অবিশ্বাস্য এক গণআন্দোলনে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ঘোষিত বহুকাঙ্ক্ষিত সংস্কার কর্মসূচির শুরুটা মাসদুয়েক আগেই শুরু হয়েছিল ক্রীড়াঙ্গনে। ক্রীড়া প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জাতীয় ফেডারেশনগুলোর সভাপতিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি। এর পরই ফেডারেশনগুলোর নতুন সভাপতি নিয়োগের পাশিপাশি পর্যায়ক্রমে সব ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তারই আলোকে বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম দফায় নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সদ্য সাবেক কমিটির নির্বাহী পদে থাকা কারও স্থান হয়নি নতুন এই কমিটিগুলোতে। তবে গত কয়েক বছর ফেডারেশন থেকে দূরে থাকা অনেককেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। কোনো কোনো ফেডারেশনে একেবারে নতুন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব।
ফিরিয়ে আসাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাদেশে দাবা খেলার বিস্তারে অনন্য ভূমিকা রাখা সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ। বিগত দিনে তিনি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এবার তাকে দেখা যাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে। ফিদে মাস্টার ড. তৈয়বুর রহমান সুমন দায়িত্ব পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদকের।
দাবা ফেডারেশনের সাবেক-বর্তমান দাবাড়ুদের অবস্থান না থাকলেও ১৯ সদস্যের অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে আছেন বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান অ্যাথলেট। সভাপতি হিসেবে আছেন জাতীয় পর্যায়ে পদক পাওয়া অ্যাথলেট ও পাতিয়ালা থেকে প্রশিক্ষিত প্রশিক্ষক মেজর জেনারেল ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরে এসেছেন স্বর্ণজয়ী অ্যাথলেট ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শাহ আলম। কমিটিতে আছেন কিতাব আলী, মিজানুর রহমান, মজিবুর রহমান মল্লিক, ফরিদ খান চৌধুরী, ফিরোজা খাতুন, শর্মিষ্ঠা রায়, নজির আহমেদ, শিরিন খাতুনের মতো বিখ্যাত সব অ্যাথলেট।
টেনিস ফেডারেশনে সাবেক খেলেয়ায়াড় ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের অতিপরিচিত মুখ সাবেক টেনিস খেলোয়াড় ইশতিয়াক আহমেদ কারেনকে। কাবাডি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে আছে চমক। একসময় কমিটিতে পুলিশ বাহিনীর আধিক্য থাকলেও এবার তা নেই বললেও চলে। যদিও সভাপতি হিসেবে মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন গত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ। কমিটিতে কাবাডির অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে জায়গা হয়েছে পুলিশের ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হকের।
প্রথম দফায় ঘোষিত নয় অ্যাডহক কমিটির মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে হকি ফেডারেশন।
কারণে-অকারণে নানা আলোচনার জন্ম দেওয়া ফেডারেশটির এই অ্যাডহক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। অবশেষে সেসব জল্পনা আর সংশয়কে ফেলে ঘোষণা করা হয়েছে হকির ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি। সবাইকে বিস্মিত করে সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়েছে আশির দশকে সেনাবাহিনী হকি দলের অধিনায়ক, সে সময় মাঠের অতিপরিচিত মুখ লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে দেশসেরা দলের হয়ে খেলা রিয়াজ একসময় সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালে দেশে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসের সফল আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তার সঙ্গে ১৮ সদস্যের অ্যাডহক কমিটিতে আছেন সাবেক খেলোয়াড় আবু জাফর তপন, খাজা মাঞ্জের নাদিম, হোসেন ইমাম শান্তা, শহিদ উল্লাহ দোলন, বায়োজিদ হায়দার, বদরুল ইসলাম দিপু, পারভিন নাছিমা নাহার পুতুল। তাদের সঙ্গে আছেন তিন সহসভাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মো. আলমগীর, শাহিন মাহমুদ, আসিফ মাহমুদ।