন্য নেতাদের রেসপন্স অনুযায়ী একটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়তো আসবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সার্ক পুনরায় সচল করতে আসলে এটিই অন্যতম উপায়- সেটি হলো বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা শুরু করা। সার্ক জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টিতে জোর দেওয়া। তাহলেই একটা ইতিবাচক ফলাফলের দিকে বিষয়টি এগোবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নেপাল বহু দিন ধরেই এই আঞ্চলিক জোটটিকে সক্রিয় করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এ প্রচেষ্টা শুরু হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। সার্ক ও বিমসটেকের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ও নেপাল।

সার্কের এমন অবস্থায় আসা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের তিক্ততাকে দায়ী করছেন কূটনীতিকরা। আর বর্তমানে সার্কের সামনে এগোনোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আফগানিস্তানের দায় দেখছেন ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, সার্কের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ কোনোরকম চলছে। দশ বছর ধরে সার্কের সম্মেলন হচ্ছে না। শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে সম্মেলন বা বৈঠক হচ্ছে না। এসব না হওয়ার মধ্যে ফাংশনাল বা গভর্নিং বডি পর্যায়ে আমাদের কাজগুলো চলছিল; কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবান আসার পর আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে বৈঠক বা ফাংশনাল কাজগুলো করাও কঠিন; কিন্তু তাদের প্রতিনিধিত্ব কে করবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার দু-এক সদস্য তাদের নিয়ে আপত্তি করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সর্বক্ষেত্রে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করুন : সাবেক এমপি হাবিব

জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ : ফরহাদ মজহার

ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান

ঢাকায় নাটোরবাসীর মিলনমেলা শুক্রবার

সোনারগাঁয়ে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের সুপারিশ সংবিধান সংস্কার কমিশনের

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন মোখলেছুর রহমান

শেখ পরিবার সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ : দুদু 

শীতে বাড়ছে ডায়রিয়া, ৮৫ শতাংশ রোগীই শিশু

এসএমসি’র ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে লোগো উন্মোচন 

১০

৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের ভোটগ্রহণের প্রস্তাব

১১

‘একদম চুপ, কান ফাটাইয়া ফেলমু’, অধ্যক্ষকে জামায়াত কর্মী

১২

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন

১৩

বগুড়ায় নাশকতা মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৪

বিয়েতে অস্বীকৃতি, বাবার গুলিতে মেয়ে নিহত

১৫

সাত কৃষককে ধরে নিয়ে গেল সন্ত্রাসীরা, মুক্তিপণ দাবি

১৬

ছাগলকাণ্ড : সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রিমান্ডে

১৭

চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, হবে যেসব আলোচনা

১৮

শৈশবের বন্ধুদের প্রিয় কবিতা শোনালেন মির্জা ফখরুল

১৯

পুতুল-টিউলিপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

২০
X