১৯৯৪ সালে বিশিষ্ট গবেষক শ্যামলী ঘোষ ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। শ্যামলী ঘোষের ‘আওয়ামী লীগ ১৯৪৯-১৯৭১’ বইটি পড়লে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে ইউপিএল থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। বইটির ৭ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে কয়েকটি লাইন এখানে উৎকলন করছি—‘ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যায় যে, ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বিতর্কে অংশগ্রহণ ছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ কর্মীরা ১৯৫১ সালের আদমশুমারি চলাকালে গণনাকারীদের কাছে জনগণ যাতে তাদের উর্দু ভাষার জ্ঞানের কথা স্বীকার না করে, সে কথা বোঝানোর জন্য নীরব অভিযান চালায়। তারা যে এ ব্যাপারে কিছুটা সফলকাম হয়েছিল, সেন্সাস কমিশনারের মন্তব্য থেকে তা জানা যায়।’ একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টির মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গণমুখী ও গণস্বীকৃত দলে পরিণত হতে পারে, ওপরের ঘটনাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে পাকিস্তানের জন্ম হয় আর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’-এর। পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জন্ম ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’-এর এবং পাকিস্তান সৃষ্টির দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে জন্ম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’-এর। যারা আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানে না তারা বাংলাদেশের ইতিহাসই জানে না। এখন থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। আবার ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের ছয় বছর পর ১৯৫৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; দলের নাম হবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। গঠনতন্ত্র সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্ম-পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য সদস্যপদ উন্মুক্ত করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন সম্মেলনে প্রধান অতিথি। অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ‘পৃথক নির্বাচনের পরিবর্তে যুক্ত নির্বাচন’ চালুর দাবিতেও সোচ্চার ছিল এবং এতে সফল হয়। অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হকসহ ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা ও মহকুমার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে টাঙ্গাইলে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের একটি শূন্য আসনের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী শামসুল হক। শামসুল হক সাহেব নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সী তিনি ছিলেন সাহসী, দূরদর্শী ও নিষ্ঠাবান এবং একই সঙ্গে ক্যারিশম্যাটিক নেতা। বন্দি থাকাবস্থায় তাকে আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (জয়েন্ট সেক্রেটারি) পদে নির্বাচিত করা হয়। দলটি গঠনের তিন দিন পর ২৬ জুন তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হলে দলের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খানসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী তাকে জেলগেটে বরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন আমতলায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
(দুই) আওয়ামী মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৫০ মোগলটুলীর ভবনে। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে এই ভবনে মেসজীবন শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকও সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সভায় গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য সাব-কমিটি গঠন করা হয়। ভবনে দলের সাইনবোর্ড লাগানো হয়, অফিসে চেয়ার-টেবিল বসানো হয়। ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রথম জনসভা হয়েছিল আরমানিটোলা ময়দানে। ঢাকার বাইরে প্রথম জনসভা হয় ১০ আগস্ট জামালপুর ঈদগাহ ময়দানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবির সমর্থনে গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়া সেই শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২২ বছরের মাথায় পাকিস্তান সামরিক জান্তাকে এ মাটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই সফল আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, যা জাতিসংঘ স্বীকৃত দিবস হিসেবে পালিত হয় বিশ্বের সর্বত্র। এর কৃতিত্বও আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ কঠিন সময়ে দলের হাল ধরার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর। গোয়েন্দারা প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল—‘শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন।’ পার্টি অফিস ৯৪ নবাবপুর রোডে, কয়েকদিনের মধ্যে বাসা নিয়েছেন ৭১ রাধিকামোহন বসাক লেনে। এই ভূখণ্ডে একাত্তর যে তার হাত ধরেই আসবে, তারই প্রতীক যেন ঢাকায় প্রথম ভাড়া করার বাড়ির এ নম্বর! পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালে ১৯৫২ সালের ১৪ জুন লাহোর থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে চিঠি লেখেন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান, যা গোয়েন্দাদের হাতে চলে যায়। এতে তিনি লিখেছিলেন: ‘দয়া করে আমার কথা ভাববেন না। আমার জন্মই হয়েছে কষ্ট সহ্য করার জন্য—I have born to suffer.’ গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারি, বারবার কারাগারে নিক্ষেপ—কোনো কিছুই তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩০ মে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তাকে ১৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন। এই উপমহাদেশের ইতিহাসে তা অনন্য সাধারণ উদাহরণ। শেখ মুজিবুর রহমান দলের দায়িত্ব পালন করার জন্য মন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। বেগম মুজিব শয্যাশায়ী থেকেও স্বামীকে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গায় আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি। বরং উৎসাহ দিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন : ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার কাজে যান।... আল্লাহর ওপরে আমার ভার ছেড়ে দিন।’
(তিন) গত ৪৩ বছরের ইতিহাস লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। এই দীর্ঘসময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্গমগিরি কান্তার মরুপথ পাড়ি দেওয়া। আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ত্রয়োদশ সম্মেলনে (১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১) এমন ঘোষণা মুহূর্তে ‘ইলেকট্রিফাইং’, উপস্থিত নেতাকর্মীদের চোখে আনন্দাশ্রু ধারা—এ যেন প্রিয় মুজিব ভাইয়ের, শেখের বেটার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা দলের ঐক্য, সাহস ও সংকল্পের প্রতীক হিসেবে। দিল্লিতে নির্বাসিত যন্ত্রণাকর জীবনের মধ্যে তিনি সর্বক্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার তিন মাস পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদলের মধ্যে তিনি যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লাখ লাখ নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মধ্যে এসেছি’, মুহূর্তে এক নতুন বন্ধন তৈরি হয়ে যায় নেতাকর্মী-জনতার মাঝে, যা ছিন্ন হওয়ার নয়। ধানমন্ডি ৩২-এর ঐতিহাসিক বাড়িটি স্বৈরাচারী শাসক জিয়াউর রহমানের নিয়ন্ত্রণে, ১৭ মে রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার ঢাকায় মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। প্রিয় স্বদেশেও যেন উদ্বাস্তু! কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও যে অদম্য! দেশি-বিদেশি সুগভীর ষড়যন্ত্র বিপর্যস্ত, হতোদ্যম ও হতশ্রী দলে তিনি প্রাণস্পন্দন সঞ্চারিত করেন; জেগে ওঠে আওয়ামী লীগ, জেগে ওঠে একাত্তরের বাংলাদেশ। নিরাশ্রয় জাতির পিতার কন্যাকে পরম মমতায় বুকে টেনে নিল বাংলাদেশ এবং এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুকন্যা তখন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদে নেই, এমনকি সংসদের সদস্য পদও ছিল না তার, কিন্তু তার আহ্বানে আন্দোলনের সঙ্গে এমন সংহতি প্রকাশ ছিল অভূতপূর্ব। বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ ধরনের নজির খুব একটা রয়েছে বলে মনে হয় না। এমন ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্রষ্টাও আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালুর দাবিতে অভাবনীয় আন্দোলনে সাফল্যের পটভূমিতে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ (১২ জুন ১৯৯৬ তারিখ অনুষ্ঠিত) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তখন থেকে শুরু আমাদের বাংলাদেশে ফিরে আসা। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন যমুনা নদীর ওপর সেতু। এর জন্যে জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে জাপান পাঠিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুগ যুগের স্বপ্ন পূরণ করে যমুনায় উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু সড়ক ও রেল সেতু। প্রধান ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক এ সেতুতে রেলপথ চায়নি। বিএনপি তা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে অনড় অবস্থান নেন, সেতুতে রেলপথ থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংক তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কো ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বদলে যেতে শুরু করে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার চিরতরে বন্ধ করার জন্য খুনি মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারি করেছিল কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি এই কুখ্যাত অধ্যাদেশকে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে আইনে পরিণত করে। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই মানবতাবিরোধী আইন বাতিল করে দেয়। এভাবে জাতীয় ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের অবসান ঘটে, শুরু হয় বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে প্রচলিত সাধারণ ফৌজদারি আদালতে তার পিতার হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ শুনানি ও জেরা-পাল্টা জেরা শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের রায় প্রদান করা হয়। এতে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। রায় প্রদানের পরদিন থেকে বিএনপি টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল ডাকে, যদিও তারা ইস্যু হিসেবে প্রচার করেছিল ‘গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদ’। নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টে পর্যালোচনার জন্য উত্থাপিত এবং ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট ক্ষমতায় এলে বিচারকাজ থেমে যায়। বিএনপি নেতারা বলতে থাকেন, শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার করার জন্য তারা ক্ষমতায় আসেনি।’
(চার) বই উৎসব—১ জানুয়ারি! এ এক অনন্য ধারণা, অভাবনীয় পদক্ষেপ। সবার জন্য শিক্ষা, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সরকার গঠনের পরের বছরের প্রথম দিনে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন সরকারের ব্যয়ে পাঠ্যবই। শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, সেচসহ কৃষির নানা প্রয়োজনে, মাছ চাষ এবং হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন—সর্বত্র বিদ্যুৎ! উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র বা মেঘনার চরে, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং ঢাকা-খুলনা-চট্টগ্রামের বস্তিতে বিদ্যুৎ মিলবে ২৪ ঘণ্টা, একসময় কেবলই স্বপ্ন ছিল তা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও তো স্বপ্ন ছিল সেই ষাটের দশক থেকে, সভা-সমাবেশে প্রস্তাব পাস হতো—রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। এখন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৩২। আর বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে বাংলাদেশ। কেবল বাংলাদেশ নয়, অনেক উন্নয়নশীল, এমনকি উন্নত দেশও মহাকাশ অভিযাত্রার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশ এই স্বপ্ন সফল করেছে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে—এই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় ধাপ তিনি পূরণ করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এদেশে কেউ নিরাশ্রয় থাকবে না, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে এমন মহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ। হাজার হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছেন বীর নিবাস। গৃহহীন লাখ লাখ পরিবারকে জমির মালিকানা ও ঘর বুঝিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী, বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু-হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো ফের শুরু করেন। তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে, সেটাই সরকারের লক্ষ্য। এত বিপুলসংখ্যক দরিদ্র-গৃহহীন মানুষকে সরকারি ব্যয়ে ঘর প্রদানের মাধ্যমে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া; এমন নজির বিশ্বে খুব একটা নেই। গৃহের মালিকানা অর্জনে অগ্রাধিকার পাবে নারী—এমন সিদ্ধান্তও কিন্তু খুব বেশি নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আজ বাংলাদেশে ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৮ জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলেও ‘ছিটমহল’ সমস্যা রয়ে যায়। এ ধরনের ভূখণ্ড এলাকাগত দিক দিয়ে একটি রাষ্ট্রের অন্তর্গত, কিন্তু সার্বভৌম শাসনের দিক দিয়ে অন্য রাষ্ট্রের। ১৯৭৪ সালে দুই মহান নেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু কয়েক দশক এর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকে ভারতের পার্লামেন্টে ভূখণ্ড হস্তান্তর বিষয়টি অনুমোদন না হওয়ায়। ২০১৪ সালে ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে দলমত নির্বিশেষে সব সদস্য ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন করায় ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরকালে ছিটমহল বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত ১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর জায়গাসহ ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশ ভারতের কাছে হস্তান্তর করে ৭ হাজার ১১০.০২ একর জায়গাসহ ৫১টি ছিটমহল। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত সমস্যার সমাধানের এমন নজির বিশ্বে বিরল। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেছিল, তার সুফল মেলে এভাবে। বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়েও ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে এর নিষ্পত্তি চেয়েছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের শরণাপন্ন হয়। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধীয় ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। ভারতের সঙ্গে বিরোধীয় এলাকার রায় আসে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালত থেকে। বিরোধীয় ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে আদালতের রায়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এবং ভারত পেয়েছে ৬ হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকার শিরোনাম ছিল : Gone: Sea larger than Bengal (West Bengal) UN Tribunal awards Dhaka.’ এই রায়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত হয়, ব্লু-ইকোনমির বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়। স্থল সীমানা বৃদ্ধি ও সমুদ্র জয় বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতার নজির হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের ৪০তম প্লেনারি সভায় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের সারি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে যে দেশটিকে ‘বাস্কেট কেস’, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’—এসব অভিধা দেওয়া হয়েছে, উপহাস করে বলা হয়েছে এ দেশটি দারিদ্র্যচক্র থেকে বের হয়ে উন্নয়নের পথে চলতে পারলে যে কোনো দেশের পক্ষেই তা সম্ভব। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদানে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই স্বল্পোন্নত দেশের সারি থেকে উন্নয়নশীল দেশের সারিতে উন্নীত হয়। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণচুক্তি সই হয়। বিশ্বব্যাংক দেবে ১২০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৬১ কোটি ডলার, জাপান ৪০ কোটি ডলার, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার—এভাবেই সমঝোতা হয়। বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করা হবে, এমন প্রমাণ মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক অর্থ ছাড় করেনি, অন্য কোনো সূত্র থেকেও অর্থ আসেনি। অতএব, দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না। কিন্তু ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক একতরফাভাবে ঋণ চুক্তি বাতিল করে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় অন্য সংস্থা ও দেশগুলো পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায়। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে দেখতে পায়, সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের সতত্য নেই। কানাডার একটি আদালতেও এ বিষয়টি উত্থাপিত হয়। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার আদালত রায়ে জানান, গালগল্প দিয়ে দুর্নীতির মামলা হয় না। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে দেশটি সামান্য ঝড়-বন্যাতেই ‘রিলিফ পাঠাও’ বলে বিশ্ববাসীর কাছে কাকুতি-মিনতি করত, ছোট-বড় সড়ক ও সেতু প্রকল্পের জন্য ‘দাতাদের’ কাছে ঋণ বা অনুদানের জন্য অনুরোধ জানাত, তারা নিজের অর্থেই পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই বলেছিলেন, বাংলাদেশ একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’—এ শিরোনামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তুলে ধরে আওয়ামী লীগ। এই দল স্বাধীনতার, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের দল। তাদের ওপর ভরসা রাখে বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসী। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পথে চলেছে; ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সেটা বুঝে গিয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ এবং অবশ্যই আমাদের শত্রুপক্ষ। নতুন শতাব্দীতে আওয়ামী লীগ সামনে আসে অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন-২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ। ২০৪১ সালের লক্ষ্য—অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ। ২০৭১ সাল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য-সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছানো। এ শতাব্দীর শুরুতে শতাব্দী শেষের লক্ষ্যও নির্ধারণ করে রেখেছে দলটি—নিরাপদ ব-দ্বীপ নির্মাণে ডেল্টা প্ল্যান। স্মার্ট বাংলাদেশ ফাইভ-জি ইন্টারনেট সুবিধা বা হাতে হাতে স্মার্ট ফোন নয়, কেবল ক্যাশলেস লেনদেন নয়; আওয়ামী লীগ লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ নির্মাণ করা হবে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’—এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি গ্রামে পৌঁছাবে আধুনিক নগরের সুবিধা। শহরগুলোও হবে পরিকল্পিত, সুশৃঙ্খল। তারুণ্যের শক্তিতে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এই শক্তির ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠবে সমৃদ্ধি, দূর হবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য। বাংলা বর্ষবরণ উৎসব—এ অনন্য অনুষ্ঠান ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের প্রতিটি দেশে বাঙালির মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এ দিনটি পালিত হয়। প্রতিটি দেশে গাওয়া হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’। বিশ্বের সর্বত্র বাঙালি রয়েছে এবং এ কারণে বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষার সূর্য কখনো অস্তমিত হয় না। বাংলাদেশের অনন্য দিন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হওয়ায় সব দেশে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আমাদের নানা অর্জন বিশ্বব্যাপী জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এতগুলো দিবস বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি মিলেছে—এ যে বড় অর্জন! বঙ্গবন্ধুকে একটি কুচক্রী মহল ইতিহাসের পাতা থেকে, বাঙালির মন থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি, সমৃদ্ধির সোপানে যাত্রার রূপকার বঙ্গবন্ধু যে মানুষের মনে স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত! শুধু জনমানুষের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম।’
লেখকঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক