নাকের সমস্যা নিয়ে রাজধানীর গ্রিন রোডে কমফোর্ট হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক জাহীর আল আমিনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ৪৮ বছর বয়সী মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুল। নাকের হাড় সামান্য বেড়ে যাওয়ায় ছোট একটি অস্ত্রোপচার করাতে বলেন চিকিৎসক। তার অধীনেই অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু সামান্য এই অস্ত্রোপচারে মৃত্যু হয় শিমুলের।
গত ২০ আগস্ট রাতের ওই ঘটনায় পরদিন শিমুলের বোনের ছেলে রিয়াজ ইসলাম বাদী হয়ে চিকিৎসকসহ চারজনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন অধ্যাপক ডা. জাহীর আল আমিন, অ্যানেস্থেসিস্ট ডা. ইফতেখারুল কাওছার, কমফোর্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান কবির আহামেদ ভূঁইয়া ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিয়া ইসলাম। তবে অভিযোগ রয়েছে, শিমুলের পরিবার হত্যা মামলা করতে চাইলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের অবহেলাজনিত মৃত্যুর ধারা দেন। চিকিৎসক জাহীর আল আমিন ও ইফতেখারুল কাওসারকে গ্রেপ্তার করলেও রিমান্ড আবেদন না করে আসামিদের জামিনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর চুয়াডাঙ্গায় দাফন করা হয়েছে সামসুদ্দোহা শিমুলের লাশ। এর আগের দিনই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন চিকিৎসক জাহীর ও ইফতেখারুল।
মামলার বাদী রিয়াজ ইসলাম কালবেলাকে বলেন, চিকিৎসক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। আমাদের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পাই। থানায় আমরা ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি আমাদের কথা না শুনে ৩০৪-এর ক ধারায় মামলা দেন। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ কোনো রিমান্ড চায়নি, যা সন্দেহজনক। যে কারণে আদালত আসামিদের তিরস্কার করে জামিন দিয়েছেন। রিয়াজ বলেন, আমরা মনে করছি এই মামলা থানা পুলিশের কাছে থাকলে সঠিক তদন্ত হবে না। আমরা আদালতে আবেদন করব, যাতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।
নিহতের স্ত্রী সায়মা সুলতানা বলেন, আমার স্বামী একজন সুস্থ-সবল মানুষ। সেফটোপ্লাস্টি সার্জারির মতো একটি ছোট সার্জারি করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই। আমার দুই সন্তানকে কী বলে সান্ত্বনা দেব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে কমফোর্ট হাসপাতালের জিএম সেলিম সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে কলাবাগান থানার ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির বলেন, আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে। এই দফায় রিমান্ড আবেদন না করা হলেও পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রিমান্ড চাওয়ার সুযোগ আছে। আমি আমার জায়গা থেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। উল্লেখ্য, ডা. জাহীরের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ আগেও উঠেছিল। ২০২২ সালে তিনি এক নারীর কানের ভুল সার্জারি করার কারণে তার চিকিৎসা সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল, যা এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন।