ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্প : স্বচ্ছ ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন

ঢাকার বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্প : স্বচ্ছ ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন

রাজধানী ঢাকার চারপাশ নদীঘেরা। আর অভ্যন্তরে রয়েছে অর্ধশতাধিক খাল। ফলে ঢাকা হতে পারে পরিবেশবান্ধব ও গতিশীল যোগাযোগের এক অনন্য শহর। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ক্রমান্বয়ে ঢাকা এখন যানজট, জলজট ও জনজটের এক নাভিশ্বাসের শহর। এই অভিশাপ থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্প। এরই মধ্যে কেটে গেছে বাইশটি বছর। আজও শেষ করা সম্ভব হয়নি সেই প্রকল্প। এটা সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক।

কাগজে-কলমে নদীমাতৃক অভিধা থাকলেও বাস্তবে সেই রূপ ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ। নদী সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণ করেছে, জনপদ সৃষ্টি করেছে। নদী সংকটাপন্ন হওয়ার কারণে নদীকে কেন্দ্র করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহকারী বিশাল জনগোষ্ঠীও তাদের জীবনধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে ফেলছে। ফলে নদীর খোঁজ তারাও রাখছে না। নদীকে কেন্দ্র করে পর্যটনের বৃহৎ এক ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব। এখানে সম্ভাবনার সব উপাদানই বিরাজমান। শুধু সুপরিকল্পনা, দেখভালের অভাব ও জনসাধারণের অসচেতনতাই এ রকম একটি সম্ভাবনা থেকে আমরা বঞ্চিত।

২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকাকে ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ তৈরি ও ওয়াটার বাস চালুর পরিকল্পনা নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালে আশুলিয়া থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রুটে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী দুটি ছোট লঞ্চ দিয়ে প্রথম ‘ওয়াটার বাস’ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের কিছুদিন পর ওই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালের আগস্টে আশুলিয়া থেকে সদরঘাট রুটে দুটি ‘ওয়াটার বাস’ নামানো হয়। কিছুদিন চলাচল করে যাত্রীর অভাবে ও পানিস্বল্পতার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালের আগস্টে ‘এমভি বুড়িগঙ্গা’ ও ‘এমভি তুরাগ’ নামে ওই একই রুটে দুটি ‘ওয়াটার বাস’ নামায়। থ্রি অ্যাঙ্গেল কনসালট্যান্ট লিমিটেডকে দিয়ে ১ কোটি সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বাস দুটি নির্মাণ করায় বিআইডব্লিউটিসি। কিছুদিন চলাচল করে যাত্রীর অভাবে ও পানিস্বল্পতার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ৪ জুলাই আরও চারটি ওয়াটার বাস উদ্বোধন করা হয়। বাস চারটির দাম পড়ে ৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে যে ছয়টি ওয়াটার বাসের উদ্বোধন করা হয়, সেগুলো নির্মাণ করানো হয় হাইস্পিড নেভিগেশন লিমিটেডকে দিয়ে। এর জন্য বিআইডব্লিউটিসির খরচ হয় ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সদরঘাট-আশুলিয়া পর্যন্ত প্রথম পর্বে ৩০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথ তৈরিতে খরচ করা হয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখন গাবতলীর পর আর রুটটি ব্যবহার করা হয় না। দ্বিতীয় পর্বে টঙ্গী-রাজাখালী-ডেমরা-কাঁচপুর ৪০ কিলোমিটার নৌপথ তৈরিতে খরচ করা হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। নতুন ছয়টি ওয়াটার বাস এ পথে চলবে বলে বলা হচ্ছিল। কিন্তু উদ্বোধনের পর এগুলো আর চলাচল করতে দেখা যায়নি। ওয়াটার বাস ক্রয়ে বিআরটিসি খরচ করেছে ৮ কোটি টাকা আর চারবার উদ্বোধনের খরচ ১৮ লাখ টাকা।

কবে শেষ হবে রাজধানীর চারপাশজুড়ে ১১০ কিলোমিটারের বৃত্তাকার নৌপথের কাজ—এর সঠিক কোনো জবাব নেই কারও কাছে। আমরা মনে করি, এ নিয়ে আর হেলাফেলা ও অর্থ অপচয় করা ঠিক হবে না। সময়মতো কাজ শেষ করতে একটি স্বচ্ছ ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com