বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, ছোট থেকেই এ বাক্যগুলোর সঙ্গে আমরা বড় হতে থাকি। কিন্তু আদৌ কি এই দেশের কৃষকরা ভালোভাবে বেঁচে আছেন? যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য সম্মান ও ন্যায্য দাম পাওয়ার কথা ছিল কৃষকের, সেই তারাই কোনো না কোনো সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ব্যর্থ হচ্ছে ন্যায্য অধিকার আদায়ে।
আমরা প্রতিনিয়তই খবরের কাগজে অথবা টেলিভিশনে দেখতে পাই কোথাও না কোথাও কৃষক তাদের ন্যায্য মূল্য আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। অথবা কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। কখনো সুদের চাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আশানুরূপ ফসল না পাওয়ায় বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার মতো জঘন্য রাস্তাও। আবার অধিকাংশ সময় এ দেশের শ্রমজীবী কৃষকই এই সোনার মাটি ছেড়ে বিদেশ গিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন অন্য কারও অধীনে। অথচ কীসের কমতি এই সোনার মাটিতে? এর কারণ খুঁজতে গেলে সবচেয়ে সামনে যেটা আসে তা হলো, কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া। অথবা অর্থের অভাবে কৃষিতে না আসা।
দেশের কৃষিকে এভাবে ধ্বংস হতে দেখে এগিয়ে এলেন একদল তরুণ উদ্যোক্তা। চার বছর কৃষি সেক্টর নিয়ে গবেষণা করে ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত করলেন অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সাত উদ্যোক্তার হাত ধরে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কাজ করছেন ৪০ জনের বেশি কর্মী। ‘কৃষির যত্নে অ্যাগ্রিকেয়ার’ স্লোগান নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবাল লিমিটেড বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষকের জন্যে কাজ করে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ ইনভেস্ট করা হয় জেলাভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষকপর্যায়ে। কৃষকের সেই অর্থ বিনিয়োগ করেন তাদের কৃষিতে। অর্থ বিনিয়োগ থেকে ফসল তুলে আসা পর্যন্ত অভিজ্ঞ কৃষিবিদদের দিয়ে যাবতীয় কৃষিবিষয়ক পরামর্শ ও প্রদান করে থাকে অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবাল। সবশেষে উৎপাদিত পণ্য তারা নিজেরা বিক্রি করে এবং বিক্রীত পণ্যের লভ্যাংশ থেকে কৃষকের অংশ তাদের বুঝিয়ে দিয়ে বাকি অর্থ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেয় অ্যাগ্রিকেয়ার।
অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবালে সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পাবনা জেলায় এখন তিন হাজারের বেশি কৃষক যুক্ত আছেন। প্রচলিত ফসলের বাইরে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনেরও ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠানটি, যাতে কৃষক বেশি অর্থ আয় করতে পারেন।
অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবালের সঙ্গে যুক্ত চুয়াডাঙ্গার দর্শনার চাষি মজনু মিয়া বেশ হাস্যোজ্জ্বলভাবে জানান, অ্যাগ্রিকেয়ার থেকে কৃষি পরামর্শ নিয়ে ফসলের উৎপাদন আগের তুলনায় বাড়াতে পেরেছি। এর ফলে বর্তমানে আগের তুলনায় পরিবার নিয়ে সচ্ছলভাবে চলা যাচ্ছে।
নিয়ত আলী নামের মানিকগঞ্জের কৌড়ীর এক কৃষক বলেন, ‘অ্যাগ্রিকেয়ারের কর্মীরা বিভিন্ন জমির মাটি বুঝে কোন সার কতটা দিতে হবে, তা আগেই জানিয়ে দেন। ফলে ফসল অনুযায়ী মাটিতে সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করে বেশি ফসল তুলতে পারছি। এতে ফসল উৎপাদনের খরচ কমেছে, ফলে সন্তানের পড়াশোনার খরচ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না।
অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কিন্তু কৃষকদের ঋণ দিই না। আমরা মূলত কৃষি খাতে বিনিয়োগ করি। অনেক সময় আমরা নিজেরাই উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করে থাকি। এর ফলে কৃষকরা ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠ থেকে ভালো দামে ফসল বিক্রি করতে পারছেন। অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবালের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও বা মহাজনের ঋণের চক্র থেকেও বের হতে পেরেছেন কৃষকরা।
লেখক: ডিরেক্টর, অ্যাগ্রিকেয়ার গ্লোবাল