মিরপুর একাডেমির ভেতর তখন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ট্রফি নিয়ে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট কমিটির (সিসিডিএম) কর্মকর্তারা। বাইরে স্পন্সরের লোগো সংবলিত ব্যানারও সাজানো আছে। কিন্তু অনুষ্ঠানটা যে হবে না, সেটাও ততক্ষণে বুঝে গেছেন সিসিডিএমের কর্মকর্তারা। কেননা, একই সময় বিসিবিতে ‘ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব অর্গানাইজার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কর্মকর্তাদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছিল। বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কার ইস্যুতে কদিন আগে দেওয়া আলটিমেটামের কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না আসাতেই কঠোর অবস্থানের পথ বেছে নিয়েছে ক্লাবগুলো। ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান ও আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বিষয়টি বিসিবির প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের সঙ্গে আলাপের পর গণমাধ্যমেও জানিয়ে দেন ক্লাব কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটির প্রধান ও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের পদত্যাগ দাবিও জানান তারা।
বিকেল ৪টায় হওয়ার কথা ছিল ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেটা সামনে রেখেই বিসিবিতে এসেছিলেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন চৌধুরী। ঠিক একই সময় বোর্ডে প্রবেশ করেন বিসিবির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে ক্লাব প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ করেন ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু, লুৎফর রহমান বাদলসহ অন্যরা। বিসিবি প্রেসিডেন্টকে দেওয়া চিঠিতে গঠনতন্ত্র সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়া বাতিল, কমিটি বিলুপ্তকরণ ও বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীনের পদত্যাগের দাবি তোলেন তারা।
বিসিবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে একটা স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল একটা খসড়া গঠনতন্ত্রে যে ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেটা আমাদের ক্লাব ও সংগঠকবিরোধী। যেটা কারোরই কাম্য ছিল না। এর মাধ্যমে ঢাকার সব ক্লাবকে অপমাণ করা হয়েছে। ক্লাব ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করতে যা যা করণীয়, সেটা ওখানে (খসড়ায়) আছে। আমরা এটা দ্রুত বাতিল এবং কমিটি বিলুপ্তের দাবি জানিয়েছি।’ বিষয়টি নিয়ে আরেক ক্রীড়া সংগঠক লুৎফর রহমান বাদল বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা খেলব না। খেলা থেকে বিরত থাকব। আমরা খেলার পক্ষে, আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চলছে। এগুলো বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্রিকেটের সঙ্গে নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকব না।’
ক্লাব কর্তাদের বক্তব্য আমলে নিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগির বোর্ড মিটিং ডাকবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা চাই এটা দ্রুত সমাধান হোক। আমরা সবাই খেলতে চাই। কারণ, খেলাটা বন্ধ হলে দেশ ও ক্রিকেটের ক্ষতি। কিন্তু যে জিনিসগুলো করা হয়েছে—তা দেশের ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। যারা করেছে, কেউই কিন্তু ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট নয়। উনারা জানেই না কীভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট এ পর্যায়ে এসেছে।’ সুষ্ঠু সমাধানে তাকিয়ে আছেন জানিয়ে বাদল বলেন, ‘সংশোধনী কমিটি বাতিলের অনুরোধ করেছি, কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ দাবি করেছি। আমার ধারণা, উনি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করবেন। আমরা তাকিয়ে আছি।’ স্মারকলিপি পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি মাত্র হাতে পেয়েছি। এটা পড়ে মন্তব্য করব। ক্লাবগুলো আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা এটি বিবেচনা করব।’ উল্লেখ্য, আন্দোলনে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ হচ্ছে না। তবে সিসিডিএম সভাপতি সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, সূচি পরিবর্তন করবেন তারা। স্থগিত বা বয়কট—এমন কিছু মনে করেন না তারা।