এক বিদেশ ট্যুর ইস্যুতে জেদের উৎপত্তি। সেই জেদের আগুনে পুড়ে ছাই বাংলাদেশের শুটিং সম্ভাবনা! সম্ভাবনাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু।
ইন্তেখাবুল হামিদ অপু তখন শুটার। এই স্কিট শুটার ঘরোয়া এক প্রতিযোগিতায় অষ্টম হয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নিজ খরচে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে যেতে চেয়েছিলেন ইন্তেখাবুল হামিদ। কিন্তু বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশন তার সে চাওয়া পূরণ করেনি। এ কারণে রীতিমতো আদা-জল খেয়ে নামেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বাবলুর বিরুদ্ধে। একসময় যুদ্ধটা হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধে ইন্তেখাবুল হামিদ পাশে পেয়েছিলেন শুটিং ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরীকে।
১৯৯০ সালের আতিকুর রহমান-আব্দুস সাত্তার নিনি জুটির পর ২০০২ সালের কমনওয়েলথ গেমসে আসিফ হোসেন খানের সাফল্যে রঙিন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের শুটিং। দুটি সাফল্যকে পুঁজি করে এগিয়ে যাওয়ার সময়ই উল্টোরথ ধরা! জটিলতার শুরু আগে থেকেই, সেটা প্রকট আকার ধারণ করে ১/১১-এর পর। শুটিং ফেডারেশনের ভবন ভাড়া দেওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আদালত ভবন ভাড়া দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বন্ধ হয়ে যায় ফেডারেশনের আয়ের পথ। নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়েছিল দেশের শুটিংয়ে।
এ সম্পর্কে ওই কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সাবেক শুটার এমরান চৌধুরী কালবেলাকে বলেছেন, ‘আসিফ হোসেন খান, আব্দুল্লাহেল বাকী, শারমিন আক্তার রত্না, সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা, আরমিন আশা, শারমিন শিল্পা, তৃপ্তি দত্তর মতো একঝাঁক প্রতিভাবান শুটার নিয়ে দারুণ সম্ভাবনার পথে ছিল বাংলাদেশ শুটিং। কিন্তু আয়ের পথ বন্ধ করে সে সম্ভাবনার গলা চেপে ধরা হয়েছিল। বিদেশ ট্যুরকে ঘিরে প্রতিহিংসার সূচনা, যা খেলাটি ধ্বংস করে দিয়েছে!’
শুটিং ফেডারেশনের যে ভবন ভাড়া দেওয়ার নিয়ে আপত্তি ছিল, সে ভবন ভাড়া থেকেই বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করছে বর্তমান কমিটি। আয়ের পথ সুগম হলেও তা বাংলাদেশের শুটিংকে সম্ভাবনার রাস্তায় ফেরাতে পারেনি। আর এখন তো ভবন ভাড়া থেকে আয়ের অর্থ তছরুপের অভিযোগও উঠছে ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর বিরুদ্ধে। যোগ্যতার মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকার পরও নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণ সম্পাদকের মেয়ে আমিরা হামিদকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলিয়েছেন—এমন অভিযোগ পুরোনো। প্যারিস অলিম্পিকের শুটার মনোনয়নেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আছে বিগত সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের এ সহোদরের বিপক্ষে। এ ছাড়া ফেডারেশনের ক্ষমতাধর মহাসচিবের বিরুদ্ধে শুটিং সরঞ্জাম কেনা, শুটিং রেঞ্জের সংস্কার কাজেও নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড দিয়ে শুটিং রেঞ্জ সংস্কারে ৬-৭ লাখ টাকার সরঞ্জাম ২৬ লাখ টাকায় ক্রয়ের অভিযোগ বেশ জোরালো। বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে মহাসচিবের ছত্রছায়ায় অসামাজিক কার্যকলাপের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। সেই কর্মকর্তার কারণে এক নারী শুটারকে একাধিকবার গর্ভপাত করাতে হয়েছে বলে গুঞ্জন ঘুরে ফিরছে শুটিংয়ে জড়িতদের মধ্যে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার পতনের কারণে প্যারিস অলিম্পিক থেকে দেশে ফিরে আবারও বিদেশ চলে গেছেন বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশনের দায়িত্ব পালন করা ইন্তেখাবুল হামিদ।