আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। দুটির অবস্থান দুই মেরুতে। আওয়ামী লীগ যা বলবে এবং করবে তার উল্টো বলা এবং করাটাই বিএনপির রাজনীতি। একইভাবে যে কোনো বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান গ্রহণই আওয়ামী লীগের ‘পবিত্র দায়িত্ব’। সবক্ষেত্রেই তারা এরকম পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। কোনো বিষয়ই এ দুটি দল একমত নয়। এমনকি মৌলিক ইস্যুতেও তাদের অবস্থান দুই মেরুতে। এবার ইফতার নিয়েও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পরস্পর বিপরীত অবস্থান চোখে পড়ল। পবিত্র রমজান মাসের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে বড় ইফতার পার্টি না করার অনুরোধ করলেন। তিনটি কারণে প্রধানমন্ত্রী আড়ম্বরপূর্ণ ইফতার পার্টি না করার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করেন। প্রথমত, গাজায় মুসলিম নির্যাতন। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চলছে অস্থিরতা। ইসরায়েলের তাণ্ডবে গাজার মুসলমানরা চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে। এবার পবিত্র রমজান তাদের জন্য এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। গাজার মানবিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশ এবার ইফতার বিলাসিতা করছে না। অনেক মুসলিম দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইফতারের আড়ম্বর পরিহার করে প্রতিটি মুসলমান যেন গাজার মুমূর্ষু মানবতার পাশে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মুসলমানরাও এবার ইফতার সংযমের নীতি অনুসরণ করছে। ইফতার পার্টির পয়সা বাঁচিয়ে গাজায় পাঠানো হচ্ছে মানবিক ত্রাণ। পৃথিবীর বহু দেশ এমনটি করছে। বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর এ অবস্থানের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর সে কারণেই তিনি বড় ইফতার পার্টি না করার অনুরোধ জানান দেশবাসীকে। বড় ইফতার পার্টি না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের দ্বিতীয় কারণ ছিল দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কিছুদিন ধরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তরাও এখন জিনিসপত্রের দামে দিশেহারা। এরকম বাস্তবতায় টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার অনুধাবন করতে পেরেছে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট। তারা ভালো নেই। রমজানে কিছু মুনাফালোভীর অনৈতিক লাভের নেশা আরও বেড়েছে। কিছু মানুষের যখন ন্যূনতম খাবার জোগাড় করাই দুরূহ হয়ে উঠেছে, তখন ইফতার পার্টির নামে বিলাসিতার প্রদর্শনী কষ্টে থাকা মানুষের সঙ্গে তামাশার শামিল। বড় ইফতার পার্টি আসলে গরিব মানুষের সঙ্গে উপহাস, তাদের অপমান করা। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যেমন অসহনীয়, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ব্যাধিগ্রস্ত। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি পথ হারিয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার জন্য সরকার কিছুদিন ধরেই সবক্ষেত্রে ‘কৃচ্ছ্র’ নীতি অনুসরণ করছে। এ নীতির জন্যই প্রধানমন্ত্রী বড় ইফতার পার্টি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তৃতীয়ত, পবিত্র রমজান মাস সংযমের মাস। জাঁক-জমকপূর্ণ ইফতার পার্টি আসলে রমজানের মূল চেতনার পরিপন্থি। কিছু কিছু বিত্তবান ইফতারের নামে যে অপচয় করেন, তা দিয়ে বহু ক্ষুধার্ত মানুষকে রমজান মাসে পেটপুরে খাওয়ানো যায়। এটাই ইসলামের চেতনা। কিন্তু তা না করে এ রমজানে অনেকে অপচয়ের বীভৎস উৎসবে মেতে ওঠে। এটি গর্হিত, অনুচিত। প্রধানমন্ত্রী এ চেতনার আলোকেই দেশবাসীকে সংযমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি না করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি নিজেই এ ধরনের ইফতার আয়োজন থেকে বিরত থেকেছেন। গত কয়েক বছর থেকে প্রধানমন্ত্রী রমজানের পবিত্রতা ও সংযমকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইফতার পার্টির বিলাসিতা থেকে সরে এসেছে গণভবন। এবারও একই পথে হেঁটেছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগও এবার কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন করছে না। কয়েক বছর আগেও রোজায় সরকারি অফিসগুলোতে ইফতার পার্টির ধুম পড়ত। ইফতার পার্টির অত্যাচারে পাঁচতারকা হোটেলে, রেস্টুরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া পাওয়াই দুষ্কর হয়ে যেত। ইফতার পার্টির নামে চলত নীরব চাঁদাবাজি। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, কর্মচারী সংগঠন ও ইউনিয়ন ‘ইফতার পার্টি’-কে রীতিমতো মৌসুমি ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছিল। রমজানের পবিত্রতার বদলে ইফতার পার্টির অতিশয্য ছিল বেপরোয়া। এবার ইফতার পার্টির মহামারি থেকে জাতি অনেকটাই মুক্ত হয়েছে। এবার রমজানের একটা সৌম্য পবিত্র চেহারা লক্ষ করা যাচ্ছে। সংযম বিলাস অনেকটাই কমে এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশিরভাগ মানুষ ইফতার পার্টির সংস্কৃতি থেকে সরে এলেও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ইফতার পার্টি অব্যাহত রেখেছে। প্রথম রোজা থেকেই বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ রমজানে দলটি পাঁচশো ইফতার পার্টি করবে। ইফতার পার্টিতে মোনাজাতের আগে তারা সরকার এবং আওয়ামী লীগকে গালমন্দ করছে। সরকারের অত্যাচারে মানুষ যে দুঃখের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সে কথা চিৎকার করে জানাচ্ছে। তারপর প্লেটে সাজানো আকর্ষণীয় ইফতারে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। বিএনপির ইফতার পার্টিতে একটা উৎসব উৎসব ভাব। নেতারা একে অন্যকে আলিঙ্গন করছেন। রসের আলাপে, হাসিতে লুটিয়ে পড়ছেন প্রায় অবসরে থাকা নেতারা। বিএনপির নেতারা বলছেন, ইফতার পার্টির মাধ্যমে তারা দলকে চাঙ্গা করছেন। এক নেতা বলছিলেন, ইফতার পার্টি এক ধরনের রাজনৈতিক জনসংযোগ। বিএনপির ভাষায় এটি নাকি ঐতিহ্য। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, বিএনপির নেতারা যেসব কথা বলেন, তাতে কি তাদের ইফতার পার্টি করা শোভা পায়? ইফতার উৎসব করার মতো পরিস্থিতি কি বিএনপির আছে? বিএনপির প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। দ্বিতীয় রোজার দিন তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পরদিন তিনি আবার ফিরোজায় ফিরে আসেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। একটি মামলায় তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। অর্থ পাচার মামলায় হাইকোর্ট তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। বিএনপির তৃতীয় প্রধান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অসুস্থ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন। একটি পরিবারের সব অভিভাবক যখন অসুস্থ হন অথবা বিপদে থাকেন তখন সেই পরিবারে উৎসব কি সম্ভব, না করা উচিত? বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কদিন আগে বিএনপির একজন নেতার সাক্ষাৎকার শুনেছিলাম। অত্যন্ত আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, ‘বিএনপির যেসব নেতাকর্মী কারাগারে আছেন, তাদের পরিবারগুলো অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।’ বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলছিলেন, ‘বিএনপির সবাই আসলে কারাবন্দি। অধিকারহীন।’ বিএনপির আরেক নেতা এককাঠি সরেস। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশই নাকি একটি কারাগার। এখানে সবাই অধিকারহীন। বিএনপির নেতাদের অমানবিক অবস্থার কথা প্রতিদিন শুনি। একবার মির্জা ফখরুল ইসলাম বিএনপির কর্মীদের মানবেতর অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এখন ঢাকায় রিকশা চালায়, মির্জা ফখরুলের এই বর্ণনা শুনে আমার ফকির আলমগীরের কণ্ঠে গাওয়া ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’ গানটির কথা মনে পড়ে। ‘মায়ের ডাক’ বলে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত একটি বিতর্কিত সংগঠনের কথা আমরা জানি। এই সংগঠন গুম নিয়ে কথা বলে। নির্বাচনের আগে গুমের তালিকা নিয়ে এরা রীতিমতো হৈচৈ ফেলেছিল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও এদের কথায় আবেগ সামলে রাখতে পারেননি। ছুটে গিয়েছিলেন মায়ের ডাকের নেত্রীর বাসায়। কথিত গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোকে নিয়ে বিএনপি এবং সুশীলরা মাঝেমধ্যেই নাটক করে। প্রতি বছর এ নাটক মঞ্চায়নের সময় কিছু কোমলমতি শিশুকে আনা হয়। এ শিশুরা পুতুল নাচের পুতুলের মতো আচরণ করে। তাদের বয়স বাড়ে না। বিএনপি নেতারা এ শিশুদের দেখিয়ে আর্তনাদ করেন। তাদের জীবনে আনন্দ নেই বলে হতাশার ঢেউ তোলেন সবাই। বিএনপির যদি হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে থাকে, তাদের পরিবার যদি অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায়, তাহলে তারা ইফতার উৎসব করে কীভাবে? বিএনপির ভাষায় তাদের বহু নেতাকর্মী গুম হয়েছে। বিএনপি বলে গুম হওয়া পরিবারগুলোর জীবন বিবর্ণ, উৎসবহীন। তাই যদি সত্যি হবে, তাহলে তো বিএনপির ইফতার পার্টি করা রীতিমতো অপরাধ। দলের কর্মীদের দুর্দশায় রেখে নেতারা যখন লেডিস ক্লাবে মুরগির রান চিবোন, তখন কি মনে হয় না, তারা অসহায় কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন? বিএনপি নেতারা যখন শীতাতপ বেষ্টনীর মধ্যে থেকে ঠান্ডা রুহ আফজায় চুমুক দেন, তখন কি তাদের একবার ভ্রমেও মনে হয় না কর্মীদের রক্ত চুষে নিচ্ছেন। বিএনপি যা বলে, তার একবিন্দুও যদি তারা বিশ্বাস করে তাহলে তো দলটির এরকম ঘটা করে ইফতার উৎসব করার কথা নয়। প্রতিদিন শোকের মাতম করার কথা। কিন্তু তারা করছে। সংযমের মাসে অসংযমের উৎসব। কেন? এটা কি এজন্যই যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ইফতার পার্টি করতে বারণ করেছেন, তাই বিএনপিকে ইফতার পার্টি করতেই হবে। এটি তো অবশ্যই একটি বড় কারণ। কিন্তু এর বাইরেও এরকম মুমূর্ষু অবস্থাতেও বিএনপির ইফতার পার্টি করার কিছু ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ইফতার পার্টি সংস্কৃতি ছিল না। বঙ্গবন্ধু, ভাসানী কিংবা এ কে ফজলুল হক তাদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইফতার পার্টি করেননি। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি দানবদের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলনে, বেশিরভাগ রোজাই করেছেন কারাগারের চার দেয়ালে। মুক্তিযুদ্ধের পরও ঘটা করে ইফতার পালন করতেন না জাতির পিতা। বাংলাদেশে ইফতার পার্টি কালচার শুরু হয় সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমানের সময়ে। জিয়া সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ক্ষমতা দখল করার পর তার খায়েশ হলো সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার, সেজন্য তিনি রাতে গুরুত্বপূর্ণ লেখক, বুদ্ধিজীবী, সুশীলকে ডেকে পাঠাতেন তার বাসভবনে। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। শেষে ওই বুদ্ধিজীবীকে তার (জিয়ার) দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাতেন। মাহফুজ উল্লাহর লেখা ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ; পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’ গ্রন্থে দেখা যায়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে জিয়াকে পরিচিত করাতে ‘ইফতার পার্টি’কে বেছে নেয়। ইফতার পার্টির উদ্দেশ্য ছিল জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ‘চাঙা’ করা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিএনপিতে ভেড়ানো। ১৯৭৭ সালের রমজানে নিয়মিত ইফতার পার্টির আয়োজন শুরু হয়। এই ইফতার পার্টির মাধ্যমে জিয়া তার ১৯ দফা এবং নতুন রাজনীতির প্রচারণা শুরু করেন। এটা ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল। রাজনৈতিক জনসংযোগ। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সেই পুরোনো খেলা জিয়া ইফতার পার্টির মাধ্যমে নতুন করে শুরু করেন। জিয়ার পর এরশাদ ইফতার পার্টির পরিধি ব্যাপ্তি এবং জৌলুস আরও বাড়িয়ে দেন। এভাবেই ইফতার পার্টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারের একটি অংশ হয়ে যায়। গণবিচ্ছিন্ন শাসকরা ইফতার কালচারের মাধ্যমে জনগণের আকর্ষণ লাভের চেষ্টা করেন। আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইফতারের মাধ্যমে নিজেদের ধর্মপ্রাণ জাহির করার চেষ্টা চালায়। ধর্ম, ইফতার হয়ে ওঠে রাজনীতির হাতিয়ার। এ কারণেই বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ‘ইফতার পার্টি’ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এখনো তারা ইফতার পার্টির উৎসব অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগও ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ইফতারের রাজনীতি শুরু করে। জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারাও সাচ্চা মুসলমান। তবে ভালো কথা হলো, প্রধানমন্ত্রী দুই বছর ধরে এ ভ্রান্ত রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন। রমজান মাস সংযমের, আত্মশুদ্ধির। কিন্তু এ মাসে ইফতার পার্টি, সেহরি পার্টির নামে যা হয় তা শুধু অপচয় নয়, বিলাসিতা নয়, ধর্মেরও অবমাননা। ইফতার পার্টির রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার অবিলম্বে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ইফতার পার্টি তার আরও জৌলুস হারিয়েছে। এর আবেদনও কমে গেছে। এই তো গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) এক পাঁচতারকা হোটেলে জাতীয় পার্টির মহাসমারোহে ডাকা ইফতার পার্টি ফ্লপ হলো। এটি একটি উদহারণ। এভাবে ইফতার পার্টি ক্রমেই রাজনীতিতে গুরুত্বহীন এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে বলে আমি আশাবাদী।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: