মাওলানা মিজানুর রহমান
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৬ এএম
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমল ছোট হলেও নিয়মিত করা চাই

আমল ছোট হলেও নিয়মিত করা চাই

মুমিনের আসল সম্পদ আমল। এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয় পরকালীন জীবন, সুখময় হয় পার্থিব জীবন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে নারী বা পুরুষ ইমানদার অবস্থায় নেক আমল করবে অবশ্যই আমি তাদের উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদের তাদের সর্বোত্তম আমলের প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল : ৯৭)। এজন্য আমাদের উচিত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকির, তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা ইত্যাদি যাবতীয় নেক আমল সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা এবং সর্বাবস্থায় তার ওপর অটল অবিচল থাকা। কেননা এগুলোই একজন মুসলমানের আসল পুঁজি ও প্রকৃত সঞ্চয়।

আমাদের আমলগত অবক্ষয়-অবনতি এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও অনেকে তো নেক আমল করিই না আর যারাওবা একটু-আধটু করি তাও হয় অনিয়মিত ও অনিয়মতান্ত্রিক। অথচ যে কোনো নেক আমল একবার শুরু করার পর তা আমৃত্যু আঁকড়ে ধরা এবং তা পালন করে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাকো, যতক্ষণ না মৃত্যু আসে।’ (সুরা হজ : ৯৯)। দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, শোক-সন্তাপ, বিপদ-দুর্যোগ কোনো কিছুই যেন আমল থেকে দূরে না রাখতে পারে। বরং এসব প্রতিকূল মুহূর্তে আরও বেশি আমলের দিকে ফিরে আসতে হবে এবং ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ওইসব ধৈর্যশীলকে সুসংবাদ দান করো যারা বিপদগ্রস্ত হওয়ার সময় বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্য এবং তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা : ১৫৬-১৫৭)।

নিয়ম মেনে যে কোনো আমল নিয়মিত করা ছিল প্রিয় নবী (সা.)-এর পছন্দের শীর্ষে। হজরত মাসরুক বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজি (সা.)-এর কাছে কোন আমল সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিল? তিনি বললেন, ‘নিয়মিত আমল।’ (বোখারি ৬৪৬১)। আর কেনই বা নিয়মিত আমল তার প্রিয় হবে না, অথচ স্বয়ং আল্লাহতায়ালার কাছেও তা সর্বাধিক প্রিয়। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর কাছে কোন আমল সর্বাধিক প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, ‘যে আমল সর্বদা করা হয়, চাই তা কম হোক।’ (বোখারি : ৬৪৬৫)। আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সত্যের ওপর অবিচল থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা কাউকে তার আমল জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, আপনাকেও না? বললেন, না, আমাকেও আমল জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, আল্লাহতায়ালা আমাকে আপন রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করবেন। মনে রেখো আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দের আমল হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে হয় অল্প।’ (মুসলিম : ২৮১৮)।

অনুকূল-প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে পরিবর্তনশীল অনিয়মিত আমল আল্লাহ এবং তার রাসুলের অপছন্দনীয়। অবস্থা ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে যারা আমল গ্রহণ করে কিংবা বর্জন করে তাদের নিন্দা করে আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা প্রান্তিকভাবে ইবাদত করে; কল্যাণপ্রাপ্ত হলে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে আর বিপদগ্রস্ত হলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা দুনিয়া আখেরাত উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত। আর এটাই হলো বড় ক্ষতিগ্রস্ততা।’ (সুরা হজ : ১১)। অন্যত্র বলেন, ‘যখন মানুষের প্রতি আমি কোনো অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পার্শ্বপরিবর্তন করে দূরে সরে যায়। আবার যখন তাকে কোনো অমঙ্গল স্পর্শ করে তখন সে বনে যায় লম্বা-চওড়া দোয়া প্রার্থনাকারী।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : ৫১)।

যারা নিয়মিত নেক আমল করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত নেক আমলের ওপর অবিচল থাকে তাদের জন্য পবিত্র কোরআনে বড় সুসংবাদ এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা বলেছে, আমাদের রব আল্লাহ! তারপর তারা তাতে থাকে অবিচল, নিশ্চয়ই তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে (এবং বলবে) যে, তোমরা কোনো ভয় কোরো না এবং কোনো কিছুর জন্য চিন্তিত হয়ো না আর আনন্দিত হয়ে যাও সেই জান্নাতের জন্য, যার ওয়াদা তোমাদের দেওয়া হতো।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : ৩০)।

সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) ইবাদত-বন্দেগিতে ছিলেন খুবই আন্তরিক, সচেষ্ট ও নিবেদিতপ্রাণ। সারা দিন রোজা রাখতেন এবং সারা রাত নামাজ পড়তেন। যখন নবীজি (সা.) তার আমল সম্পর্কে অবগত হলেন তখন বললেন, নামাজ-রোজার ব্যাপারে হজরত দাউদ (আ.)-এর কর্মপন্থা সর্বোত্তম। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, একদিন বিরত থাকতেন। অর্ধরাত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ নামাজ পড়তেন, তারপর বাকি অংশ ঘুমাতেন। নবীজির বাণী শুনে আবদুল্লাহ (রা.) এভাবেই নামাজ-রোজা শুরু করলেন; একদিন রোজা রাখতেন, একদিন রোজা ছাড়তেন। রাতের কিছু অংশ ঘুমাতেন, কিছু অংশ ইবাদতে কাটাতেন। নবীজির (সা.) তার ব্যাপারে আশঙ্কা করলেন, হয়তো সে এভাবে আমল ধরে রাখতে পারবে না, তাই তাকে উপদেশ দিয়ে বললেন, হে আবদুল্লাহ, তুমি অমুকের মতো হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকত, কিন্তু তা ছেড়ে দিয়েছে। নবীজির সতর্কবাণী শোনার পর থেকে একদিনের জন্যও আবদুল্লাহ (রা.) রাতের ইবাদত ছাড়েননি। আল্লাহর নবীর ইহধাম ত্যাগের পর রোজা রাখা এবং রাত জেগে ইবাদত করা তার পক্ষে অনেক কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছিল। লোকেরা দয়াপরবশ হয়ে তাকে বলত, আপনি তো অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, তারপরও কেন এত আমল করছেন? তখন তিনি উত্তর দিতেন, নবী (সা.) আমাকে যে আমল করা অবস্থায় রেখে গেছেন, আমি কাল তার সঙ্গে সে আমল ছাড়া অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে অপছন্দ করি। (শরহু রিয়াজুস সালিহিন-আহমদ হাতিবা : ৭/৫৮)।

আল্লাহ সবাইকে নিয়মিত আমল করার তাওফিক দিন।

লেখক: ইমাম ও খতিব

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সালিশের নামে বাড়ি ভাঙচুর, বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার

রাবি ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় জবি ছাত্রদলের হেল্প ডেস্ক

শিগগিরই প্রাথমিকে বড় নিয়োগ হবে, জানালেন উপদেষ্টা

কয়লা ব্যবসার নামে প্রতারণা করতেন তারা

১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে যা উঠে এলো

সাতক্ষীরায় ১৩ কেজি রুপা জব্দ

পুলিশ সদস্যদের যে সুখবর দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আল-আকসা ভাঙার ষড়যন্ত্রে প্রকাশ্যে ইসরায়েল

নিকারাগুয়ায় বিরোধীদের দমন-পীড়ন / ২৫০ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

৬০০ কর্মী নিয়ে মহাসড়কে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা অভিযান 

১০

রাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিবিরের হেল্প ডেস্ক থেকে ফোন চুরির চেষ্টা

১১

স্ত্রীকে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ স্বামীর

১২

সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করতে হবে : এ্যানি

১৩

রাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল

১৪

বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের ৭টি জরুরি টেস্ট

১৫

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ

১৬

পরীক্ষার হলে বসে বন্ধুকে প্রশ্ন পাঠালেন পরীক্ষার্থী

১৭

কেউ ঘুষ চাইলে কী করতে হবে, জানালেন আসিফ মাহমুদ

১৮

নির্বাচন ইস্যুতে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

১৯

কুমিল্লায় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক কারাগারে

২০
X