দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভার। এবাদত হোসেনের দ্বিতীয় বলটি আউটসাইড-এজের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন চেতেশ্বর পুজারা। ডানদিকে ড্রাইভ দিলেও বল গ্লাভসে রাখতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। ১২ রানে জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত ৯০ রানে থামেন ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার। ততক্ষণে ম্যাচও ভারতের নিয়ন্ত্রণে। দলীয় ২৬১ রানে পুজারাকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। প্রথম দিন আরও দুবার ক্যাচ মিস করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। দিন শেষে ভারতের স্কোর বোর্ডে ৬ উইকেটে ২৭৮ রান—লোকেশ রাহুলদের স্বস্তি। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা তাইজুলের কণ্ঠেও ঝরেছে সেই আক্ষেপ, ‘যদি ভুলগুলো না হতো, হয়তো আরও ভালো অবস্থানে থাকতাম।’ অবশ্য তার আগে সতীর্থদের পক্ষ নিয়েছেন তিনি, ‘ক্যাচ তো খেলার অংশ। কেউ চায় না, ইচ্ছা করে ক্যাচ মিস করি।’
তাইজুল ঠিকই বলেছেন, কেউ ইচ্ছে করে ক্যাচ ফেলে দেয় না। কিন্তু গত এক বছরে শুধু টেস্ট সংস্করণেই বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ক্যাচ মিস করেছে বহুবার। গতকালসহ শেষ ১০ টেস্টের প্রতিটিতে ক্যাচ মিস করেছেন এবাদত-সোহানরা, সংখ্যায় যা ২০টি। চলতি ম্যাচের আগে ৯ টেস্টে মিস করেছিল ১৭টি। চট্টগ্রামে টেস্ট শুরুর আগেও ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমটের কাছে ছিল ক্যাচ নিয়ে প্রশ্ন। ক্রিকেটে প্রচলিত প্রবাদকে অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্যাচ মিস মানেই ম্যাচ মিস নয়।’ রেফারেন্স হিসেবে বলেছিলেন, তার কাছে এমন ভিডিও আছে, যেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ক্যাচ মিস করে ম্যাচ জিতেছে দল। ফিল্ডিং কোচের এমন মন্তব্যের পর বাংলাদেশ এক ইনিংসের প্রথম দিনে ক্যাচ মিস করেছে তিনটি।
স্বাভাবিকভাবে দিন শেষে ফিল্ডিংই হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন মিসগুলো না হলে ভারতকে প্রথম দিনেই অলআউট করার সুযোগ ছিল কিনা—এমন প্রশ্নে তাইজুল বলেছেন, ‘হ্যাঁ এটা (অলআউট করা যেত) আমি স্বীকার করি। এটা বলতে পারেন। আরও ১০-১৫ ওভার বাকি থাকতে ৫-৬ উইকেট পড়ে গেলে এবং সুযোগগুলো (ক্যাচ মিস) কাজে লাগালে সম্ভব ছিল। অলআউট করা অসম্ভব ছিল না।’
দিনশেষে ভারত লক্ষ্য স্থির করেছে, প্রথম ইনিংসে অন্তত সাড়ে তিনশ। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সে কথা বলে গেছেন জীবন পেয়ে বড় ইনিংস খেলা পূজারা। বাংলাদেশ যে সুযোগ মিস করেছে সে আক্ষেপ টেনে তাইজুল বলেছেন, ‘আমরা সুযোগগুলো নিতে পারলে এরই মধ্যে তাদের অলআউট হয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তারা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, তিনি (পূজারা) ব্যাটিং করেছেন, উইকেটের আচরণ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। তিনি যেটা বলেছেন ভালো বলেছেন।’ আজ প্রথম সেশনে ভারতের বাকি ৪ উইকেট তুলতে পারলে দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামবে স্বাগতিকরা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিন্তাভাবনা কী থাকবে? তাইজুলের সাদামাটা উত্তর, ‘আমরা যখন ব্যাটিং করব, পূজারার মতো মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। তাহলে আমরাও ভালো করতে পারব।’ সাগরিকার উইকেট গতকাল যে আচরণ করেছে, তাতে স্পিনাররা যতটা সহায়তা পেয়েছে, ব্যাটাররা ততটাই চাপে পড়েছে। উঁচু-নিচু বাউন্স, টার্ন সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশকে মনোযোগী ব্যাটিংই করতে হবে।