তামাবিলে অবস্থিত সিলেট-১০ নম্বর কূপে কী পরিমাণ তেল মজুত আছে, সেটা জানা যাবে আগামী মাসের শেষদিকে। মার্কিন কোম্পানি স্লামবার্জার মজুত নিরূপণে কাজ করছে। এদিকে, শুধু তেল উত্তোলনের জন্য ১০ নম্বর কূপের পাশে সিলেট-১২ নামে আরেকটি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে কূপ খননের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাকের সঙ্গে চুক্তি করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।
এদিকে, একই এলাকায় সিলেট-১০ এক্স নামে আরেকটি কূপ খননের অনুমোদন দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্যাস উত্তোলনের জন্য এই কূপ খনন করা হবে। পাশাপাশি এই কূপ দিয়ে তেল উত্তোলনেরও চেষ্টা করা হবে। শিগগির এই কূপ খননেও সিনোপ্যাকের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এসজিএফএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার কালবেলাকে বলেন, তেলের মজুত নির্ণয় করতে স্লামবার্জার কাজ করছে। চলতি মাসের শুরুতে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী মাসের মধ্যে মজুতের তথ্য জানতে। আশা করি তা জানতে পারব। তিনি বলেন, তেল উত্তোলনের জন্য সিলেট-১২ নম্বর কূপ খনন করা হবে। ডিপিপি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া সিলেট-১০ এক্স কূপ খননের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্যাস উত্তোলনের জন্য এই কূপ খনন করা হলেও তেল উত্তোলনও টার্গেট থাকবে। চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাক সিলেট-১০ এর মতো সিলেট-১২ ও সিলেট-১০ এক্স কূপ খনন করবে।
এসজিএফএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মার্কিন কোম্পানি ম্লামবার্জারকে বলা হয়েছে আগামী মাসের মধ্যে তেলের মজুত নিয়ে প্রতিবেদন দিতে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কোম্পানিটি কাজ করছে। পাশাপাশি শুধু তেল উত্তোলনের জন্য ১২ নম্বর কূপ খনন করা হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য ডিপিপি আগামী মাসে অনুমোদনের আশা করছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া গ্যাস উত্তোলনের জন্য সিলেট-১০ এক্স কূপটি খননে চীনের সিনোপ্যাকের সঙ্গেও চুক্তি হবে আগামী মাসে। এই কূপটি তিন হাজার তিনশ মিটার গভীরতায় খনন করা হবে। ব্যয় হবে সিলেট-১০ নম্বর কূপের চেয়ে কিছুটা কম। সিলেট-১০ নম্বর কূপ খননে ব্যয় হয়েছিল ২০২ কোটি টাকা।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সিলেট-১০ কূপের একটি স্তরে তেল পাওয়ার কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। একই কূপে গ্যাসের তিনটি স্তর পাওয়া গিয়েছিল। সিলেটের তামাবিল অঞ্চলে ৮ দশমিক ৪৮ একর এক ফসলি জমিতে অনুসন্ধান কূপ খননের সময় তেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তা সরকারি নীতিনির্ধারকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তোলে। সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেট-১০ নম্বর কূপের কাছাকাছি তেলের জন্য একটি এবং আরেকটি গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা নেয় এসজিএফএল।
সিলেট-১০ কূপ খননে ২০২১ সালের অক্টোবরে ২০২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। খনন ঠিকাদার হিসেবে চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাকের সঙ্গে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে টার্ন কি চুক্তি সই করে কর্তৃপক্ষ। এ কূপে চারটি স্তরে গ্যাস ও একটি স্তরে তেল পাওয়া গেছে। ২৫৪০ থেকে ২৫৬৫ মিটার গভীরতায় ডিএসটি চলাকালীন দৈনিক ২২-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস প্রবাহের বিপরীতে ওয়েলহেড প্রেশার ৩২৫০ পিএসআইজি। এ স্তর থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ১৩৯৭ হতে ১৪৪৫ মিটার গভীরতায় টেস্ট করে ক্রুড অয়েল পাওয়া যায়; যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি। স্বয়ংক্রিয় প্রেশারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল হারে তেল প্রবাহিত হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর এ কূপের ৯ হাজার লিটার তেল চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠানো হয়েছে। পাঠানো তেল পরীক্ষা শেষে দেশেই পরিশোধন করা যাবে বলে মতামত দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি।
দেশে প্রথমবারের মতো ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম তেলের খনি পাওয়া যায়। তখন দৈনিক ৫০০ ব্যারেল করে উত্তোলন করা হতো। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর ৩৭ বছর পর দেশে আবারও জ্বালানি তেলের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এবারও সিলেটে মিলেছে এ খনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন খনিতে তেলের মজুত ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল। আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মূল্য (প্রতি লিটার ৫৬ টাকা) হিসাবে ৭ হাজার কোটি টাকা। বিপিসির তথ্যানুযায়ী, বছরে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। এর প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। এতে বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়।