বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০ চৈত্র ১৪৩১
অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫২ এএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতি ফিরুক আপন গতিতে

রাজনীতি ফিরুক আপন গতিতে

রাজনীতি নিয়ে লেখা আর বলার এখন কোনো মানে দাঁড়ায় কি না, বোঝা মুশকিল। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, আসর কি জমে উঠছে? আমরা দেশের বাইরের থাকি। আমরা দূর থেকে যা দেখি তা হয়তো আবছা। কিন্তু স্পন্দন টের পাই। দেশ সবার মা। যে বা যারা বাংলাদেশে জন্মেছেন, তাদের সবার অধিকার আছে এই দেশের ওপর। সঙ্গে দায়িত্বও আছে বৈকি। মুশকিল হচ্ছে, আমরা অধিকার ফলা, দায় নিই না। আজকের বাংলাদেশে রাজনীতির এ সুরত হালের পেছনে প্রবাসীদের অবদান কম নয়। খালি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করার মানুষজন আরও অনেক কিছু পাঠাতে পারত; যা তারা করেননি।

কী তারা পাঠাতে পারতেন? এই যে আমরা যারা গণতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করি, আমরা কি আসলেই এসব দেশের নিয়মকানুন মানি বা বুঝি? মানার বিষয়ে যারা তর্ক করবেন তাদের বলি, জরিমানা আর শাস্তির ভয়ে আইন মানা, গাড়ি ঠিকভাবে চালানো কিংবা সমাজে শান্তি বজায় রাখা ভিন্ন বিষয়। আমি বলছি যে গণতন্ত্র মানবাধিকার আর উদার জীবন আমরা যাপন করি তার এক ভাগও দেশে পাঠাইনি আমরা। না পাঠানোর কারণ আমাদের জীবন ভরে আছে দ্বিচারিতায়। আমরা চেটেপুটে এসব দেশের আগপাশতলা ভোগ করলেও ভেতরে কিন্তু অন্ধ। সম্প্রদায় ধর্ম বা অন্য অনেক কারণে আমাদের এই অন্ধত্ব মূলত জাতিগত সমস্যা। সে কারণে দিন দিন উগ্রতা সর্বত্র বেড়েছে। দেশে আমাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী কাউকে আমরা বলিনি, জানাইনি যে আমরা কীভাবে ভোট দিই। কীভাবে রাজনীতির মানুষজন নেতারা সমাজ আর জনগণের কাছে নতজানু থাকে। এটা মানি, আমাদের কথায় খুব কিছু একটা হবে না। কিন্তু চেষ্টাও করা হয়নি।

বাংলাদেশের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, তত পরিবেশ কঠিন হয়ে ওঠে। এটা নতুন কিছু না। যে দেশে বিরোধী দল মানেই আগুন সন্ত্রাস, বিরোধী মানেই কোমর কেচে নাশকতা করা, সে সমাজে শান্তি কোথায়? শুধু একদল বা একচোখা হলে হবে না। লগি-বৈঠার কথাও মনে আছে আমাদের। সবসময় যারা বিরোধী দলে তারা মনে করে তাদেরই জেতার কথা। তাদের ঠকানোর জন্য সরকার ও রাষ্ট্র ওতপেতে আছে। অথচ মজার বিষয় এই যে, এরা দেশদ্রোহী বলে গণ্য হয় না। দেশবিরোধী বলে গণ্য হন হককথা বলা মানুষজন। আজকের বাংলাদেশে গুণীজন নামে পরিচিতদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যোজন যোজন। সত্যি এই যে, স্তাবক আর পতাকাবাহী লোকজন ছাড়া বাকিরা হয় দূরে নয়তো অস্পৃশ্য। এই দূরত্ব যে শূন্যতা তৈরি করে ফেলেছে, তার পরিণাম ভয়াবহ।

বলছিলাম নির্বাচনের আগে যেভাবে নাশকতা হচ্ছে তার সঙ্গে নৈরাজ্যের দূরত্ব কতটা? একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে অনেক কিছু হতে পারত না। কিন্তু মৃতবৎসা রাজনীতি তা হতে দেয়নি। এই যে নির্বাচন এবং ভোটাভুটি, এই খেলা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে এবং হবে। আমরা বাইরে থেকে যা বুঝি তার মানে এই, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যতটা এগিয়েছে, গণতান্ত্রিক ও সমাজগত উন্নয়নে তা পারেনি। নেতাদের কথাই ধরি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বাদ দিলে তার দলেই আস্থার প্রতীক কে? কাকে ভরসা করবে মানুষ? যারা নৌকা মার্কা পেয়েই নিজেদের জয়ী বলে ধরে নিয়েছে, তাদের নিজেকে প্রস্তুত করার দরকার কী, বা করবেই বা কেন? যে কোনো দেশে বিশেষত আমাদের উপমহাদেশের মতো দেশগুলোতে নায়ক-গায়ক-খেলোয়াড়রা ভোটে দাঁড়ান। ভোটযুদ্ধে জয়ী হন। কিন্তু আমাদের সমাজে দাঁড়ালেই হয়। জয়-পরাজয় নির্ভর করে তিনি কোন দল বা কোন পার্টির হয়ে লড়ছেন তার ওপর। এই জাতীয় ভোটে আর যাই থাক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে না। যে খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সে খেলার ফলাফল কী হতে পারে, সেটা সবাই জানে। আর জানে বলেই কারও মাথাব্যথা নেই।

জাতীয় পার্টি নামে একনায়ক এরশাদের যে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর’-এর দল তাদের এবারের ভূমিকা তো এরশাদকেও হার মানাচ্ছে। নির্বাচন করা বা না করার সিদ্বান্ত তবু কিছু একটা বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু তারা বলছে তাদের বিরুদ্ধে নাকি কোনো প্রার্থী দেওয়া যাবে না। আসলে প্রার্থী তারা চায় তবে তা কলাগাছ। খুব একটা দোষের কিছু দেখছি না। কারণ তাদের ভয়ের জায়গাটা অমূলক নয়। যে দল বা মার্কার লোকদের তারা ভয় পাচ্ছে, তার কারণ আমাদের সবার জানা। তারা কেউ মাঠে থাকলে জয়ীকে পরাজিত বলতে সময় লাগবে না। ফলে তারা লজ্জার মাথা খেয়ে নিজেদের আসন ঠিক রাখতে চাইছে।

সরকারি দলের উদ্দেশ্য অসৎ নয়, গত দুই দফার নির্বাচন প্রশ্নবোধক হওয়ার কারণে চাপ বেড়েছে। বিশেষত আমেরিকার মতো দেশের চাপ থাকলে একটা গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন করানো দায়িত্ব হয়ে ওঠে। কিন্তু আমেরিকার যেসব কথা বা কাজ, তার একটাও হতো না, হতে পারত না। যেমনটা প্রথমদিকে পারেনি। উন্নয়ন আর অবকাঠামোর অগ্রগতির সঙ্গে যদি মানুষের মন ভাষা কথা বলা আর স্বাধীনতা আশ্রয় পেত, এত সমস্যার জন্ম হতে পারত না। এগুলো সবাই জানেন কিন্তু মানেন না। আর যারা মানেন, তারা অসহায়।

দূর দেশ থেকে বুঝি বাংলাদেশ আর্থিকভাবে উৎপাদনশীলতায় এগিয়েছে। কিন্তু সমাজ এগোতে পারেনি। তার অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে আছে। যে নেতা বা যেসব নেতা থাকলে দেশের রাজনীতি ঠিক পথে এগোত তাদের অনেকেই আজ পরপারে। তাজউদ্দীন আহমদের কথা মনে করি। যিনি নিজ দল থেকে অপসারিত হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব হারানোর দিন বন্ধুর গাড়ি চড়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। বাড়ি গিয়েই বাসার পতাকা নামিয়ে ফেলে নিজ অস্তিত্ব নিয়েই ছিলেন। সে সময়কালে তার একটি গাড়িও ছিল না, যাতে চড়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারত। সেই মানুষটি তারপরও বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে, রাজনীতির সঙ্গে বেইমানি করেননি। বরং নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে দলীয় ঐক্য আর আদর্শের বিরল নজির রেখে গেছেন। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার ভাষণেই বলেছেন, সংখ্যায় একজন হলেও তিনি যে কারও ন্যায্য কথা মেনে নেবেন। এর চেয়ে বড় গণতন্ত্রের আর কী ভাষা থাকতে পারে?

আমরা আশা করি রাজনীতি এবারের নির্বাচনের পর তার আপন গতি ফিরে পাবে। যেসব নাশকতা হচ্ছে তা বন্ধ হবে। এটা মানতে হবে, নাশকতাকারীরা দেশ ও জনগণের দুশমন। তাদের এসব দেশবিরোধী কাজকর্ম সাপোর্ট করা অন্যায়। কিন্তু ভোটের রাজনীতি চালু না হলে আর নির্বাচনী বৈতরণী পার না হলে কেউই তা ঠিক করতে পারবেন না। গণতান্ত্রিক সমাজ ও দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনে যে দেশ ও সমাজের ছবি তার উদ্বোধনটা অন্তত হোক এবার, তাতেই সবার মঙ্গল।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার, সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিকে মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে

সভাপতিকে মারধর করায় ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

কাল বিটিভিতে রশীদ সাগরের উপস্থাপনায় ‘প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গান’

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিড গান ব্যবহার করছে হাইওয়ে পুলিশ

ঈদ আনন্দ মিছিলে মূর্তি প্রদর্শনী নিয়ে জামায়াতের বিবৃতি

আমরা সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকি : যুবদল নেতা আমিন

ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নামতে হবে : বকুল 

ফুচকা খেয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩

বিএনপি নেতা খুনে গ্রেপ্তার ৪, পুলিশের সংবাদ সম্মেলন 

১০

মসজিদের সাইনবোর্ডে ভেসে উঠল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

১১

চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের ঈদ পালনে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি

১২

মামলা নেন না ওসি, বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কৃষক

১৩

অবসরের পর কী করবেন, জানালেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম

১৪

উৎপাদন খরচ উঠছে না পোলট্রি খামারিদের : বিপিএ

১৫

‘স্বৈরাচার সরকার ক্রীড়াঙ্গনকে দলীয়করণ করেছিল’

১৬

ধানক্ষেতে পানি দেওয়া নিয়ে কোন্দল, কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

১৭

ওলমোর বিতর্কিত নিবন্ধন নিয়ে আবারও বিপদে বার্সা

১৮

ছোট্ট মেয়েটি এখনো জানে না তার মা-বাবা বেঁচে নেই

১৯

উন্নত জাতি গঠনে মেধা বিকাশের বিকল্প নেই : অধ্যাপক ছারোয়ার

২০
X