রীতা ভৌমিক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০২:৪০ এএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, ০৭:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে চাই

রূপা আশা হক
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রূপা আশা হক। ছবি : কালবেলা
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রূপা আশা হক। ছবি : কালবেলা

রূপা আশা হক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন নির্বাচিত সদস্য। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা আশা হকের পৈতৃক বাড়ি পাবনার মকসেদপুরে। তার জন্ম লন্ডনে। ইউএনএফপির আয়োজনে ‘আইসিপিডি-৩০ গ্লোবাল ডায়ালগ অন ডেমোগ্রাফিক ডাইভারসিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন রূপা আশা হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রীতা ভৌমিক

কালবেলা: ২০১৫ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর আরও দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম নির্বাচিত হয়ে কাজ করা এবং এখন কাজ করার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পান কি?

রূপা হক: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক জিনিস পরিবর্তন হয়েছে। সে সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করার মাধ্যম ছিল চিঠি। এখন সোশ্যাল মিডিয়া হওয়ায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইলে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়। তবে আমার মনে হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় সময় মানুষ খুব অভদ্র আচরণ করে। এর মাধ্যমে মানুষকে আঘাত করতে পারে। ওরা নারীদের অ্যাবিউস করে। একদিকে আমি মাইনরিটি (সংখ্যালঘু), অন্যদিকে মুসলমান। অনেকে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলত, ‘এই আমি তোমাকে মেরে ফেলব!’ এটা নিয়ে একটা ভয় কাজ করত। ২০১৫ সালের নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নারী মারা যান। তার বয়স প্রায় ৪০ বছর ছিল। একজন পুরুষ তাকে বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল।

২০২১ সালে আবার আরেকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আমার দুই সহকর্মীকে খুন করে যে পুরুষটি, তার বাবা-মা সোমালিয়ার ছিলেন। কিন্তু পুরুষটি ইংল্যান্ডে বড় হয়েছে। মানসিক সমস্যা থেকে এই খুন করেছে সে।

নানা ধরনের সমস্যা নিরসনে প্রতি শুক্রবার একটি ভবনে আমি আমার সহযোগীদের সঙ্গে বসি। অনেকে ইমিগ্রেশন সমস্যা নিয়েও আসেন। অনেকে বাড়ির বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও আসেন। চেষ্টা করি পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করার।

কালবেলা: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে এদেশের নারীদের উন্নয়নে কাজ করার কথা কিছু ভেবেছেন?

রূপা হক: ইংল্যান্ডে ৬৫০ জন এমপি রয়েছেন। প্রত্যেক এমপির ভৌগোলিক স্থান নির্ধারণ করা থাকে। আমি লেবার পার্টি থেকে ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টনের এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার এলাকা ৬৩০ হলো লন্ডনের ইলিং ডিস্ট্রিক। আমার দায়িত্ব ইংল্যান্ডে ইলিংয়ের ৭৫ হাজার মানুষের সুরক্ষা, সহযোগিতা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ তারা আমাকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন। প্রতি শুক্রবার আমি আমার ডিস্ট্রিক ইলিং-এ বসি। সেখানকার জনগণ তাদের প্রয়োজনের কথা বলতে আমার কাছে আসেন। কেউ কেউ বিভিন্ন কাজ করার পরামর্শ দেন।

এর পরও একটা কথা থেকেই যায়, আমি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। সেদিক থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার টান, ভালোবাসা রয়েছে। ওখানেও অনেক বাঙালি রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের জনগণও আমাকে ভালোবাসেন। সম্মান করেন। এই ভালোবাসার টানে তারা ইমেইল পাঠিয়ে আমাকে উন্নয়নমূলক কাজ করার পরামর্শ দেন। বাঙালিদের সমস্যাগুলো আমাকে জানান। যেমন, বাংলাদেশি যারা ইংল্যান্ডে থেকে যেতে চান তাদের ভিসা ব্যবস্থা ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। তারা ভিসাজনিত সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন। তবে সব বাঙালির সমস্যার সমাধান আমি সেভাবে করতে পারি না; কিন্তু চেষ্টা করি। পাসপোর্ট অফিস বন্ধ করেছে। আমি চেষ্টা করি বাঙালিদের এই সমস্যাগুলো নিরসন করার।

কালবেলা: বাংলাদেশের নারী-শিশুদের উন্নয়নে কিছু করার ইচ্ছা আছে?

রূপা হক: অবশ্যই। আমি সবসময় চাই বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে। কারণ বাংলাদেশেই আমার শেকড়। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সরকার মেট্রোরেল বানিয়েছে। তবে আরেকটা কথা বলতে চাই, সীমিত প্রার্থী নিয়ে এবার নির্বাচন হয়েছে।

কালবেলা: শ্রমিকের অধিকার আদায়ে আপনি নিরলসভাবে কাজ করছেন। সেখানে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কীভাবে কাজ করছেন?

রূপা হক: ইংল্যান্ডে নারী শ্রমিকদের অবস্থান মোটামুটি ভালো। কিন্তু সবদিক থেকে এতটা ভালো নয়। আমি ক্যাম্পেইন করি, নারীর চারটি ইউনিক অধিকার রক্ষায়। সেখানকার নারীরা সন্তান নিতে আগ্রহী নয়। গর্ভধারণ করলে তারা অ্যাবরশন করে ফেলে। কখনো ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভধারণ করলে তারা গর্ভপাত করে ফেলে। এ ধরনের অবস্থায় কখনো অন্তঃসত্ত্বা নারী ও গর্ভের সন্তান মারা যায়।

লেবার পার্টির একজন নারী এমপি হিসেবে বলা যেতে পারে, জনসংখ্যার অনুপাতে আমরা ৫০:৫০ হলেও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীদের জন্য সেভাবে কিছু হয়নি। ওখানে আমি সংখ্যালঘু। কারণ আমি সাদা চামড়ার মানুষ নই। ইংরেজও নই। আমার বাবা-মা ছিলেন বাঙালি। সেজন্য আমরা চাই পার্লামেন্ট ডাইভারস হোক। যেমন কপিলাইশেন হচ্ছে ডাইভারস। বাংলাদেশসহ নানান দেশের আফ্রিকা, এশিয়ার মানুষ আছে। আমরা চাই, পার্লামেন্টে এরকম রিফ্লেক্ট হোক।

কালবেলা: আপনার গবেষণায় যুব সংস্কৃতি এবং পপসংগীত বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজের উন্নয়নে এটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় বলে আপনি মনে করেন?

রূপা হক: যুবরাই পারেন একটি সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। জীবনধারায়, সামাজিক রীতিনীতি এবং সংস্কৃতি উভয়ের ওপরই তারা শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। তারা জীবনকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করে। কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক বাস্তবতাকে অনুভব করার ক্ষেত্রে পার্থক্য অনুভব করে। যে ইতিবাচক বিষয়গুলো যুব সংস্কৃতির বিকাশকে সহজতর করে, ভুল করলেও তা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে তৈরি করতে পারে। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যাতে তারা সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

কালবেলা: এবারের সম্মেলনে (আইসিপিডি-৩০ গ্লোবাল ডায়ালগ অন ডেমোগ্রাফিক ডাইভারসিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট) আপনার আলোচনার বিষয় নগরায়ণ? এ ব্যাপারে যদি কিছু বলেন?

রূপা হক: আমার বাবা-মা বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। গ্রামে তাদের জমি ছিল। গ্রাম থেকে শহরে ধীরে ধীরে নগরায়ণ হচ্ছে। ঢাকা শহরে যানজট বেড়েছে। এ ছাড়া রিকশার ব্যবহার বেড়েছে। এটা কি নগরের অগ্রগতি, নাকি পিছিয়ে পড়া—এই প্রশ্নটা থেকেই যায়!

ইংল্যান্ড নতুন ভার্সনের রিকশা চালু করছে। সারা দুনিয়ার নগরায়ণ হচ্ছে। আমরা ৫০টি দেশের নগরায়ণ নিয়ে আলোচনা করেছি।

কালবেলা: নগরায়ণের প্রভাব মানুষের জীবনে কীভাবে পড়ছে বলে মনে করেন?

রূপা হক: এটা আসলে জটিল বিষয়। নগরায়ণের কারণে একদিকে মানুষ অনেক কিছু হাতের নাগালে পাচ্ছেন। আরেক দিকে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানারকম সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। শহরকে ইট ও কংক্রিট দিয়ে ভরে ফেলা, পর্যাপ্ত জলাধার ও গাছ না থাকার কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। এ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারলে পুরো বিশ্ব বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।

কালবেলা: অনেকদিন পর দেশে এলেন? পৈতৃক ভূমি পাবনায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে?

রূপা হক: অনেকদিন যাওয়া হয়নি পাবনায়। আমার বাবা-মা এখন আর নেই। আব্বা মারা গেছেন ২০১৫ সালে। মা ২০১৭ সালে। ১৯৮৯ সালে আমি স্কুলে পড়তাম। সেবার সপরিবারে আমাদের পৈতৃক ভূমি পাবনায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। এবার খালাতো ভাই, ফুফাতো বোনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। প্রবীণ স্বজনরা অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। যেতে পারলে যারা বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে দেখা হতো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরাকে তুর্কি বিমান হামলা, ২৪ স্থাপনা ধ্বংস

দ্বিতীয় সেশনেও টাইগারদের দাপট

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি ঐক্য পরিষদের

ভিসার মেয়াদ শেষ আজ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে

লক্ষ্মীপুরে পিটিআই প্রশিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

সালমানকে নিয়ে যা বললেন শাবনূর

ট্রাম্পের তথ্য হ্যাক করে বাইডেনকে দিয়েছে ইরান!

শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের

নামাজ পড়ে বাসায় যাওয়া হলো না পুলিশ সদস্য জহিরুলের

বিদেশি শিক্ষার্থী-কর্মীদের কানাডার দুঃসংবাদ

১০

পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাবি প্রশাসনের মামলা

১১

জবির নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন

১২

ঢাবিতে মব জাস্টিসের প্রতিবাদে ‘ব্রিং ব্যাক জাস্টিস’ কর্মসূচি

১৩

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় মিলল

১৪

আ.লীগ নেতা তুষার কান্তি মন্ডল ৭ দিনের রিমান্ডে

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১৫

১৬

ঢাবি ও জাবিতে ‘পিটিয়ে হত্যা’ দুঃখজনক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্ত দাবি ঐক্য পরিষদের

১৮

ঢাবির হলে পিটিয়ে হত্যা, তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তার আহ্বান

১৯

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা নিয়ে আ.লীগের বিবৃতি

২০
X