সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় আতঙ্কের নাম পয়ঃবর্জ্য : পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বিশেষ বিবেচনায় নিন

ঢাকায় আতঙ্কের নাম পয়ঃবর্জ্য : পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বিশেষ বিবেচনায় নিন

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। একের পর এক বিস্ফোরণ চরম উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে সাধারণ মানুষসহ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের। বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে গ্যাস, স্যুয়ারেজ, ওয়াসার পানির লাইনসহ পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কারণ এসব লাইনে গ্যাস জমে যে কোনো সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। অতিসম্প্রতি ঢাকার সিদ্দিকবাজার ও সায়েন্সল্যাবের ঘটনায় সম্ভাব্য যে কারণগুলোর কথা উঠে এসেছে, তা পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আর সেই ব্যবস্থাপনার দৈন্যদশায় যা প্রতীয়মান হচ্ছে, তা আতঙ্কের তো বটেই; ভয়ংকর অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচনা করা ছাড়া বিকল্প নেই।

শুক্রবার কালবেলায় ‘ঢাকায় আতঙ্কের নাম পয়ঃবর্জ্য’ শীর্ষক শিরোনামে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, রাজধানীতে মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন এখানে ৯১০ মিলিয়ন লিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৯০০ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিতই থেকে যায়। অর্থাৎ আমরা এখন পর্যন্ত মোট উৎপন্ন পয়ঃবর্জ্যের মাত্র দুভাগেরও কম পরিশোধন করার সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি! সেই অপরিশোধিত বর্জ্য ড্রেনে আটকে থাকে। অথবা বিভিন্ন মাধ্যমে অপরিশোধিতভাবে খাল-বিল, জলাশয় ও নদীতে গিয়ে পড়ে। বর্জ্য আটকে পড়া ড্রেনগুলোতে বিষাক্ত গ্যাসের জন্ম হয়। এমনকি স্যুয়ারেজের অধিকাংশ লাইন পাইপের হওয়ায় অনেক সময় তাতে বর্জ্য জমতে জমতে পাইপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে পাইপের মধ্যে গ্যাসের চাপ তৈরি হয়। ফলে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা বাড়ে।

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর অধিককাল পরও রাজধানীতে আমরা কোনো কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। জানা যায়, স্বাধীনতার কিছু আগে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন তৈরি করা হয়। পরে রাজধানীর আরও কিছু স্থানে লাইন তৈরি হলেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে এসব পুরোনো লাইন দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোথাও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পয়ঃবর্জ্য জমাট বেঁধে। পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনের এ চিত্র নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। বিশেষ করে যখন একের পর এক বড় রকমের বিপর্যয় ঘটছে এমন সময় এ খবর নগরবাসীকে আতঙ্কিত করবে—এটাই তো স্বাভাবিক। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটারের মতো স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে; যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান বা নকশা কোনো সংস্থার হাতেই নেই! শুধু তাই-ই নয়, কোন কোন স্থান দিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন গেছে, তারও সঠিক কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে!

আমরা সবাই জানি, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর। আজও এ শহর বিবেচিত হয় এক অপরিকল্পিত নগর হিসেবে। এখানে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটলে যে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়—তা অপরিমাপযোগ্য। অথচ স্বাধীনতার সুদীর্ঘ সময় পেরিয়েও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যে বাস্তবিক কোনো মাথাব্যথা নেই তারই সাক্ষ্য বহন করছে নগরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা। সম্প্রতি একাধিক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার প্রধান অনুঘটক হিসেবে পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও জোরেশোরে সামনে এসেছে। তাই এ ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিশেষ বিবেচনা আবশ্যক। আমাদের প্রত্যাশা, জনমনের আতঙ্ক দূরীকরণে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত তৎপর হবে। পাশাপাশি নিরাপদ নগরী গড়ে তুলতে স্বল্প-দীর্ঘমেয়াদি এবং সমন্বিত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমের জন্য দিনটি ভালো

নরসিংদীতে হিটস্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু 

রাজধানীর যেসব এলাকায় আজ গ্যাস থাকবে না

বৃষ্টিতে ভিজল সিলেট

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

সকাল ৯টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

২৭ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ

নাটোরে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

১০

ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত 

১১

ভোটদানের শর্তে কোরআন ছুঁয়ে টাকা নেওয়ার কল রেকর্ড ভাইরাল

১২

‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ সঙ্কটকাল পার করছে’

১৩

 ছেলের কিল-ঘুষিতে শিক্ষক পিতার মৃত্যু

১৪

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর আজ

১৫

‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিবাদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৬

শাহ আমানতে ৯০ হাজার দিরহামসহ যাত্রী আটক

১৭

আবুধাবিতে চালু হচ্ছে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ৩০ মিনিটেই দুবাই

১৮

গরু চোরাচালানে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি

১৯

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ চায় খেলাফত মজলিস

২০
*/ ?>
X