বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস দুজনই বেশি বছর বাঁচেননি। যদিও দেশবন্ধুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। দুজনেরই ৫৫ বছর বয়সের জীবন ছিল। আর নেতাজি সুভাষ বোস ৪৮ বছর বেঁচে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ৩৬ (১৯৩৯-১৯৭৫) বছরের আর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন মাত্র ৯ বছরের (১৯১৭-১৯২৫)। বঙ্গবন্ধু লেখায় আমরা পাই (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের শুরুতে সংযোজিত হয়েছে)—‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন বাঙালি জাতির বিকল্পহীন অবলম্বন। ‘নিউজ উইক’ পত্রিকায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে কভার স্টোরি করা হয়েছিল, সেখানে প্রতিবেদক শেখ হাসিনাকে ‘বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর দেশবন্ধু বিষয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘স্মৃতিকথা’য় সুভাষচন্দ্রের একটি উল্লেখ রয়েছে: ‘সুভাষকে করপোরেশনের কাজ দিবার পর একদিন আমাকে বলিয়াছিলেন, I have sacrificed my best man for this Corporation এবং সেই সুভাষকেই যখন পুলিশ ধরিয়া লইয়া গেল, তখন তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিয়াছিল, তাঁহাকে সর্বদিক দিয়া অক্ষম ও অকর্মণ্য করিয়া দিবার জন্যই গভর্নমেন্ট তাঁহার হাত-পা কাটিয়া তাঁহাকে পঙ্গু করিয়া আনিতেছে।’ ঠিক এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত দেশবন্ধু তার একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন: ‘if love of country is a crime, I am a criminal. If Mr. Subhas Chandra Bose is a criminal, I am a criminal.’ এই সংকলনের ‘সমকাল’-এর লেখার তৃতীয়টি হলো সুভাষচন্দ্রের নিজের দেশবন্ধুর ওপর একটি দীর্ঘ মূল্যবান প্রবন্ধ, সেটি তিনি রচনা করেছিলেন মান্দালয় জেলে ১৯২৬-এর ফেব্রুয়ারি মাসে। তিনি লিখেছিলেন: ‘ভারতের হিন্দু জননায়কদের মধ্যে দেশবন্ধুর মতো ইসলামের এত বড় বন্ধু আর কেউ ছিলেন বলে মনে হয় না। তিনি হিন্দু ধর্মকে এত ভালোবাসতেন যে, তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন অথচ তাঁর মনের মধ্যে গোঁড়ামি আদৌ ছিল না।’ ভারতবর্ষের ধর্মীয় বিভিন্নতার বিষয়ে এই উদার মহানুভবতার আদর্শকেই সুভাষচন্দ্র তার নিজের রাজনীতিতেও প্রতিফলিত করতে চেয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র শ্রদ্ধাভরে লিখেছিলেন: ‘চিত্তরঞ্জনের জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা লাভ করত আন্তর্জাতিক সংযোগের মধ্যে। কিন্তু সেই বিশ্বপ্রেমের জন্য নিজের দেশের প্রতি প্রেম তিনি বিসর্জন দেননি। আবার তার সঙ্গে এও ঠিক যে, এই স্বজাতি প্রেম তাঁর মধ্যে কোনো সংকীর্ণ আন্তকেন্দ্রিকতাও তৈরি করেনি।’ দেশবন্ধুর এই অপূর্ণ স্বপ্ন এবং আশার মধ্যেই তার ‘সর্ববৃহৎ উত্তরাধিকার খুঁজে পেয়েছিলেন নেতাজি। পরের লেখাটি সেকালের শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী বিনয়কুমার সরকারের হিন্দু-মুসলিম চুক্তিনামার বিশ্লেষণ। মূল প্রবন্ধটি ইংরেজিতে ১৯২৮ সালে ফরোয়ার্ড পত্রিকার বিশেষ দেশবন্ধু সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিনয়কুমারের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ: “হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট দ্বারা চিত্তরঞ্জন হিন্দুদিগকে ‘অসম্ভব রকমের’ স্বার্থ ত্যাগ করিত বলিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু এই তথাকথিক স্বার্থ ত্যাগের দ্বারা তিনি রাষ্ট্রের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করিবার প্রয়াসই পাইয়াছিলেন।” দেশবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, হিন্দু-মুসলিম সমস্যা অনেকাংশেই খাওয়া-পরার সমস্যা। বর্তমান যুগের আধুনিক আইন, বিদ্রোহ, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতির আলোকে বিনয়কুমার দেশবন্ধুর এই চুক্তিনামার মূল্যায়ন করেন। তিনি পাঠকদের বুঝিয়ে বলেন: ‘বাংলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্বার্থের ন্যায্য হিস্যা ও অধিকার নির্দিষ্ট করিবার জন্য এই প্যাক্টের সৃষ্টি। পাঠক খেয়াল করে দেখবেন, বঙ্গবন্ধু ও দেশবন্ধুর মধ্যে কি অপূর্ব মিল। মুসলিম বিশ্বের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহমর্মিতার নিদর্শন পাওয়া যায় চতুর্থ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে। এই যুদ্ধ ইসরায়েলিদের কাছে ইয়াম কিপুর যুদ্ধ আর আরবদের কাছে অক্টোবর যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া এই যুদ্ধ ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, রমজান যুদ্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন নামেও পরিচিত। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর এই যুদ্ধ শুরু হয় এবং ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধ শুরু হলে আরব দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ইসরায়েলি আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে। নিপীড়িত মানবতার জন্য বঙ্গবন্ধু সর্বদাই চিন্তিত থাকতেন এবং তাঁদের সহায়তা করতে সচেষ্ট ছিলেন বলে তিনি আরবদের ন্যায়সংগত এই যুদ্ধে আরব দেশসমূহকে সমর্থন জানান। তিনি শুধু নৈতিক সমর্থন জানিয়েই থেমে থাকেননি, সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সেখানে সামরিক চিকিৎসকদল প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, তখন পর্যন্ত অনেক আরব দেশ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি, তদুপরি মানবিক দিক বিবেচনা করে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ছিল সাহসী ও সুদূরপ্রসারী। উল্লেখ্য যে, ওই যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে খুবই অল্পসংখ্যক মুসলিম দেশ ক্ষমতাশীল আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।’
দুই.
গত ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাংককে চলমান এ সম্মেলনে তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল-ইরানে সংঘাত বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। গণহত্যা কতটা ভয়াবহ, ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছি। বিশ্বের যেখানেই থাকি না কেন ফিলিস্তিনসহ যেসব জায়গায় হত্যা-অবিচার চলছে, তা বন্ধ করতে বলব।’ যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধ এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়ায়, কোনো সমাধান আনতে পারে না। কিন্তু আলোচনা শান্তি আনতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন, যা জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি আমাদের পারস্পরিক সম্মান দেখাতে হবে।’ শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে আসিয়ানকে প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবশ্যই দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অভিন্ন সংকটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের জোরালো ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে সংঘাত শুরুর পর সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয়ও দেওয়া হয়েছে। সারা বিশ্বেই এটি মানবিকতার অনন্য উদাহরণ। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি হচ্ছে। তাদের সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠাতে হবে। এজন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমারে। আসিয়ানকে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা এবং মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আসিয়ানকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিন.
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ইতিহাস অনেকের জানা নেই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অসংখ্য উদাহরণের একটি। বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন পরিচালক ও উপসচিব মোহাম্মদ জমিরকে (রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির) ডেকে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের একটি দলকে প্রেরণের বিষয়ে প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও টিমের সঙ্গে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার কেএম সফিউল্লাহ ও ডাইরেক্টর মেডিকেল সার্ভিস কর্নেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদকে ডেকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আরব ও মুসলিম দেশগুলো আজ বিশাল বিপদের সম্মুখীন, এই সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক কর্তব্য। যদিও আমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও অত্যাচারিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।’ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু সেনাসদরের সাতজন অফিসার ও ২১ জন সৈনিককে এই কাজের জন্য নিয়োজিত করলেন এবং দ্রুত প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিলেন। মিশনে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু ২৮ জনের দলকে তার অফিসে আমন্ত্রণ করে তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সফল কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে অত্যাচারিত মানুষের কল্যাণ এবং বাংলাদেশের সম্মান ও ভবিষ্যতের অনেক সিদ্ধান্ত।’ জাতির পিতার এই ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়েছিল। চিকিৎসকদলের সঙ্গে মিশর ও সিরিয়ার জন্য ৪ টন চা পাঠানো হয়। আমরা জেনে থাকব বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভারতে এবং সেটা ছিল কলকাতায়। ওই সফর নানা কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু ভারতীয় সরকার এবং জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ও ত্যাগের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। সেইসঙ্গে ভারতীয় বাহিনীকে স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানা ত্যাগ করার জন্য তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর ভারত সফরকালীন ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যকার আলোচনার পর যুক্ত ইশতেহারে সরকারি ঘোষণায় জানানো হয় যে, ২৫ মার্চের মধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। তবে এই সময়ের আগে ১২ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অন্যতম ব্যাটালিয়ন ৪ গার্ড রেজিমেন্ট বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে গার্ড অব অনার প্রদান করে। ১৭ মার্চের মধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সসম্মানে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তা ও সঠিক নেতৃত্বের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত শান্তি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ভাষণের কিছুটা অংশ এখানে সংযোজন করা যেতে পারে।
“আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক। বৃহৎ শক্তিবর্গ, বিশেষভাবে আগ্রাসী নীতির অনুসারী কতিপয় মহাশক্তির অস্ত্রসজ্জা তথা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে আজ এক সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য বিনিয়োগ করা হোক। তাহলে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুছে ফেলার কাজ অনেক সহজসাধ্য হবে। আমরা সর্ব প্রকারের অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দুনিয়ার সকল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বের সব দেশ ও জাতির বন্ধুত্ব কামনা করি। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বিদ্বেষ নয়’—শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল। তাই সামরিক জোটগুলোর বাইরে থেকে সক্রিয় নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি আমরা অনুসরণ করে চলেছি। শুধু সরকারের নীতিই নয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংহতি সুদৃঢ় করা আমাদের সংবিধানের অন্যতম অনুশাসন। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আমাদের সংবিধান জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই ৪টি স্তম্ভের ওপরই রচিত। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে চাই।”
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক