মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় ‘স্থায়ী টাস্কফোর্স’ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার, এনএসআই ও ডিজিএফআইর প্রতিনিধি নিয়ে এই টাস্কফোর্স গঠিত হবে। মাদক নির্মূল অভিযানকে স্থায়ী রূপ দিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অভিযান কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জেলা পর্যায়ে স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়। প্রয়োজনে উপজেলা পর্যায়েও এই টাস্কফোর্স গঠনের অভিমত ব্যক্ত করা হয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সপুারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সামছুল আলম দুদু, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, ময়েজ উদ্দিন শরীফ, মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল) ছাড়াও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সুরক্ষা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজি মেজর জেনারেল মো. নুরুল আনোয়ার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় টাস্কফোর্স রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালককে (অপারেশন) সভাপতি ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করে ওই টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে। এতে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, স্থানীয় র্যাবের প্রতিনিধি, বর্ডার গার্ডের প্রতিনিধি, কোস্টগার্ড প্রতিনিধি, জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহকারী পরিচালক ও ডিজিএফআইর একজন প্রতিনিধিকে টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। একই আদলে দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে টাস্কফোর্স গঠনের রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে বলেও জানানো হয়।
বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি জানান, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৫ হাজার ৬৪০টি অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ১০৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ২ হাজার ১১৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২১টি দেশি মদের দোকান, ৩৯টি বিদেশি মদের দোকান ও ২৩৫টি মদের বার রয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২১ মে পর্যন্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান ও বারে ৩২৮ পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুটি বারকে লাইসেন্সের শর্তভঙ্গের কারণে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং একটি বিলাতি মদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ১৮টি সিসা বার রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে দুটির কার্যক্রম বন্ধ করেছে। আরও দুটি সিসা বার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর ‘গ’ তপশিলের ক্রমিক-৪ (গ) অনুসারে সিসায় নিকোটিনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ২ শতাংশের বেশি থাকলে তা মাদক হিসেবে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে ওই সিসা বারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সিসা বার থেকে নিয়মিতভাবে নমুনা সংগ্রহ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতাধীন পাঁচটি রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।