অঙ্ক স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। মুখ তার গোমড়া। হাতভর্তি পরীক্ষার খাতা। শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। চশমার ফাঁক গলে স্যার শিক্ষার্থীদের দিকে চোখ বুলালেন। ক্লাসজুড়ে নিস্তব্ধতা। এরপর শিক্ষক বললেন, ‘ফয়সাল তুমি অঙ্কে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছ।’ ফয়সাল উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে গেল। স্যার পরীক্ষার খাতা তার হাতে দিয়ে বললেন, ‘তুমি ১০০-তে ১১ পেয়েছ।’ পুরো ক্লাসে আর্তনাদের মতো দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ল। ফয়সাল সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে বটে; কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করেছে।
অনেক আগে এ গল্পটা পড়েছিলাম। এ গল্পের কথা মনে পড়ল গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল দেখে। ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনটি। ঢাকা-১৭-তে মোট ভোটার ৩ লাখের কিছু বেশি (৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন)। উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ হাজার ৬৯১টি। অর্থাৎ এই নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মাত্র ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছেন ৯ শতাংশ ভোট। মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, ‘শেষ সময়ের নির্বাচন, এজন্য ভোটারদের আগ্রহ কম।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভুল বলেননি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা এটা অনুধাবন করেই পোড় খাওয়া দীর্ঘদিনের মাঠের রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে আরাফাতকে মনোনয়ন দেন। সবার প্রত্যাশা ছিল, টকশো সেলিব্রেটি ভোটের মাঠে একটি জাগরণ তৈরি করবেন। তাকে ঘিরে শিক্ষিত, অভিজাত ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে। এই নির্বাচনে জয়ের চেয়েও আওয়ামী লীগের প্রয়োজন ছিল সম্মানজনক ভোটার উপস্থিতি। একটা উৎসবমুখর নির্বাচন। বিএনপি সব সময় বলেছে, তাদের ছাড়া নির্বাচন হবে পানসে, ভোটারবিহীন। তার জবাব দেওয়ার জন্যই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করাই বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। এ কৌশলের অংশ হিসেবেই দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করছে। এমনকি দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের আজীবন বহিষ্কার পর্যন্ত করেছে দলটি; কিন্তু নির্বাচনকে প্রহসন করার বিএনপি মিশন সব জায়গায় সফল হয়নি। কদিন আগে ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও ৫টি সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিপুল ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচন পরিণত হয়েছে উৎসবে। কেউ বলতেই পারেন, স্থানীয় নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের তুলনা অবান্তর। স্থানীয় নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের আলাদা তৎপরতা থাকে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য। তা ছাড়া সিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন ৫ বছর মেয়াদের জন্য। তাই মেয়াদের শেষ প্রান্তে থাকা জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সঙ্গে সিটি নির্বাচনের তুলনা যুক্তিসংগত নয়। আর এ কারণেই চমক জাগানো প্রার্থী এবং ভোটে কর্মীদের সম্পৃক্ত করা এ ধরনের উপনির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকে। যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ভোটব্যাংকের ভোট ওই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী পান। আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোট ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা দেশে গড় ২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কাজেই যে কোনো পরিস্থিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পাবে, এটাই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত; কিন্তু ঢাকা-১৭ আসনে মোট ভোট পড়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি। আওয়ামী লীগ নিজের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারল না কেন? এ ব্যর্থতার দায় কার, তা খতিয়ে দেখা দরকার। জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামালের মতো কর্মীবান্ধব নেতারা কেন ভোটের মাঠে অনুপস্থিত? সব নির্বাচনেই তাদের কারো না কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তারা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। মাঠে নামিয়েছেন। এই নির্বাচন বিএনপির জন্য সুযোগ করে দিল। বিএনপির নেতারা এখন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনকে তামাশা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে—এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার; কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন হতে হবে ‘অংশগ্রহণমূলক’। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন যেন নির্বাচনে ঘটে। ঢাকা-১৭-এর উপনির্বাচন কোনো বিচারেই ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলা যাবে না। এই নির্বাচনের পর বিএনপিকে নির্বাচনে আনার পশ্চিমা চাপ আরও বাড়বে। আওয়ামী লীগের মধ্যে কেউ কি এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কাজ করেছে? উত্তাপহীন নির্বাচন যদি বিতর্কহীন হতো, তাহলেও ভোটার উপস্থিতির নৈরাশ্যজনক অবস্থাকে উপেক্ষা করা যেত; কিন্তু নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে হিরো আলমকে নিয়ে যে কদর্য ঘটনা ঘটল, তা দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দল, যারা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তারা সম্ভবত এটিই বেশি করে চেয়েছিল। হিরো আলমকে কারা মেরেছে, তা নিশ্চয়ই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খুঁজে বের করবে; কিন্তু আমার প্রশ্ন, উপ নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে এ ঘটনা কেন ঘটল? আওয়ামী লীগের অতিউৎসাহী, বিএনপি ক্যাডার কিংবা হিরো আলম নিজে—যে-ই এই ঘটনা ঘটাক না কেন, এর দায় সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনিশ্চিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এটা করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি তো বটেই, পশ্চিমা দেশগুলোও বাংলাদেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য এমন একটি ঘটনার অপেক্ষায় ছিল। আওয়ামী লীগ কি এ উপনির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে পা দিল?
একটি স্পর্শকাতর নির্বাচনে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা হলো। এ সুযোগ কি কেউ ছাড়ে? সবাই লুফে নিলো। প্রথম বিবৃতি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানাল মার্কিন দূতাবাস। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র যেন অপেক্ষায় ছিলেন। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে তিনি ঘটনার নিন্দা জানালেন। যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দেবে আর তার একান্ত অনুগত ইউরোপের দেশগুলো কি চুপচাপ বসে থাকবে। মার্কিন আর্তনাদের পর তাদের নীরবতা রীতিমতো অপরাধ। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১২টি দেশ হিরো আলমের ঘটনার নিন্দা এবং উদ্বেগ জানাল। বিশ্বের মুরব্বিদের আর্তনাদের পর জাতিসংঘ কীভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যায়? জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির জন্য অপেক্ষা করলেন না, বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি। টুইট করে ঘটনার নিন্দা জানালেন। এসব নিন্দা বিবৃতি, উদ্বেগ বাণীর উদ্দেশ্য একটাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনিশ্চিত করে তোলা। এ দেশগুলো যে বাংলাদেশের ধারাবাহিক, নিরবচ্ছিন্ন গণতন্ত্র চায় না, তা তো প্রমাণিত। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ গত ১৫ বছরে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে এটা তো পশ্চিমাদের জন্য বেদনার। মুখে তারা যতই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করুক, মনে মনে তারা দুঃখিত। যে দেশটি আগে সকাল-সন্ধ্যায় পশ্চিমাদের কথায় ওঠবস করত। পশ্চিমাদের ভিক্ষা ছাড়া জাতীয় বাজেট হতো না। তারা কি না এখন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্ব প্রভুকে পাত্তা দিতে চায় না। বেয়াদবির একটা সীমা থাকা দরকার। বাংলাদেশ যত ‘স্বাবলম্বী’ হচ্ছে ততই ‘অবাধ্য’ হয়ে উঠেছে। নিজেদের ভালো-মন্দ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অবলীলায়। এটা কী করে হয়। চীন ও ভারতের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক করছে দেশটি, কীভাবে? মধ্যপ্রাচ্যে আস্তে আস্তে উদার প্রগতিশীল মুসলিম দেশ হিসেবে সম্মান কুড়াচ্ছে, তা কি করে হয়? পশ্চিমাদের ইন্ধনের পরও মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করল না দেশটি, কী পাকামি। তাই গত দুবছর ধরেই ‘বাংলাদেশ বশীকরণ’ পরিকল্পনায় পশ্চিমারা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পশ্চিমারা বাংলাদেশে বেশ কিছু একান্ত বাধ্যগত এজেন্ট রয়েছে। নিজের দেশের জন্য নয়, এদের সব ভালোবাসা স্বপ্নের দেশ আমেরিকার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা এসব সুশীল বিজ্ঞদের দুধে-ভাতে রাখে। এদের শিরোমণি সুদের ব্যবস্থা করেও শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। এরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের ইশারায় কাজ করে। পশ্চিমারা হুইসেল বাজালেই তারা হুক্কাহুয়া করে। এরা মাঠে নামল দুর্নীতি, সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে। একযোগে কোরাস শুরু হলো। যুক্তরাষ্ট্র এভাবেই আস্তে আস্তে বাংলাদেশে তাদের হারানো আধিপত্য ফিরে পাওয়ার মিশনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সরকারের মধ্যে একটি মহল যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার ভুল পথ ধরল। সরকারের মধ্যে কেউ কেউ ফিসফিস শুরু করল। যুক্তরাষ্ট্রকে চটানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কথা না শুনলে বিপদ। প্রকাশ্যে এবং গোপনে মার্কিন দূতাবাসে স্যুট টাই পরে, টমোটো স্যুপে আপ্যায়িত হতে শুরু করলেন হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা। এক মন্ত্রী সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনে ওয়াশিংটনে গিয়ে কৃতজ্ঞতায় নতজানু হয়ে গেলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আশ্রয়দাতা এমন উচ্চারণের মাধ্যমে পশ্চিমা প্রভুত্বকে নবায়ন করলেন। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং খবরদারিকে স্বাগত জানাল আওয়ামী লীগের কেউ কেউ। বাঁধ কেটে দিলে যেমন শুরু করে বানের পানি প্রবেশ করা, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বাংলাদেশ নিয়ে অনধিকার চর্চার ‘ফ্লাড গেট’ খুলে গেল। এখন তার ফল ভোগ করছে এদেশের জনগণ। ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এই ভিসা নীতি সুস্পষ্টভাবেই সরকার এবং আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলার কৌশল। সবাই বুঝলেও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বোঝেননি অথবা ইচ্ছা করেই না বোঝার ভান করেছেন। তারা এ নিয়ে শুরু করে উল্লাস। এ ভিসা নীতি কীভাবে বিএনপিকে চাপে ফেলবে, তা নিয়ে রীতিমতো বক্তৃতা প্রতিযোগিতা শুরু করেন কিছু নেতা। আজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফরের পর উল্লাসের উৎসব শুরু হয় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। মার্কিন প্রতিনিধিরা বিএনপির সঙ্গে দেখা করেনি, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কারও কারও খুশি দেখে আমি হতবাক। যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করে না—এমন বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা যেন টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার ঘোষণা দিলেন। জনগণ কিছু না যুক্তরাষ্ট্রই শেষ কথা। আওয়ামী লীগের কিছু অর্বাচীনের এই ফর্মুলা ভয়ংকর আত্মঘাতী। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের তো ‘সম্রাট’ বানাল সরকারের কিছু নেতা এবং মন্ত্রী। বাংলাদেশে পুনরায় প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার নীলনকশার নিপুণ বাস্তবায়ন। এখন ‘হিরো আলম’ কে বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব বানিয়ে পশ্চিমারা বুঝিয়ে দিল, তারা দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠনকে নিয়ে রীতিমতো খেলছে। সামনে আরও খেলা আছে। ক্ষমতাসীন দলের জন্য অপেক্ষা করছে আরও বিস্ময়। মার্কিন প্রতিনিধিদল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর এখন ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা কি ধোপে টিকবে? শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমার দেশ, আমাদের জনগণ, আমাদের নির্বাচন, আমাদের গণতন্ত্র। সিদ্ধান্ত আমাদের।’ কিন্তু দূতাবাস পাড়ায় ঘোরাঘুরি করা জনবিচ্ছিন্ন হঠাৎ পয়দা হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে থামিয়েছেন। কেন? ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের জন্য? ১৯৭৫-এর ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ, এরকমভাবেই দলের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বিএনপিকে মাঠে নামিয়েছে। ‘একদফা’ নিয়ে বিএনপি এখন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিকে সহিংস করতে তাদের আপ্রাণ চেষ্টা কারও নজর এড়ায়নি। ১৮ এবং ১৯ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ এবং গোলযোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগের অতিউৎসাহীরা সহিংসতায় সাড়া দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশকে নির্বাচনমুখী করতে চাইছেন, তখন আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আগ্রহী। তারা কি ইচ্ছে করেই ভুল পথে? বিএনপি এবং পশ্চিমারা এটাই তো চায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক, আগুনে পুড়ুক দেশ। এটাও পাণ্ডুলিপির অংশ। পরিস্থিতি নাজুক হলেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিবৃতি দেবে। সংলাপের নাটক হবে। তারপর গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা হবে। খবর পাচ্ছি, সুশীলরা নাকি নতুন স্যুট প্যান্ট কিনে ফেলেছে। নারী সুশীলরা নতুন ‘কাঞ্চিবরণ’ ‘কলাবতী’ শাড়ির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ভুল করছে। তাই তাদের আগাম প্রস্তুতি। ষড়যন্ত্র এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। এখন এই চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে দল এবং দেশকে বাঁচাতে পারেন একজনই। শেখ হাসিনা।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেই: [email protected]
মন্তব্য করুন