জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন ঠুনকো!

জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন ঠুনকো!

ভেজাল খেতে খেতে সবার যেন গা সওয়া ভাব হয়ে গেছে! চোখের সামনে বিক্রেতা পণ্যে ভেজাল দিচ্ছেন। যাচাই-বাছাই করে পণ্য না কিনতে পারলে ঠকার সম্ভাবনা শতভাগ। একজন দুধ বিক্রেতা দুধে ভেজাল দিচ্ছেন আবার তিনি যখন বাজারে লবণ কিনতে যাচ্ছেন, তিনিও ভেজাল লবণ কিনছেন। একজন মিষ্টি বিক্রেতা যখন তার বানানো মিষ্টিতে ভেজাল দিচ্ছেন, তিনিও বাজারে গিয়ে ফার্মের দূষিত খাবার খাওয়ানো মুরগিটা নিচ্ছেন। সত্যি বলতে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন ঠুনকো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত মানহীন ও ভেজাল পণ্যে বাজার সয়লাব হওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে।

বাস্তবতা হলো—বাজার, দোকান, সুপার শপ কোথাও ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য মিলছে না। আগেকার দিনে মানুষকে বলতে শোনা যেত কোন কোন খাদ্যে ভেজাল। আর এখন বলতে শোনা যায়, কোন কোন খাদ্য ভেজালমুক্ত? মাছে ও দুধে ফরমালিন। প্রায় সব ধরনের ফল-ফলাদিতে দেওয়া হচ্ছে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল। বিস্কুট, সেমাই, পাউরুটি, নুডলস ইত্যাদিতে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রং। শাকসবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল। মুড়িতে ব্যবহার হচ্ছে ইউরিয়া। চিনি, আটা ও ময়দায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত চক পাউডার। শিশুখাদ্যের দুধও ভেজাল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দুধে ফরমালিন, স্টার্ট, সোডা, বরিক পাউডার ও মেলামিন মেশানো হচ্ছে। প্যাকেটজাত তরল দুধও নিরাপদ নয়। সয়াবিন তেলে অতিরিক্ত অ্যাসিটিক অ্যাসিড, পাম অয়েল ও ন্যাপথলিন মেশানো হচ্ছে। ছানার অতিরিক্ত পানির সঙ্গে ভাতের মাড়, এরারুট আর কেমিক্যাল মিলিয়ে তৈরিকৃত সাদা তরল পদার্থকে বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘গাভীর দুধ’। কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে ফলমূল এবং সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। নোংরা পানি ব্যবহার করে ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে আইসক্রিম। মধুতেও ভেজাল দেওয়া হচ্ছে। এখন খাঁটি মধু, খাঁটি ঘি, খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার! মোড়কজাত ফলের জুসে বিষাক্ত রং ও কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে। কোনো কিছুই ভেজালের ছোবল থেকে বাদ যাচ্ছে না। জীবন রক্ষাকারী পানিও আজ নিরাপদ নয়। শহর এলাকায় যত্রতত্র নকল কারখানা বানিয়ে পুকুর-ডোবা এবং ওয়াসার পানি কোনোরকমে ছেঁকে অলিতেগলিতে বাজারজাত করা হচ্ছে। সেই পানিতে থাকছে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম-লেড-ইকোলাই। দেশি-বিদেশি কোনো ফল কেনার আগে ক্রেতাকে তিনবার ভাবতে হচ্ছে! সব ধরনের ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। এমনকি ইট, সিমেন্ট, রড থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী যে মানসম্মত পাওয়া যাবে তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।

ভেজাল কিসে নেই! শিশুখাদ্যেও ভেজাল থেমে নেই। ভেজালের বাজারে সবাই ঠকছেন। কেউ ঠকছেন পণ্যের মানে, কেউবা আবার দামে। যিনি পণ্যে ভেজাল দিচ্ছেন তিনি যখন বাজারে অন্য পণ্য কিনতে যাচ্ছেন, তখন তিনিও ভেজাল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। সব ধরনের ভেজালের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে। ভেজালরোধে সামাজিক আন্দোলন দরকার। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবার সুন্দর জীবনের স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

সাধন সরকার, শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী, লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com