সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি

মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি

এ কথা সত্য যে, মধ্যবিত্তই মধ্যবিত্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। জনজীবনে যে অভাব আছে, সেখানে যে দুঃখের একটা ভীষণ স্রোত অনর্গল প্রবহমান, সে বিষয়ে মধ্যবিত্তের কোনো দুশ্চিন্তা নেই এমন নয়। দুশ্চিন্তা যথেষ্ট আছে। অভাব ও দুঃখ মোচনের জন্য চেষ্টাও আছে। কিন্তু সেখানেও স্বার্থবোধটা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। যতই পরিবর্তন হোক, মধ্যবিত্ত চাইবে প্রচলিত ব্যবস্থাটা ভেঙে না পড়ুক। সংশোধন চাই, কিন্তু সংশোধন ব্যবস্থাটাকে আস্ত রাখার জন্যই দরকার। আমরা আলোচনা করব, কিন্তু হৃদয়হীনের মতো নয় বরং পিতৃদুর্বলতার সমালোচক-ছেলের মতো। আকাঙ্ক্ষা এ রকমের যে, ব্যবস্থাটা টিকে থাকুক এবং সংশোধনের ভেতর দিয়ে যেসব নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে তার বড় ভাগটা আমাদের হাতে ধরা জালে এসে ধরা দিক। একে শঠতা বললে বেশি বলা হবে, এটা মধ্যবিত্তের চরিত্রেরই একটা দিক।

অর্থনীতির বিশেষ বিন্যাসের ওপরই এ শ্রেণির অবস্থান; কিন্তু এ সত্যটাকে সে চায় এড়িয়ে চলতে। অর্থ যত বাড়ে, ততই বাড়ে ঘরের আসবাব আর বাড়ে কতকগুলো অমূর্ত ধারণার তার উৎসাহ। তখন সে কথা তোলে চরিত্রের, সত্যের, নীতির, ন্যায়-অন্যায়ের। এরাও আসবাবই এক প্রকারের—মানসিক আসবাব। কিন্তু বড় বড় ধারণার নিচে নিয়ামক শক্তি যে স্থূল অর্থনীতি, সেই স্পষ্ট সত্যটাকে যতক্ষণ পারা যায়, যেভাবে পারা যায়, যতবার পারা যায় অস্বীকার ও উপেক্ষা করার কাজটা সমানে চলতে থাকে। যেন রৌপ্য মুদ্রার দাপটটা মেনে নিলেই শুভকর্মের সমস্ত শুচিতা বিনষ্ট হয়ে যাবে, যেন অর্থোপার্জনের ব্যতিব্যস্ত কাজটা অতিশয় নোংরা ও নীতিবিগর্হিত।

অমূর্ত ধারণাগুলোকে নিয়ে অনেকরকম শব্দ করা হয়, কিন্তু সব শব্দ ছাপিয়ে ওঠে একটা কথা— শিক্ষা। শিক্ষা চাই, শিক্ষা দিতে হবে, শিক্ষার আলো লাগলে অন্ধকারের আর রক্ষে নেই, একেবারে উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। এর কারণ আছে। শিক্ষাই সেই সদর সিঁড়ি যা বেয়ে আমরা মধ্যবিত্তরা উঠে এসেছি। বিদ্যা দিয়েই বিত্ত অর্জন করেছি, যদি করে থাকি এবং যেটুকু করেছি। আর দেশ যেহেতু একই সঙ্গে অজ্ঞ ও দরিদ্র তাই বিদ্যা নিজেই এক ধরনের বিত্ত। কিন্তু যখন শিক্ষা প্রসারের হট্টগোল ওঠে তখন এ কথাটা খেয়াল করা হয় না যে, প্রসারের জন্য পথঘাট তৈরি আছে কি না শিক্ষা আমরা ক্রয় করি, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা তো সবার নেই, যার আছে শিক্ষা শুধু সে-ই পাবে, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর বুদ্ধিগত যোগ্যতার কথাটা প্রায় অবান্তর। অর্থাৎ শিক্ষাবিস্তারের বড় বড় সড়ক আটকে রেখে শিক্ষাকে তাড়া দেওয়া হচ্ছে ছড়িয়ে পড়ার। আর পরিসংখ্যানের হিসাব দেখিয়ে বড়াই চলছে যে, শিক্ষা দেশের আনাচে-কানাচে বিস্তর আলো বিতরণ করছে। বড় প্রশ্ন আরও একটা আছে। যে শিক্ষাটা তাড়া দেওয়া হচ্ছে তার প্রকৃতিটা কী? ঔপনিবেশিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থা কেরানি তৈরির যন্ত্রের চেয়ে বড় কিছু ছিল না, একটা প্রচলিত সমালোচনা। সেই ব্যবস্থার সংশোধন হয়তো কিছুটা হয়েছে, কিন্তু তার খোলনলচে বদল অনেক দূরের কথা। আর যদি শুধু কেরানি তৈরি নাও হয়, রদবদলের মাধ্যমে ব্যবস্থাটা যদি উৎপাদনশীল হয়েও ওঠে, তাহলে কি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে দুধ ও মধুর বন্যা বয়ে যাবে? ধরে নিলাম অনেক বিজ্ঞানী, কারিগর, অর্থনীতিবিদ কি পণ্ডিত তৈরি হলো, দেশের উৎপাদনও বাড়ল কিছু, কিন্তু তাতে দেশের অগুনতি মানুষের বিশেষ কি আসবে যাবে? যা উৎপন্ন হবে তার প্রায় সবটাই তো বিত্তবান ও মধ্যবিত্তরা দখল করে নেবে, যেমন নিয়েছে অতীতে, নিচ্ছে এখনো। বস্তুত এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ধনবণ্টনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার মধ্যে কুশলী ও দক্ষ মানুষ তৈরি অর্থ মধ্যবিত্ত শ্রেণিটাকেই আরও খানিকটা শক্ত ও স্ফীত করা। বিদ্বানের সংখ্যা বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে উৎকেন্দ্রিকতা, পরিবেশ সম্পর্কে হীনম্মন্যতা, ক্ষোভ ও ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃণা। পরিপুষ্টি যা ঘটছে তা এ বোধেরই। ক্রমান্বয়ে বর্ধিষ্ণুসংখ্যক লোককে আমরা চোখ বেঁধে এনে মধ্যবিত্তের আত্মসচেতনতা, অভিমান ও অহমিকার নির্বিকার দুর্গের অবরোধের ভেতর নিক্ষিপ্ত করছি। অতএব একদিকে যেমন দরকার শিক্ষার প্রসার যাতে অবারিত হতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; অন্যদিকে তেমনি দরকার শিক্ষার উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তুর মৌলিক পরিবর্তন। শিক্ষা মানে যদি হয় কতগুলো সংবাদ ও গুজব সংগ্রহ করা এবং বিদেশি পাঠ্যপুস্তকের স্বদেশি সংস্করণ নিরন্তর কণ্ঠস্থ করা, তবে সে শিক্ষায় উপকারের সম্ভাবনার চেয়ে অপকারের আশঙ্কা বেশি। এমনকি বুদ্ধি তীক্ষ্ণ ও হস্ত দক্ষ হয়ে উঠছে—এ খবরও যথেষ্ট নয়? তেমন শিক্ষাব্যবস্থা আবশ্যক যাতে বুদ্ধি ও দক্ষতার সঙ্গে সমানতালে হৃদয় প্রসারিত হয়। প্রসারিত ও সংবেদনশীল হৃদয় চাই, তেমন হৃদয় যেখানে দেশের কৃষ্টি প্রতিফলিত হবে, দেশের হৃৎকম্পন প্রতিধ্বনি তুলবে। তেমন হৃদয়ে বিবেকের উদ্বোধন স্বাভাবিক ঘটনা। বিবেকহীন বুদ্ধি ও দক্ষতা যে কোনো মুহূর্তে অশুভ শক্তিতে পরিণত হতে পারে। তাই শিক্ষা যদি বিবেকের উদ্বোধন না ঘটায় তাহলে তার সদম্ভ বিস্তারে বরং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ আছে। সংখ্যায় বাড়ছে অথচ ক্রয়ক্ষমতায় বাড়ছে না এমন অবস্থা অর্থনীতিতে বিপজ্জনক; শিক্ষাব্যবস্থায় ততোধিক। শিক্ষাস্ফীতি মুদ্রাস্ফীতির চেয়েও ক্ষতিকর।

শিক্ষা বিস্তারের উল্টো পিঠে আরেকটা সমস্যার অস্তিত্বও স্বীকার করতে হয়। শিক্ষিত হলে মানুষ অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে চায়, তার প্রবণতা হয় নিজের চারপাশে একটা দূরত্ব ঘনিয়ে নেওয়ার। সেইখানে প্রয়োজন সাহিত্যের। সাহিত্য পারে মানুষকে তার সংকীর্ণ স্বার্থের ক্ষুদ্র বিবর থেকে বের করে এনে বাইরের বৃহৎ জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে। কাজেই শুধু শিক্ষার সংখ্যাগত বিস্তার ঘটছে, সৎ ও বিবেকবান সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে না—এটাও সুখবর নয়, কেননা এর তাৎপর্য হলো, বুদ্ধি এগিয়ে গেছে, বিবেক আছে পেছনে পড়ে। কিন্তু সাহিত্যের যে প্রকারভেদ আছে সেটাও মেনে নেওয়া আবশ্যক। সাহিত্যের মাধ্যমে যদি মধ্যবিত্তের মানসবিলাস, উগ্র নগরচেতনা, নকল আধুনিকতা, বিষয়বস্তুর চেয়ে আঙ্গিককে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার অভিরুচি—ইত্যাকার বিষয়কে দেশময় ছড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেই সংক্রামক ব্যাধিতে কোন মঙ্গল সূচিত হবে এমন বিবেচনা করা কঠিন। আসলে মধ্যবিত্ত সাহিত্যের বিস্তার মানে মধ্যবিত্ত চেতনারই বিস্তার, নব্যশিক্ষিতের অবরোধ দশাটা যাতে আরও পাকাপোক্ত হয় তারই ব্যবস্থা গ্রহণ। পাকিস্তান আমলে দেখা গেছে, সাহিত্যের ঐতিহ্য নিয়ে বিস্তর বিতণ্ডা হয়েছে এবং ঐতিহ্য দেশে খুঁজে না পাওয়া গেলে বিদেশেও তার খোঁজাখুঁজি চলছে। এ কাজটার পেছনে শুধু যে শাসকের প্ররোচনা ছিল তা নয়, সেইসঙ্গে সক্রিয় ছিল মধ্যবিত্তের অভিমান ও অহমিকা। তার অতীত থাক বা না থাক, অতীত নিয়ে গর্ব থাকা চাই। কিন্তু আপত্তি এখানে যে, আমরা আমাদের মধ্যবিত্ত অভিমান ও অহমিকার বোঝা দেশের মানুষের দুর্বল ও নিরপরাধ কাঁধের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছি। সাহিত্যকেও তাই মধ্যবিত্ত গণ্ডির বাইরে আনা অত্যন্ত আবশ্যক।

শিক্ষা ও সাহিত্য পরিবর্তনের পন্থা বটে, কিন্তু তাদের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত ফলপ্রসূ পন্থা আছে। সেটা রাজনীতি। মধ্যবিত্তের ছুঁতমার্গ ও শুচিবাইগ্রস্ততা রাজনীতির প্রশ্নে যতটা স্পষ্ট, তেমন বোধহয় আর কোথাও নয়। তার দৃষ্টিতে রাজনীতি হলো একটা পেশা। পেশাদার যারা এতে শুধু তাদের এখতিয়ার—যেমনটা সত্য আর পাঁচটা পেশার ব্যাপারে। কিন্তু এ পেশাটা আর পাঁচটা পেশার মতো মহৎ নয়, এমনকি সত্ত্ব নয়; বরং এটা খারাপ পেশাই, খারাপ লোকদেরই পেশা, বখাটেদের শেষ আশ্রয়। কূটকৌশল ও চক্রান্ত এ পেশার ভিত্তি, অসত্য ভাষণ ও নীতিহীন আচরণ এর অবলম্বন। ভালোমানুষ ও ভালোমানুষির পক্ষে এ পেশা—একে ব্যবসায়ও বলা যায়—খুবই অনুপযোগী। অর্থাৎ অনেক নীতিচিন্তার কুজ্ঝটিকার মধ্যে এ সত্যটিকেই অবজ্ঞা করা হয় যে, রাজনীতিকে জীবন থেকে আলাদা করা যায় না, রাজনীতি শুধু খবরের কাগজ, জনসভা বা সংসদকক্ষের ব্যাপার নয়। এ আমাদের গৃহজীবনেরও অনিবার্য অঙ্গ। দেশের রাজনীতির আওতার বাইরে আমরা কেউই নই। সমাজ-সম্পর্কের এ জটিলতার দিনে সমাজের প্রভাবকে এড়িয়ে সাধু বা সুফিদের মতো ব্যক্তিগতভাবে সৎ জীবনযাপন করার কথা ভাবা অবাস্তব ও অবান্তর কল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া। কেননা, সমাজ প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে আক্রমণ করছে, ব্যক্তিগত জীবন কি চেহারা নেবে তা ঠিক করে দিচ্ছে। কাজেই সমাজ যাতে সততার সহায়ক হয় সে চেষ্টা করা দরকার সৎ থাকার ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই। সবদিক দিয়েই রাজনীতি হচ্ছে এ কালের মানুষের বিধিলিপি একে অবজ্ঞা করা তেমনি অসম্ভব যেমন অসম্ভব আলো-বাতাসকে অবজ্ঞা করা। অসুস্থ রাজনীতিকে সুস্থ করার উপায় রাজনীতি থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে অংশগ্রহণ করা।

ব্যক্তির জীবনে রাজনীতির এ গুরুত্ব প্রাচীনকালে অ্যাথেন্সবাসী এবং আধুনিককালে চীন দেশবাসী যথার্থ উপলব্ধি করেছেন। গ্রিক ভাষায় ‘নির্বোধ’ বলতে বোঝায় তেমন মানুষ, সামাজিক ব্যাপারে যে অংশগ্রহণ করে না (অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞানী হ্যামলেট একজন নির্বোধ, কিন্তু নির্বোধ বলে নিন্দিত ডন কুইক্সট একজন বুদ্ধিমান)। নির্বোধকে এভাবে নির্দিষ্ট ও চিহ্নিত করার মধ্যে যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত অ্যাথেনীয় গণতন্ত্রের সৃজন ও বিকাশে তার বড় একটি ভূমিকা ছিল। প্রাচীন অ্যাথেন্সে রাজনীতিকে মনে করা হতো সামাজিক জীবনের প্রধানতম অংশ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকশক্তি। সব নাগরিকের অংশগ্রহণ, সবাইকে একত্র সংলগ্নকারী চেতনা এবং সবার নাগরিক অধিকার-সচেতন সাম্যদৃষ্টিকে বাদ দিয়ে অ্যাথেন্সের কালজয়ী ও বিশ্ববন্দিত সভ্যতাকে কল্পনা করা অসম্ভব। নব্যচীনের প্রায় অবিশ্বাস্য শক্তির উৎসও ওই একই স্থানে। চীনে রাজনীতিই প্রথমে আসে—শিল্পের আগে, এমনকি উৎপাদন ব্যবস্থারও আগে। রাজনীতিই নিয়ন্ত্রিত করে সামাজিক ব্যবস্থার সব এলাকাকে। সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন সঠিক উৎপাদন নেই, সঠিক শিক্ষা নেই। সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে নানাবিধ প্রচারের কুয়াশা ভেদ করেও যেটুকু তথ্য জানা গেছে তাতে বোঝা যায় বিপ্লবের কর্মীদের যে মানসিকতার সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে নিয়োজিত হতে হয়েছে তার সেই অতি প্রাচীন ব্যাধি যা না-কি বলে, অনবরত বলে, যে যিনি পদার্থবিজ্ঞানী তিনি হবেন শুধু ওই বিজ্ঞানেরই বিশেষজ্ঞ, ঐতিহাসিক যিনি তার একমাত্র দায়িত্ব ইতিহাসের জ্ঞান সঞ্চয় করা, তার বাইরে তিনি যাবেন না, গেলে ক্ষতি হবে জ্ঞানের, অপচয় ঘটবে সময়ের, বিচলিত হবে নিমজ্জিতচিত্ত অভিনিবেশ। তাকে হতে হবে পিপীলিকা, অথবা মাকড়সা, সংগ্রহ করবেন পরিশ্রমে, নয়তো প্রতিভা বলে গড়বেন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ঊর্ণনাভ। এই মনোবৃত্তির মধ্যে পৃষ্ঠপোষকতা আছে সামাজিক অজ্ঞতার ও বিচ্ছিন্নতার এবং ততোধিক আছে আত্মনিমগ্নতা ও স্বার্থপরতা। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্য এ মনোবৃত্তি সম্পূর্ণ অনুপযোগী ও মারাত্মকরূপে ক্ষতিকর। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গ্রিকরা যাকে নির্বুদ্ধিতা বলতেন, নব্যচীনেরা যাকে বলেন ব্যাধি, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের চিত্তভূমিতে তা একটি অত্যুজ্জ্বল ও অতিপ্রাথমিক সত্য। এ মধ্যবিত্তের জীবনে সামাজিকতা অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকতা আছে বহুদিন, কিন্তু সমাজবদ্ধতা নেই আন্তরিক; ঐক্যবোধ ও সাম্য-দৃষ্টি—অনুপস্থিত উভয়েই। রাজনীতিতে অনুৎসাহ, এবং রাজনীতির বাইরে থাকাকে উৎকৃষ্ট নৈতিক গুণ মনে করার তাৎপর্য তাই নিতান্ত সামান্য নয়।

দেশের উন্নতি হচ্ছে এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে সেটা কার উন্নতি। আর দেখতে গেলেই দেখা যাবে, সে উন্নতি আসলে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের। শ্রেণিভেদটা যে গড়ে উঠেছে তা ভবিষ্যৎ সংঘর্ষেরই প্রস্তুতি। বৈষম্যে, অত্যাচারে, নিষ্পেষণে সেই প্রস্তুতিই তীব্র হচ্ছে, তার শক্তিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতের সংগ্রামে হ্যামলেটদের বড় ভূমিকা থাকবে না, তা তারা যতই বিচক্ষণ হন, ডন কুইক্সটদের থাকবে তা তাদের নিয়ে বিজ্ঞমন্য হ্যামলেটরা যতই হাস্যকৌতুক করুন।

লেখক : ইমেরিটারস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সভাপতি, সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্ধু হারাচ্ছে ইসরায়েল, চাপে নেতানিয়াহু

রাজধানীতে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন

সৌদি পৌঁছেছেন ২৭ হাজারের বেশি হজযাত্রী

ধান কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, নিহত ১

হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ সুধা রানী, যে ব্যাখ্যা দিল এনটিআরসিএ

৬ তলার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

ঝালকাঠিতে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ৭

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে রাজধানীতে স্বস্তি

একাদশে ভর্তি / নটর ডেমে আবেদন ২৫ মে শুরু হয়ে চলবে ৩০ মে পর্যন্ত

বাংলাদেশি সমর্থকদের বিশ্বকাপ উপভোগে বাধা ‘টাইম জোন’!

১০

ছুটির দিনে ঢাকার বাতাস কেমন?

১১

সাতক্ষীরায় ধান বোঝায় ট্রাক উলটে নিহত ২

১২

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কালের সাক্ষী ‘অভিশপ্ত নীলকুঠি’

১৩

দুপুর ১টার মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৪

রিকশাচালকের পা ভেঙে দেওয়া সেই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার

১৫

ধানের বাম্পার ফলনের পরও হতাশ কৃষক

১৬

হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা এড়াতে যা করবেন

১৭

বাঁশ-দড়ি বেয়ে মসজিদে যান ১১৫ বছর বয়সী অন্ধ মোয়াজ্জিন

১৮

আফগানিস্তানে বন্দুকধারীদের গুলিতে ৩ স্প্যানিশ পর্যটকসহ নিহত ৪

১৯

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

২০
X