স্থলভাগে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। টার্মিনালটি নির্মাণ হবে পটুয়াখালীতে। এরই মধ্যে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের হাতে টার্মিনালটির মালিকানা থাকবে। পিডিবি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সম্প্রতি সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট সংক্ষেপে এফএসআরইউ) নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে সরকার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে নষ্ট হয়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ফের বেসরকারি খাতের এ টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করব না। স্থলভাগে সম্পূর্ণ সরকারের মালিকানায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এজন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পটুয়াখালীর কোনো এক স্থানে এটি হবে। কমিটি খুঁজে বের করবে, কোথায় টার্মিনালটি করার জন্য উপযুক্ত। তিনি আরও জানান, টার্মিনাল নির্মাণের স্থান ঠিক হওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে। কত ক্ষমতার হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এটা বলা যাবে না। গঠিত কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারব।
বর্তমানে ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে থাকা টার্মিনাল দুটিই বেসরকারি মালিকানার। এর একটি মালিকানায় আছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি, অন্যটি সামিট গ্রুপের। গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময়ে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল এফএসআরইউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর টার্মিনালটি ঠিক করে চালু করতে একাধিকবার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলেও কার্যত তা হয়নি। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সামিটকে কড়া ভাষায় চিঠিও দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল বিকেল থেকে টার্মিনালটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করে।
সামিটের টার্মিনালটি বন্ধ থাকার কারণে সরকার স্পট মার্কেট থেকে চার কার্গো এলএনজি কেনা বাতিল করে। এ সময় দেশে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যায়। এখন এলএনজি টার্মিনালটি চালু হলেও স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কিনতে না পারায় আপাতত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
চলতি বছরের জুলাইয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অ্যাশপন্ডে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হারা শোহেই। এর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেন্ট (ইওআই) বা আগ্রহপত্র দিয়েছে সরকারি খাতের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে তারা এই টার্মিনাল করার প্রস্তাব দিয়েছিল। স্থলভাগের এই টার্মিনালের মাধ্যমে কোম্পানিকে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি, পরিচালনা, মজুত এবং রিগ্যাসিফিকেশনের অভিজ্ঞতা থাকার কথা বলা হয়েছে। ২০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে অর্থ সংস্থানও সে কোম্পানিকেই করতে হবে।
তারও আগে এলএনজির স্থলভাগে টার্মিনাল নির্মাণে ৪টি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছিল জ্বালানি বিভাগ। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ওই চার কোম্পানির সঙ্গে অবশ্যই পালনীয় নয় এমন সমঝোতা স্মারক (নন-বাইন্ডিং এমওইউ) অথবা যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন চুক্তি করার জন্য ২০১৮ সালের নভেম্বরে নীতিগত অনুমোদন দেয় জ্বালানি বিভাগ।