নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে অন্যরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়লেও মুমিনগণ মাথা অবনত করে মহান আল্লাহর দরবারে। পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই, যার চিকিৎসা আল্লাহতায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামী ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণে হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)। দুশ্চিন্তা ও মানসিক অশান্তি দূর করার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)। আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমি বান্দার সঙ্গে ওই রূপ করি, যে রূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ করা যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ৪৫)। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থ কষ্টে থাকা, সন্তানসন্ততি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা, বেকারত্ব সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি। এর সমাধানে কোরআনের নির্দেশনা হলো ইসতেগফার করা। ইসতেগফারেই মানুষ উল্লিখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। কোরআনে এসেছে, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ)। মিজানুর রহমান