বদিউল আলম মজুমদার; অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর বাংলাদেশি শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
কালবেলা: গতকাল ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের বৃহৎ তিনটি রাজনৈতিক দল ঢাকায় সমাবেশ করেছে। আমরা দেখেছি, সহিংসতার কারণে বিএনপির সমাবেশ সম্পূর্ণ হয়নি। প্রতিবাদে আজ ২৯ অক্টোবর হরতাল ডেকেছে দলটি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন আপনি?
বদিউল আলম মজুমদার: প্রথমেই আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই। মানুষের শরীরে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। আর সেই প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। সেখানে আমরা এক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভূমিকা আরেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করলে সমস্যা অনিবার্য। ঠিক তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্রেরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অনেক পক্ষ রয়েছে।
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান বা পক্ষের আলাদা আলাদা দায়িত্ব বা ভূমিকা থাকে। কেউ তার ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন সরকার-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সবই সরকারের অংশ। বৃহৎ অর্থে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ সবই সরকারের অংশ। তবে মূলত নির্বাহী বিভাগই সরকার। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে যারা যুক্ত প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কিছু সুস্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা কোনো ব্যক্তির স্বার্থে নয়, কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, কোনো দলের স্বার্থে নয় বরং জনগণের স্বার্থে কাজ করবে। তারা যখন এই ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করার কারণে দেশ একটি সংকটজনক অবস্থায় এসে ঠেকেছে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল ‘দিনবদলের সনদ’ নামক একটি নির্বাচনী ইশতেহার সামনে রেখে। তখন তাদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণের অবসান ঘটানো হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনা হবে ইত্যাদি। কিন্তু সেটা হয়নি বরং দলীয়করণ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দল এবং সরকারের মধ্যে যে পার্থক্যটা প্রয়োজন সেই পার্থক্যটা এখন আর নেই। ফলে একটি বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি পক্ষপাতদুষ্ট না হতো তাহলে যেসব অপকর্ম হয়েছে তা হতো না।
নাগরিকের কিছু অধিকার থাকে। চলাফেরার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার, রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিং করার অধিকার। এগুলোতে হস্তক্ষেপ করার মানে হলো মৌলিক অধিকারের হস্তক্ষেপ করা। গতকাল আমরা দেখেছি, বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ যদি একইভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকের বিরুদ্ধেও একই কাজ করত তাহলেও হয়তো কিছুটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি। অর্থাৎ পুলিশ-প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। দৃশ্যমানভাবেই আমরা এসব পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখেছি। এগুলো নিঃসন্দেহে উসকানিমূলক। আর পরোক্ষভাবে তারা আরও কত পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে আমরা তা জানি না। সহিংসতার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায় কতটুকু আমাদের কাছে তার কোনো তথ্য নেই।
কালবেলা: এ মুহূর্তে সরকার ও বিরোধী দলের করণীয় কী?
বদিউল আলম মজুমদার: এই মুহূর্তে আমাদের যেটা প্রয়োজন তা হলো- যা ঘটেছে সেটা যেন আর সামনের দিকে না বাড়ে সেটা নিশ্চিত করা। শুরুতেই সহিংসতা থামাতে কাজ করা দরকার। কারণ রাজপথের সহিংসতা বেসামাল হতে পারে। আর সেই সহিংসতার পরিণতি কী হবে তা কেউ বলতে পারে না। সহিংসতায় বিএনপিকে দোষী করা হবে, হয়তো বিএনপির দায়ও রয়েছে। কিন্তু মাশুল সরকারকেই বেশি দিতে হবে।
পরিস্থিতি যদি আরও জটিল হয় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। ১/১১ ঘটেছিল এসব কারণেই। আবারও যদি বড় আকারের সহিংসতা ঘটে তাহলে হয়তো আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তিও ভূমিকা রাখার জন্য এগিয়ে আসতে পারে। যেটা কারও জন্যই মঙ্গলকর নয়। আমরা বহু বছর পর হরতাল দেখছি মানুষের মধ্যে একটি ভীতি কাজ করছে, একটি ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে। তাতে মানুষ আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। মানুষ এমনিতেই সরকার এবং শাসকগোষ্ঠীর ওপর তাদের ভোটাধিকার হরণের কারণে ক্ষুব্ধ। সরকার অনেক কাজ করছে যা কোনোভাবেই সঠিক নয়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়া ১৮ কোটি মানুষের অধিকার। এই ভোটাধিকার পাওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। গত এক যুগ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন ছিল ব্যর্থ এবং একটি ছিল ব্যাপক কারচুপির নির্বাচন।
মানুষ আগামী নির্বাচনেও যে ভোটাধিকার পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ অতীতে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে তার কোনো অঙ্গীকারই রাখা হয়নি। সরকারের দাবি অনুযায়ী, এখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রশাসনও সরকারের অনুগত। কিন্তু এসব করে শেষ বিচারে আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমরা পুরো জাতি একটি গভীর খাদে পড়ে যাব।
কালবেলা: অনেকদিন পর আবারও সহিংসতার রাজনীতি ফিরে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
বদিউল আলম মজুমদার: বাস্তবতা হলো, এই পরিস্থিতিটা এড়ানো যেত যদি সরকার আগ্রাসী ভূমিকায় না থাকত। সরকার যে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে তার কোনো দরকার ছিল না। বিএনপি সমাবেশ করত, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করত এবং চলে যেত। এখানে কোনো সহিংসতা ঘটত না। কিন্তু আমরা দেখেছি সরকার গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। তারা বিএনপিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। মানুষ যখন যুক্তিতে পারে না তখন তারা গলা উঁচিয়ে কথা বলতে থাকে। ঠিক তেমনি এখানে সরকারের যুক্তি দুর্বল।
সরকার যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সেখানেও তারা পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছে। দেশের মানুষ যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তাতে সরকার দুর্বল অবস্থানে চলে গেছে। আমি মনে করি, সরকারের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক কাজ হবে আলোচনার টেবিলে বসা। জনগণের স্বার্থে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে একই সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা ফোঁটা রক্তের ঋণ শোধ করার স্বার্থে একটি সহজ উপায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা জরুরি। সবাই সমঝোতার কথা বলছেন, আমরা সারা দেশে অনেক সংলাপ করেছি। সেসব সংলাপে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ব্যবসায়ী নেতারা ছিলেন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন, তরুণরা ছিলেন। সবাই একবাক্যে নিঃশর্তভাবে সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছেন।
মানুষ আশা করে সংলাপ, মানুষ আশা করে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা। আর এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।
কালবেলা: ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আমরা দেখেছি, সরকার আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে কিন্তু এবার সে ধরনের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না কেন?
বদিউল আলম মজুমদার: কারণ সরকার হয়তো মনে করছে তারা জোর করে একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারবে। সরকার মনে করছে তারা এখন আরও অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে। কারণ তাদের দল, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাকার হয়ে গেছে। এ ছাড়াও গত ১০-১২ বছরে সরকারের অনুগত একটি অনুগ্রহ ভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা সরকারের সঙ্গেই রয়েছে। কিছু বিদেশি শক্তিও সরকারের পক্ষে রয়েছে। ফলে সরকার নিজেকে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে মনে করছে।
কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না- এই বিষয়গুলো কখনোই শক্তিশালী অবস্থান নয়। শক্তিশালী অবস্থান হলো দেশের মানুষ, দেশের জনগণ। মানুষ যদি তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে তাহলে শেষটা পার পাওয়া যায় না। এখন হয়তো মানুষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বা বিভিন্নভাবে দমন করা যাবে। মানুষকে প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখা যাবে। কিন্তু সবকিছুরই একটি শেষ রয়েছে।
তাই, আমি মনে করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাহসিকতা প্রদর্শন করবে, তারা প্রজ্ঞা প্রদর্শন করবে। তারা এগিয়ে আসবে এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছার চেষ্টা করবে। যুদ্ধক্ষেত্রেও নেগোসিয়েশন হয়। সংলাপের বিকল্প শুধু সংলাপই।
কালবেলা: দুই দলের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখেছি। দেখেছি পরস্পরকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা। আমরা এ অবস্থা থেকে বের হতে পারছি না কেন?
বদিউল আলম মজুমদার: আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সব ধ্বংস হয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়ানক যে জিনিসটি ঘটেছে তা হলো মূল্যবোধের অবক্ষয়। অন্যায়, অসততা, অনিয়ম, অনাচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অবক্ষয় সর্বব্যাপী হয়ে গেছে। সরকারি দলের মধ্যে তো এগুলো রয়েছেই, পাশাপাশি এটি বিরোধী দলের মধ্যেও সংক্রমিত হয়ে গেছে। ন্যায় নীতিবোধ, সততা, মূল্যবোধ এগুলো মানুষের কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এগুলো ঠিক করতে আমরা যত দেরি করব এগুলো ততটাই দুরূহ হয়ে পড়বে। এই মূল্যবোধের অবক্ষয় এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি। একটি দুর্বৃত্তায়িত সমাজে সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে টিকে থাকা প্রায় দুরূহ।
আমরা যদি আমাদের এখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকে তাকাইÑ যোগ্যতা, সততা, সত্যবাদিতা এসব গুণাবলি কি আমরা তাদের মধ্যে দেখতে পাই? কতজন জনকল্যাণে নিবেদিত? এই অবস্থা দিনে দিনে আরও বেশি খারাপ হবে। সুতরাং আমরা যত দ্রুত এগুলোর সমাধানের উদ্যোগ নেব ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
কালবেলা: ১৯৯১ বা ১৯৯৬ সহ অন্যান্য সময়ের সংকট মুহূর্তগুলোতে বিদেশিদের এক ধরনের ভূমিকা ছিল মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে। এবারও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু সুফল আসছে না কেন?
বদিউল আলম মজুমদার: আপনি যদি সমঝোতা করতে না চান তাহলে কেউই আপনার ওপর তা চাপিয়ে দিতে পারবে না। আমাদের তো নিষ্পত্তির আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। ১৯৯৬ সালে তখনকার সংকট প্রেক্ষিতে একটি দল নির্বিশেষ আকাঙ্ক্ষা ছিল সংকট অবসানের জন্য। তখন সরকারের পক্ষ থেকেই কমনওয়েলথের মহাসচিবকে অনুরোধ করা হয়েছিল একজন প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য। তিনি প্রতিনিধি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টিফেনসকে পাঠিয়েছিলেন।
সেই প্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে সংলাপ হয়েছিল, আলোচনা হয়েছিল কিন্তু সমাধান হয়নি। সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শেষ মুহূর্তে সেই সমাধান হয়নি। ২০১৪ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব এর পক্ষ থেকে অস্কার তারাঙ্কো নামের একজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। সমাধান করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম একটি উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশিরা যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে তেমনি তারা বিভিন্নভাবে অভিযুক্তও হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে খুব সহজেই সমাধান হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথাÑ আগে আমাদের সমাধান চাইতে হবে।
আমরা যদি রাজপথে সমস্যার সমাধান করতে চাই সেটা হবে না। রাজপথে কোনোকিছুর সমাধান হয় না। আমরা ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করিনি। রাজপথে সমাধান করতে চাইলে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়, পরিস্থিতি আরও জটিল হয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জাতি হিসেবে আমরা গভীর খাদে পড়ে যেতে পারি এবং এতে সরকারি দল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কালবেলা: আমরা আগেও দেখেছি, পরিস্থিতি খারাপ না হলে আলোচনার টেবিলে বসতে দেখি না...
বদিউল আলম মজুমদার: কারণ আমাদের রাজনীতিটা এখন অপরাজনীতিতে পরিণত হয়ে গেছে। রাজনীতি একটি আলাপ-আলোচনা, মতবিনিময়, ছাড় দেওয়া, সমাধান খোঁজার প্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের রাজনীতি হয়ে গেছে মারামারি, রাজপথে হানাহানি এবং সহিংসতার একটি প্রক্রিয়া। এগুলো আমাদের রাজনীতিবিদদের সীমাবদ্ধতা। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা যদি নিজেরাই এই অবস্থার থেকে সমাধান না চাই তাহলে কেউ এসে আমাদের সমাধান করে দিয়ে যেতে পারবে না।
বল মূলত এখন আমাদের কোর্টে। আমি আশা করি, আমাদের রাজনীতিবিদগণ প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও দেশাত্মবোধের পরিচয় দেবেন এবং আমাদের ১৮ কোটি মানুষকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন। তারা সংলাপে বসবেন, সমঝোতায় পৌঁছবেন এবং বিরাজমান সমস্যাগুলোর একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানে উপনীত হবেন।