কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪৩ এএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকার

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে

সাবের হোসেন চৌধুরী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী| ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী| ছবি: সংগৃহীত

সাবের হোসেন চৌধুরী বর্তমান সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এর আগে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং ক্রীড়া প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর যৌথ সম্মাননাপ্রাপ্ত স্নাতক। ২০১৪ সালে তিনি ২৮তম আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা, কপ-২৮, উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কালবেলা: কপ-২৮ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী?

সাবের হোসেন চৌধুরী: সম্প্রতি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ শেষ হয়েছে। প্রত্যেকটা জলবায়ু সম্মেলনের পর সবার আগ্রহ থাকে এটা জানার জন্য যে, বাংলাদেশ এ সম্মেলন থেকে কী পেয়েছে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ কী পেয়েছে সেটা দিয়ে কপ সম্মেলন বিচার-বিশ্লেষণ করা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিকভাবে এবং এর সমাধানটিও বৈশ্বিকভাবেই হতে হবে। একটি একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কী পেয়েছে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো সারা পৃথিবী কী পেয়েছে। কারণ পৃথিবী যদি জলবায়ু সম্মেলন থেকে ভালো কিছু পায় তাহলে সেই ভালোর অংশীদার বাংলাদেশও হবে।

কপ সম্মেলনে আমরা যে দরকষাকষি করি, যে আলোচনা করি বা কথা বলি তা একক দেশ হিসেবে নয়। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক প্রক্রিয়ার মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপগুলোর মধ্যে আমরা এলডিসি গ্রুপে অবস্থান করছি। এলডিসি হচ্ছে জি-৭৭ এবং চীনের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ গ্রুপ। যে কোনো সম্মেলনের আগে আমাদের প্রথম কাজ, বাংলাদেশের চাহিদা এবং অগ্রাধিকারগুলো যেন এলডিসি গ্রুপের প্রায়োরিটির মধ্যে চলে আসে সেটা নিশ্চিত করা। গত পরিবেশ সম্মেলনে আমরা এ কাজটি করতে পেরেছি।

আমাদের একটি প্রস্তাব ছিল লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন। এ ফান্ড গঠনের প্রস্তাব সর্বপ্রথম বাংলাদেশই করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর রাজনৈতিকভাবে এ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং আমরা এক বছরের মধ্যে সেই তহবিল থেকে অর্থ পাওয়া শুরু করি। লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৭০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি। যদিও এ অর্থ চাহিদার তুলনায় খুবই কম, তারপরও যে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো সেটাই একটি বড় স্বীকৃতি।

প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি প্রস্তাব ছিল, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এ প্রস্তাবটিও এখন জলবায়ু সম্মেলনের একটি অন্যতম দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে বলা হয়েছিল বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি বা তার নিচে রাখতে হবে। সেখানে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে। আমাদের প্রস্তাবটিই গৃহীত হয়।

আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো অ্যাডাপটেশন ফান্ড। আমাদের প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হচ্ছে শুধু অ্যাডাপটেশনের জন্য। সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। গত অর্থবছরে আমাদের জাতীয় বাজেট থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল অ্যাডাপটেশনের জন্য। অর্থাৎ ২৫টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। এরপরও আমরা সম্পূর্ণ চাহিদা মেটাতে পারছি না। সুতরাং আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছি, সেই ক্ষতিপূরণ কীভাবে আসবে সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

কপ সম্মেলনে দুটি বিষয় থাকে। প্রথম বিষয়টি হলো, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরবর্তী বিষয়টি হলো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবসময়ই আমরা এক ধরনের ঘাটতি লক্ষ করেছি। উন্নত দেশগুলো যে অঙ্গীকার করে তারা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করে না। অনেক আগেই তারা বলেছিল, জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেবে। সেই ১০০ বিলিয়ন ডলারের ৫০ বিলিয়ন ডলার যাবে অ্যাডাপটেশন ফান্ড এবং ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে মিটিগেশন ফান্ডে। কিন্তু তহবিলের প্রায় সম্পূর্ণটাই অবাস্তবায়িত রয়েছে। বলা হয়েছিল অ্যাডাপটেশনের অর্থ অনুদান হিসেবে আসবে কিন্তু সেটাও হয়নি। অ্যাডাপটেশনের অর্থ আসছে ঋণ হিসেবে। এসবের বাইরেও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সবকিছু মিলে আমরা কপ-২৮-এ একটি নতুন পথের কথা বলছি।

এবারের জলবায়ু সম্মেলন অর্থাৎ কপ-২৮-এ প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়টি এসেছে। আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাব। এ ছাড়া আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব সেটাই আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ।

কালবেলা: জলবায়ু তহবিলের কী অবস্থা?

সাবের হোসেন চৌধুরী: অনেক দেশ এবং অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জলবায়ু তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসছে। যেমন এডিবি, বিশ্বব্যাংক, ব্রিটেন সরকারের তহবিল, ফ্রান্সের তহবিল। এসব তহবিলকে একটি একক প্ল্যাটফর্মে আনা যায় কি না, তার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে। ছোট ছোট জলবায়ু তহবিলগুলো একত্রিত হলে এ তহবিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে এ ধরনের একটি উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবছর যদি আমরা ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আনতে পারি, তাহলে আমাদের এখনকার অ্যাডাপটেশনের ঘাটতি পূরণ করতে পারব। আমি আশা করব বর্তমান সরকার এ বিষয়টাকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করবে।

কালবেলা: বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতি জলবায়ু ফান্ডের অর্থ দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব কি?

সাবের হোসেন চৌধুরী: আমরা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখছি তা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলাফল মাত্র। ১.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে যদি আমরা এ ধরনের সংকটে পড়ি তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে আমরা কী ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব, তা চিন্তা করাও কঠিন। বর্তমানে সারা বিশ্ব যেভাবে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলছে, সেই অনুযায়ী চললে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২০৫০ সাল নাগাদ ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। আমাদের প্রস্তাবিত ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিও সুখকর নয়। এখানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হব আমরা। আর তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি এর থেকেও বেশি হয়ে যায় তাহলে সবকিছুই লস অ্যান্ড ড্যামেজের মধ্যে চলে যাবে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় অস্বাভাবিক বন্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা যাচ্ছে এবং আরও দেখা যাবে। আমরা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে এ কথাটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শুধু আমরা নয়, তারাও ভুক্তভোগী হবে। এজন্য পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সর্বপ্রথম তাপমাত্রা কমানোর বিষয়টিতে নজর দিতে হবে।

কালবেলা: কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংকটের পেছনে আমাদের নিজেদের তো দায় রয়েছে...

সাবের হোসেন চৌধুরী: অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরও অনেক কিছু করার রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যে কথাগুলো বলি, যে কাজগুলোর জন্য আমরা উন্নত বিশ্বকে দায়ী করি, সেই একই কাজ বাংলাদেশে আমরা করতে পারি না। আমরা যদি সেই একই কাজ করি তাহলে সেটা দুঃখজনক হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বলি, যে দূষণ করছে তাকেই দূষণের দায়িত্ব নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বলা সেই কথাটি আমাদের বাংলাদেশেও নিশ্চিত করতে হবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষের বিষয়টি নয়, বরং আরও অনেক পরিবেশ দূষণের বিষয় রয়েছে। সাভারে আমাদের চামড়া শিল্প রয়েছে, যেটা আমরা হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করেছি। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। সুতরাং নিজের দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের অনেক বেশি যত্নশীল ও আরও সচেতন হতে হবে।

আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশের চেহারা কী হবে সেটা অনেকটা নির্ভর করছে আমরা উন্নয়নের মধ্যে টেকসই ধারাটা কীভাবে বজায় রাখব তার ওপর। শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, সেটা টেকসই উন্নয়ন হতে হবে। উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, জীববৈচিত্র্য এবং বন রক্ষা করতে হবে। উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস করা যাবে না। একটি সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে রেললাইন বা রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না।

কালবেলা: আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। তারা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে?

সাবের হোসেন চৌধুরী: আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের মতো করে চেষ্টা করে। সেখানে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমরা সেখানে নতুন অর্গানোগ্রাম নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে বদ্ধপরিকর। তারপরও কখনো কখনো দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আইন ভঙ্গ করে। আমরা যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আইন সম্পর্কে সচেতন করতে না পারি, তাহলে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আমরা পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। আমি চামড়া শিল্পের কথা বললাম যেটা সরকারি সংস্থা বিসিকের অধীনে। সরকারি সংস্থাগুলোকে আগে আইন মেনে চলতে হবে। সুন্দরবন এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলও কোনো না কোনো সরকারি সংস্থার অধীনে।

কালবেলা: বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশ যে সংকটজনক অবস্থার মুখে দাঁড়িয়েছে, তার থেকে উত্তরণের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা রয়েছে কি?

সাবের হোসেন চৌধুরী: আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এখন আমাদের কাজ হলো সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা। আমরা যখন পরিকল্পনা করি তখন তা হয় খুবই আকর্ষণীয়, প্রেজেন্টেশনগুলোও ভালো হয়। যেমন আমাদের মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান রয়েছে, যেটা অসাধারণ একটি উদ্যোগ। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই। ভালনারেবিলিটি থেকে রেজিলিয়ন্স, রেজিলিয়ন্স থেকে আমরা সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা যদি এ ধরনের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক সমস্যা অ্যাড্রেস করতে পারব।

দ্বিতীয়ত, আমাদের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় থাকতে হবে। আমাদের এনবিসি রয়েছে, ন্যাপ রয়েছে, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান রয়েছে। এসব প্ল্যানের মধ্যে অনেক ইন্টারভেনশনের কথা রয়েছে। শুধু ন্যাপের মধ্যে ১১৩টি ইন্টারভেনশন রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজাতে হবে যে কোনটা আমরা আগে করব। এ সমন্বয়টাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা যে অর্থ ব্যয় করি সেটা শুধু কত টাকা বরাদ্দ হলো আর কত টাকা ব্যয় করলাম তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না।

টাকা ব্যয় করে আমরা কী ধরনের ফল পেলাম সেটা যাচাই করতে হবে। আমরা যখন কাজ করি তখন মান নিয়ে চিন্তা করি না। পরিকল্পনা গ্রহণ করার সময় আমাদের পরিষ্কার করতে হবে যে, এতটুকু ফলাফল নিশ্চিত করা চাই। অর্থাৎ পরিকল্পনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও ফলাফল যাচাই করলেই শুধু লক্ষ্যটি কার্যকর হয়।

কালবেলা: আপনারা টানা চতুর্থবারের মতো সরকারের দায়িত্বে এসেছেন। এবার আপনারা কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন?

সাবের হোসেন চৌধুরী: নির্বাচনে আমাদের যে ম্যানুফেস্টো ছিল সেটাই আমাদের অঙ্গীকার। সংবিধানের ১৮-এর ক ধারায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। এ ধারাটি রয়েছে সরকার পরিচালনার মূলনীতিগুলোর মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশে আমরা যেই নীতি গ্রহণ করি না কেন, যে ধরনের বরাদ্দ দিই না কেন, সবকিছুকেই এই ১৮-ক এর চশমা দিয়ে দেখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু মৌলিক অধিকারের কথা বলে গিয়েছিলেন। সেগুলো আমাদের সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এ মৌলিক অধিকারগুলোকে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমি উন্নয়ন বলতে শুধু মেগা প্রজেক্টকে বুঝি না। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও সমৃদ্ধ করতে মেগা প্রজেক্টের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমাদের সেই ধরনের উদ্যোগের কথা চিন্তা করতে হবে, যা সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের সেই ধরনের প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে আরেকটু গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সাধারণ মানুষের চাহিদার দিকে আমাদের যত্ন দিতে হবে। মেগা প্রজেক্টের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও দৃষ্টি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি, মাদক এগুলোকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল করতে না পারলেও যথাসম্ভব কমাতে হবে। আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিবছর চাকরির বাজারে নতুন করে ২০ লাখ যুবক প্রবেশ করছে। তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করতে যা যা করা দরকার তার সবই করতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি। সেখানে আমরা মূলত আধুনিক প্রযুক্তিকে পুঁজি করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে চাই। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ যেন এই এগিয়ে যাওয়ার সুফল ভোগ করে। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওএমএস পণ্য জালিয়াতিতে এক ডিলারকে ১ মাসের কারাদণ্ড

সিগারেট করকাঠামোয় সংস্কারে রাজস্ব বাড়বে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে অগ্নিকাণ্ড

বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ : প্রিন্স

শিশু সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা

চট্টগ্রামে পিডিবি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

সিলেটে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক আর নেই

৯ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় থানা ঘেরাও

দুই মাসে সংখ্যালঘু হামলার ঘটনা ৯২টি : ঐক্য পরিষদ

১০

১৩ মার্চ ‘আছিয়া দিবস’ পালনের প্রস্তাব জামায়াত আমিরের

১১

আছিয়া হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষোভ

১২

৬ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াবে ডিএনসিসি

১৩

চৌদ্দগ্রামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

১৪

ঢাকা কলেজে ছাত্রশিবিরের ইফতার উপহার বিতরণ

১৫

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির আয়োজনে গ্র্যান্ড ইফতার ও মেজবান

১৬

কারখানায় ‘ভূত’ আতঙ্ক, অসুস্থ ১৫

১৭

জনগণের শক্তিতেই ক্ষমতায় আসবে বিএনপি: নীরব

১৮

বরখাস্তকৃত এসপির হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

১৯

ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে থাকতে চাই : জবি উপাচার্য 

২০
X