ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বুদ্ধের শিক্ষা জীবনকে ঋদ্ধ করে

বুদ্ধের শিক্ষা জীবনকে ঋদ্ধ করে

আজ শুভ মাঘী পূর্ণিমা। বিশ্ব বৌদ্ধদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিনে তথাগত বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে প্রাতিমোক্ষ উদ্দেশ ও বৈশালীর চাপাল চৈত্যে স্বীয় পরিনির্বাণ দিবস ঘোষণা করেন। তাই বিশ্বের বৌদ্ধরা এ দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকেন। বাংলাদেশের বৌদ্ধরাও তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণ ঘোষণা দিবস হিসেবে বিভিন্ন বৌদ্ধঅধ্যুষিত এলাকায় গুরুত্ব সহকারে পালন করেন। তথাগত বুদ্ধ পয়তাল্লিশ বর্ষা অর্থাৎ অন্তিম বর্ষা রাজগৃহের বেণুবনে অধিষ্ঠান করেছিলেন। সেই সময় তিনি বর্ষাব্রতের মধ্যে ভীষণভাবে রোগাক্রান্ত হন। তখন তার বয়স ৮০ বছর। বেণুবনে বর্ষাব্রত পরিসমাপ্ত করে দেশভ্রমণে বহির্গত হয়ে ক্রমে বেণুবন হয়ে বৈশালীর চাপাল চৈত্যে উপনীত হলেন। প্রধান সেবক আনন্দকে বললেন—‘হে আনন্দ! এই বৈশালীর উদয়ন চৈত্য, গৌতম চৈত্য, সপ্তআম্র চৈত্য, বহুপুত্রক চৈত্য, সারন্দন চৈত্য, চাপাল চৈত্য বড়ই মনোরম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। হে আনন্দ! চল আমরা চাপাল চৈত্যে গিয়ে বিহার করি।’

তখন আনন্দসহ চাপাল চৈত্যে গমন করলেন। এ সময় তথাগত বুদ্ধ আনন্দকে ইঙ্গিত করে বললেন—‘আনন্দ! তথাগতগণ ইচ্ছা করলে স্বকীয় ঋদ্ধি বলে এক কল্পকাল বর্তমান দেহে অবস্থান করতে পারেন। হে আনন্দ! তথাগতের চার ঋদ্ধিপাদ ভাবিত, বহুলিকৃত, রথগতি সদৃশ, অনর্গল, অভ্যস্ত, বাস্তুভূমি সদৃশ, সুপ্রতিষ্ঠিত, পরিচিত ও সম্যক নিষ্পাদিত হয়েছে। সেজন্য তথাগত ইচ্ছা করলে কল্পকাল অবস্থান করতে পারেন।’ মারদ্বারা প্রলুব্ধ প্রধান সেবক আনন্দকে তথাগত বুদ্ধ সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া সত্ত্বেও এ কথার তাৎপর্য বুঝতে অসমর্থ হলেন। দ্বিতীয়, তৃতীয়বার ইঙ্গিত দিলেও আনন্দ মারদ্বার অধিকৃত হয়ে তথাগত বুদ্ধের ইঙ্গিতের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারলেন না।

অতঃপর তথাগত বুদ্ধ বৈশালীর চাপাল চৈত্যে গিয়ে শুভ মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে স্মৃতিমান ও সম্প্রযুক্ত অবস্থায় স্বীয় আয়ু সংস্কার বর্জন করেন ‘এখন হতে তিন মাস পর শুভ মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত আমার প্রাণবায়ু চলতে থাকুক, সজীব, সচেতন থাকুক, তৎপর নিরুদ্ধ হোক।’—এরূপ সংকল্প করেন। অকস্মাৎ অতি ভীষণ ভূমিকম্প আরম্ভ হলো। মুহুর্মুহু প্রলয়ঘোর দেবগর্জন শ্রুত হতে লাগল। এই আকস্মিক ভূমিকম্প ও বজ্রধ্বনিতে আনন্দের মনে ভীষণ ভয় ও বিস্ময়ের সঞ্চার হলো। তিনি তথাগত বুদ্ধের কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তদুত্তরে তথাগত বুদ্ধ বললেন—‘শোন আনন্দ! বোধিসত্ত্ব যখন মাতৃকুক্ষি থেকে ভূমিষ্ঠ হন তখন তার পুণ্যতেজে ভূমিকম্প হয়। যখন বোধিসত্ত্ব সম্যক সম্বোধি লাভ করেন, তখন তার জ্ঞানতেজে ভূমিকম্প হয়। যখন তথাগত বুদ্ধ ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন, তখন পৃথিবী সাধুবাদ প্রদানে ভূমিকম্প হয়। যখন তথাগত আয়ু সংস্কার পরিত্যাগ করেন, তখন পৃথিবী কারুণ্যে কম্পিত হয়। আর যখন তথাগত পরিনির্বাণপ্রাপ্ত হন তখন পৃথিবী রোদনধ্বনিতে কম্পিত হয়।’ অতঃপর বৈশালীর চাপাল চৈত্যে অবস্থানরত ভিক্ষুসঙ্ঘ ও বৈশালীবাসী শুভ মাঘী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাময়ী রাত্রীতে তথাগতের সমীপে সমবেত হলেন। তিনি ভিক্ষুসঙ্ঘের কাছে আপন আয়ুষ্কাল নির্ধারণ পূর্বক পরিনির্বাণের দিন-তারিখ ঠিক করলেন—‘এ মাঘী পূর্ণিমার তিন মাস পর শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে পরিনির্বাণ লাভ করবেন।’ তথাগত বুদ্ধের কাছে তার স্বীয় আয়ুষ্কাল পরিত্যাগের বার্তা শুনে আনন্দ একান্ত শোকাকুল হয়ে কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করলেন—‘প্রভু! জগতের কল্যাণে আরও কল্পকাল অবস্থান করুন।’

তখন দৃঢ়তার সঙ্গে আনন্দের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে শোকবিহ্বল আনন্দকে সান্ত্বনা প্রদানে উপদেশ দিলেন। ‘হে আনন্দ! আমি তোমাকে পূর্বেই বলেছি আমরা প্রত্যেকেই সকল প্রিয়বস্তু, সকল মনঃপূত বস্তু হতে বিচ্ছিন্ন হতে হবে, বিরূপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। কোনো মতেই তা অন্যথা হবে না। তথাগতের যা জাত, ভূত, সংস্কৃত বিপরিনামশীল পঞ্চস্কন্ধ, তা নষ্ট হবে না, তা তো হতে পারে না। হে আনন্দ! তথাগত কর্তৃক যে অবশিষ্ট আয়ুষ্কাল পরিত্যক্ত হয়েছে তিনি তিন মাস পর দেহত্যাগ করবেন বলে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তথাগত তা কোনো মতেই প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। অতঃপর তথাগত বুদ্ধ আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে মহাবনে কুঠাগার শালায় গমন করলেন এবং আনন্দকে আদেশ দিলেন। তথা সমবেত ভিক্ষুসঙ্ঘকে তথাগত ৩৭ (সাঁইত্রিশ) প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্মের উপদেশ প্রদান করলেন। সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে এটা তথাগত বুদ্ধের অন্তিম দেশনা, যা বৌদ্ধ ধর্মের সারমর্ম এতে নিহিত রয়েছে। হে ভিক্ষুগণ! তোমদের যে ধর্মসমূহ আমি অভিজ্ঞানে দেশনা করেছি, সে সমুদয় তোমরা উত্তমরূপে আয়ত্ত করে সুন্দররূপে আচরণ কর। সে বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো, তৎসমুদয় সর্বত্র বিস্তার করো যেন এই ব্রহ্মচর্যমূলক ধর্ম স্থায়ী হয়। চিরদিন বিদ্যমান থাকে এবং বহুজনের হিত ও সুখ হয়। দেবমানবের হিত ও সুখ সম্পাদিত হয়। ভিক্ষুগণ তোমাদেরকে প্রকাশ করছি যে, বয়ধর্ম্মা সঙ্খরা অপ্পমাদেন সম্পাদেথ—‘সংস্কারসমূহ ক্ষয়শীল অপ্রমাদের সঙ্গে নির্বাণ সাধনায় ব্রতী হও।’ ‘পরিপক্বো বয় মযহং পরিত্তং মম জীবিতং, পহায় বো গমিসসামি কত মে সরনমত্তনো’ অর্থাৎ আমার বয়স পরিপূর্ণ হয়েছে, আমার আয়ু আর অল্পই অবশিষ্ট আছে, তোমাদের ছেড়ে চলে যাব। আমার আত্মপ্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে।—

‘অপ্পমত্তা সতিমন্তো সুসীলা হোথ ভিক্খবে সুসমাহিত সংকল্পা সচিত্তনুরক্খথ।’

অর্থাৎ যে ভিক্ষুগণ! তোমরা অপ্রমত্ত, স্মৃতিমান, শীলবান ও সুসমাহিত সংকল্প হও এবং স্বীয় চিত্তকে সতত রক্ষা কর।—

‘যো ইমস্মিং ধম্ম বিনয়ে অপ্পমতো বিহেস্সতি

পহায় জাতি সংসারং দুক্খসসন্তং করিস্সতি।’

অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই ধর্ম বিনয়ে অপ্রমত্ত হয়ে বিহার করবেন, সে জন্ম ও সংসার অতিক্রম করে দুঃখের অন্তসাধন করবেন। তথাগত বুদ্ধ কর্তৃক এ শুভ মাঘী পূর্ণিমা দিবসে স্বীয় পরির্নিবাণ দিবসের ঘোষণা ও ভিক্ষুসঙ্ঘের প্রাতিমোক্ষ উদ্দেশ্য, এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ভিক্ষুসঙ্ঘের উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা—এতে বৌদ্ধধর্মের সারতত্ত্ব নিহিত রয়েছে। তাই অতি তাৎপর্যমণ্ডিত মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধরা অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ ও পালন করে থাকেন।

বুদ্ধের শিক্ষায় আমাদের জীবনকে সুন্দর ও ঋদ্ধ করতে পারি। মানুষ হিসেবে আমাদের বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, শুধু আত্ম-স্বার্থ চরিতার্থ করাই নয়, অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের প্রতি সবিশেষ মনোযোগ, সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনীয়। সর্বজীবের প্রতি মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য কারও নির্দেশের অপেক্ষায় থাকাটিও অনেক সময় অমানবিক। আমরা মানুষ হিসেবে, মানুষের গরজে মঙ্গলকর কর্তব্য পালন করব–এটা মা, মাটি মানুষের ধর্ম, এটা জগৎ ও জীবের প্রকৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ধর্ম। আমরা স্মরণ করতে পারি, এ বিষয়ে তথাগত বলেছেন: ‘মা’ যেভাবে সব আপদ-বিপদ থেকে নিজের সন্তানকে অপার মৈত্রীবন্ধনে বুকে জড়িয়ে রাখে, রক্ষা করে; তোমরাও সেইরূপ মৈত্রীভাবে সব জীবের প্রতি পোষণ করিও। এটি বুদ্ধের শিক্ষার অন্যতম মৈত্রী চর্চা।

বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত জনবহুল একটি দেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ আমাদেরও এই মাতৃভূমি। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণে আমাদের সামগ্রিক অবস্থায় বিশেষ প্রভাব রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে যদি দেখি বৌদ্ধরা কখনো ধর্মীয় উম্মাদনায় আস্থাশীল নয়, তারা জ্ঞানের বাহনে চড়ে এ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। এ দেশ ৪০০ বছর বৌদ্ধরা শাসন করে (পাল রাজারা), যাকে ঐতিহাসিকরা বাংলার স্বর্ণযুগ বলেই মত দেন। পালদের রাজত্বকালে সব ধর্মের সহাবস্থান বাংলার যে কোনো সময়কে অতিক্রম করে দিয়ে আজও সোনার মতো উজ্জ্বল্য ছড়াতে থাকে। আমরা বুদ্ধের এ কথা কখনো ভুলি না যে কর্ম সু ও কু ফলদায়ী, যার যার কর্ম নিজ নিজ অবস্থানে ভোগ করবে। জীবমাত্রই কর্মের অধীন। এমতাবস্থায় আমরা বিশেষ ধর্মের বাণী অথবা ব্যক্তিগত মতামত জোর করে, প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কারও ওপর প্রতিষ্ঠা করতে পারি না। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রাখে, যা মতামতের ভিত্তিতে খণ্ডনও করা যায়। আমি যেরূপ আমার নিজের মতো মতপ্রকাশ করতে পারি, করতে চাই, অন্যেরও ঠিক একইভাবে তার মতো করে মতপ্রকাশ করার একান্ত স্বাধীনতা শতভাগ রয়েছে। জ্ঞানদৃষ্টি বা মানবিক দৃষ্টিকোণ, যেখান থেকেই বলি না কেন, দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ম বা মতবাদ মানা-না মানা ব্যক্তির স্বতন্ত্র ইচ্ছায় ওপর নির্ভর করে; বৌদ্ধদের বন্দনা গীতি, খ্রিষ্টানদের ভজনা ও নৃত্যগীত যে কাউকেই প্রীত করে। পীড়িত করে এসবের মধ্যে যখন অপ্রত্যাশিতভাবেই ঐক্যতানে ছেদ পড়ে তখন আমরা বিপন্ন বোধ করি।

আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, এদেশের মানুষের কাছে নানা ধর্ম ও মতবাদ আসার আগেও আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিল, আমরা তাদেরই উত্তরাধিকারী হয়ে ধর্ম ও মতের বিভক্তিতে রক্ত আর সংস্কৃতির বিচ্ছেদ করতে পারি না। এটা যথাযোগ্য অনুধাবন না করতে পারলে কোনো জাতি সে যতই সমৃদ্ধশালী হোক না কেন, সময়ের পরিক্রমায় ধ্বংস তার অনিবার্য। ভিন্ন মত ও পথের বিচিত্র, বৈচিত্র্য মানুষ পৃথিবীতে অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে–এটা স্বাভাবিক মেনেই সবার সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের, বন্ধুর বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে, এমন গুণাবলিই উত্তম ধর্ম মানুষের।

লেখক: সম্পাদক, সৌগত, উপাধ্যক্ষ, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার, ঢাকা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু

ছুটির দিনটি কেমন যাবে আপনার?

এক রাতে ৫ সেচ মেশিন চুরি, বোরো ধান চাষে শঙ্কা

টোল আদায় নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২৫

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহীর

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান বিরোধী নয় : হাইকোর্ট

আজ ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা, যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

২৬ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

১০

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১১

হাতি শুঁড় দিয়ে আছাড় মারল কৃষককে

১২

বাবার বাড়ি যাওয়ায় স্ত্রীকে ২৭ কোপ দিলেন স্বামী

১৩

সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

১৪

ব্যারিস্টার খোকনের দলীয় পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি 

১৫

বাড়ি ফেরা হলো না বাবা-ছেলের

১৬

বাংলাদেশের দাবদাহ নিয়ে যা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

১৭

অনুষ্ঠিত হলো বিইউএইচএস -এর প্রথম সমাবর্তন

১৮

ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : ম্যাখোঁ

১৯

ছেলেদের দোষে ডুবছেন মাহাথির মোহাম্মদ

২০
*/ ?>
X