এম এম মুসা
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:২৭ এএম
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় বিদেশিরা

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সদস্য শামা ওবায়েদ। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সদস্য শামা ওবায়েদ। ছবি : সংগৃহীত

শামা ওবায়েদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সদস্য। বিএনপির বর্তমান রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।

কালবেলা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

শামা ওবায়েদ: বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সব পরিস্থিতিই ভয়াবহ। আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় রয়েছে, যা বাংলাদেশকে বড় সংকটের দিকে নিয়ে গেছে। এ বাস্তবতায় বিএনপিসহ কোনো বিরোধী দল আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে না। জনগণ নির্বাচনে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে না।

আমাদের প্রথম কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে সব অংশীদার এবং জনগণ। শুধু একটি নির্বাচন হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, বিষয়টি তা নয়। তবে সমাধানের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হবে। আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রথমত, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সে কারণেই নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। আমরা সেই নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে রয়েছি। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। তার পরই নির্বাচন।

কালবেলা: নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আপনারা নির্বাচন অংশ নেবেন কি?

শামা ওবায়েদ: নির্বাচন কমিশন সরকারের তল্পিবাহক ও আজ্ঞাবহ একটি সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। জনগণের ট্যাক্সের পয়সা খরচ করে এমন নির্বাচন কমিশন রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। নির্বাচন কমিশনের একটা সাব-অফিস গণভবনের রাখলেই তো হয়। আসলে নির্বাচন কমিশন কী বলল না বলল, তাতে জনগণের কিছু যায় আসে না। কারণ নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো কিছু নির্ভর করে না। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা যে, আমাদের স্বাধীন, শক্তিশালী এবং মেরুদণ্ডওয়ালা নির্বাচন কমিশন নেই। যেহেতু নির্বাচন কমিশন সরকারের ওপর নির্ভরশীল, তাই সরকার যা বলবে নির্বাচন কমিশনকে তাই করতে হবে। বিএনপি আন্দোলনে থাকবে। যতক্ষণ না জনগণের ভোট নিশ্চিত হচ্ছে, যতক্ষণ না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দায়িত্ব আসছে, ততক্ষণ জনগণ নিজেরাই ভোট দিতে যাবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কি বিএনপির অধীনে নির্বাচনে যেতেন? কখনোই যেতেন না। সেজন্যই তারা ’৯৬ সালে হরতাল করেছে, বাস পুড়িয়েছে, মানুষ মেরেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তারা এসব করেছে। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য খালেদা জিয়া সংবিধান পরিবর্তন করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনি নতুন করে নির্বাচন করেছিলেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। ইতিহাস সাক্ষী, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর যে দলটি তিন টার্মে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কালবেলা: যদি নির্বাচন হয়েই যায়, তখন আপনারা কী করবেন?

শামা ওবায়েদ: আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারব না। তবে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যতটুকু বুঝি—একপক্ষীয় নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় এলে সেই সরকার গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ সেটা মেনে নেবে না। ২০১৮ সালের মতো আবারও একটি নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ হবে এবং জনগণ সেটা বসে বসে দেখবে, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর হতে দেবে না।

কালবেলা: আপনাদের পরবর্তী কর্মসূচিগুলো কী হতে পারে?

শামা ওবায়েদ: সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। সেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের কর্মসূচি ছিল এবং তা এখনো চলছে। আমরা এখনো আন্দোলনে রয়েছি। নতুন কর্মসূচি আবার ঘোষণা হবে। আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি দেবেন। বিএনপির আন্দোলনের ট্রাম্প কার্ড হলো জনগণ। আর এই জনগণকেই শেখ হাসিনা ভয় পান।

কালবেলা: আওয়ামী লীগ বলছে আপনাদের আন্দোলনে কর্মী রয়েছে জনগণ নেই...

শামা ওবায়েদ: আওয়ামী লীগ তাদের সমাবেশে বিরিয়ানি, পোলাও, খিচুড়ি খাইয়েও কর্মীদের রাখতে পারছে না। সামনের গেট দিয়ে সমাবেশে মানুষ প্রবেশ করে পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে যায়। তারা হতাশা থেকে বলছে, বিএনপির আন্দোলনে জনগণ নেই। ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজেই ক্ষেপে যান তাদের সমাবেশে লোক না দেখে।

বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় কখনো ২৪ ঘণ্টা, কখনো বা ১২ ঘণ্টা আগে। মাঝেমধ্যে অনুমতি দেওয়া হয় তিন ঘণ্টা আগে। এই এক দিনের নোটিশে বা তিন ঘণ্টার নোটিশে আমাদের সমাবেশে যে পরিমাণ জনসমাগম ঘটে, তাতেই সরকার ভয় পায়। ২৮ আগস্ট পল্টনে আমাদের সমাবেশে যে পরিমাণ জনসমাগম ঘটেছে, সেটা সরকারি হিসাবেই ১০ লাখের বেশি।

আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোয় ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। এসব সমাবেশে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছে। গণমিছিল ও পদযাত্রার সময় দেখছি, রাস্তার দুই ধারের দোকানপাট থেকে লোকজন বেরিয়ে হাততালি দিতে দিতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। এগুলো সরকারও দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সত্য স্বীকার করতে চাইছে না।

কালবেলা: সরকারের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করছেন, কিন্তু সরকারের ভেতরে কোনো চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সব কাজ ঠিকমতোই চলছে...

শামা ওবায়েদ: সরকার খুব ভালো করেই জানে, যখনই তারা বিএনপির কথা শোনা শুরু করবে, তখন থেকেই তাদের পতন শুরু। এজন্য তারা বিএনপির কথা শুনবে না বা না শোনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, সেটা স্বাভাবিক। সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের কোনো ভিত্তি নেই।

বাংলাদেশের জন্য যখন অন্য কোনো দেশ ভিসা পলিসি নির্ধারণ করে, তখন বাংলাদেশি হিসেবে আমি লজ্জা বোধ করি। আন্তর্জাতিক মহল কথা বলছে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করছে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। একইভাবে দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাস্তায় নেমেছে। এ কারণে সরকার প্রচণ্ড চাপ অনুভব করছে। সরকার চাপ অনুভব না করলে আবার আমাদের ওপর এভাবে ধরপাকড় শুরু করত না। বিএনপির লাখ লাখ কর্মীর নামে মামলা রয়েছে। তার পরও গত দু-তিন মাসে আবারও হাজার হাজার গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। মিথ্যা মামলা দেওয়া শুরু করেছে। ছাত্রদল, যুবদলের নেতাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, চার-পাঁচ দিন তাদের গায়েব করে রেখেছে। তারপর আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে তাদের ১০০ বছরের পুরোনো অস্ত্র হাতে দিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ আবারও এসব পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। যদি তারা প্রেশার অনুভব না করত, তবে তারা এগুলো আবার শুরু করত না। আওয়ামী লীগ অহেতুক হুংকার ছাড়ছে। তাদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য তারা এসব করছে। আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই এ কারণেই তারা দমনপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে।

কালবেলা: আপনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। বিদেশিদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিংয়ে দলের পক্ষে আপনি অংশগ্রহণ করেন। বিএনপির বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে বিদেশিদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি?

শামা ওবায়েদ: কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দল বাংলাদেশের জন্য কিছু করে দিয়ে যাবে বিএনপি সেটা আশা করে না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের দল। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা মাঠে রয়েছি। আমাদের শক্তি জনগণ। আমরা জনগণের পালস বুঝতে পারি। আমরা যখনই জনগণের কাছে যাই তারা বলেন—আপনাদের আমাদের কাছে আসতে হবে না, আপনারা শুধু আমাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বাস্তবতা হলো, যারা নৌকায় ভোট দিত, তারাও এখন আর ভোট দিতে যেতে চায় না।

ভোট দেওয়ার ইচ্ছেটাই মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের মানুষ সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। সবকিছু ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা দেশের গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এটাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় গর্হিত কাজ।

আমরা জনগণের শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ গণতন্ত্রমনা দেশগুলো—এমনকি জাতিসংঘও বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে অবিরাম তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। এসব দেশ শুধু বাংলাদেশে কাজ করে তা নয়, তারা বাংলাদেশের জন্য বড় দাতা গোষ্ঠীও। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকার মতো দাতাগোষ্ঠী বহু বছর ধরে অর্থায়ন করে আসছে। গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশকে তাগাদা দেওয়া এসব দেশের সঙ্গে আমাদের বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং তারা চাইবেই এদেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার থাকুক, যার ভিত্তি জনগণ। জনগণের সমর্থন ছাড়া যে সরকারই ক্ষমতায় থাকবে তারা দুর্বল থাকবে। এ ধরনের দুর্বল সরকার হয়তো কিছু কিছু লোকের জন্য উপকারে আসতে পারে; কিন্তু দেশের কোনো উপকারে আসে না। সুতরাং যেসব দেশ মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে ধারণ করে তারা অবিরাম বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের দাবিও সেটি।

কালবেলা: আমরা দেখেছি, ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। এবারও কি বিদেশিরা কোনো উদ্যোগ নেবে?

শামা ওবায়েদ: বিদেশিরা এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যাবে না, বিএনপি সেটি মনে করে না। তবে আমরা একটা ডেডলকের মধ্যে রয়েছি। এ অবস্থার একটা সমাধান দরকার। সেক্ষেত্রে কোনো দেশ চাইলে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ একটি যথাযথ মধ্যস্থতাকারী হতে পারে। জাতিসংঘ সেই উদ্যোগটা নিয়েছিল একবার।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দুদলের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তার মধ্যস্থতায় দুদলের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই আলোচনার ফলাফল ছিল শূন্য। সেই আলোচনার ফসল ছিল ২০১৮ সালের নিশি রাতের নির্বাচন। সেই তারানকো সাহেব এবারও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকার তাকে আসতে দেয়নি। সরকারের একেবারে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব স্তরের বহু লোকের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ রয়েছে, কারও পরিবার রয়েছে, সন্তানরা সেখানে পড়াশোনা করে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে যায় আসে আবার সকাল-বিকেল যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কারও করে।

কালবেলা: আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের বক্তব্য কী?

শামা ওবায়েদ: ডিপ্লোমেসির একটি ভাষা রয়েছে। সেই ভাষাটা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভালো করেই বোঝে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রতিবারই বাংলাদেশে আসলে একটি কথাই জিজ্ঞাসা করছেন, সেটি হলো নির্বাচন। বিদেশি প্রতিনিধিরা এসে বারবার চোখে আঙুল দিয়ে নির্বাচনের দিকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি প্রতিনিধিরা এসে এখন দুদকে যাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেখছেন। সিন্ডিকেটের কারণে দেশের অর্থনীতির আজকের এ অবস্থা, তারা সেগুলো দেখছেন। আমাদের সরকার কি সেটা নিষেধ করতে পারছে? পারছে না। কারণ সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। সরকারের ওপর জনগণের কোনো সাপোর্ট নেই। দেশি ও বিদেশি উভয় চাপেই রয়েছে সরকার। বিদেশিরা বরাবরই বলে আসছেন, বাংলাদেশে তারা একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সঙ্গে এখন নতুন করে বিশ্বাসযোগ্য শব্দটি যোগ হয়েছে। শুধু নির্বাচন হলেই হবে না, নির্বাচন হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য। ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু সেটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছিল না। একটা ভোটকেন্দ্রে ১০০ শতাংশের বেশি ভোট, আরেকটি ভোটকেন্দ্রে শূন্য শতাংশ ভোট। এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান।

কালবেলা: নেপথ্যে কোনো আলোচনা চলছে কি?

শামা ওবায়েদ: সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। আলোচনা যদি হতো, তাহলে আমাদের মহাসচিবের ওপর মামলা, খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় এক মাস হলো হাসপাতালে রয়েছেন, তার ওপর মামলা। এসব নিয়ে প্রথমে কথা বলা হতো। আলোচনা হলে এসব সমস্যার কিছু সমাধান আমরা দেখতে পেতাম। তেমন কিছু আমরা দেখছি না এবং আমার জানা মতে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।

কালবেলা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভিন্ন কোনো ফর্মুলা কি আপনাদের আছে?

শামা ওবায়েদ: একটা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হবে সেটা বিদেশিরা বলে দিয়ে যাবে না। সেটা বলে দেওয়া বিদেশিদের কাজও না। বিদেশিদের যেটা কাজ, সেটা তারা করছে। একটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আওতায় যতটুকু বলা যায় সেটা তারা বলছে। বিদেশিরা একটি দেশের সংবিধান পরিবর্তন করতে আসবে না। এটা দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের কনসেন্সাসের মাধ্যমেই করতে হবে। সেই সামান্য জিনিসটা যদি আওয়ামী লীগের বোধোদয় না হয়, তাহলে সেখানে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কালবেলা: বিএনপি ভাঙার প্রচেষ্টা চলছে বলে আপনারা অভিযোগ করছেন। এ সম্পর্কে আপনার মত কী?

শামা ওবায়েদ: ১৫ বছরেও তারা বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। ১৫ বছরে কোনো একটা ইউনিয়নের বিএনপি কর্মীকেও তারা নিজেদের দলে নিতে পারেনি। সুতরাং তাদের কাজ হলো বিএনপিকে নিয়ে বিভ্রান্তি এবং ধোঁয়াশা তৈরি করা। তারা কদিন পরপর বিএনপিকে নিয়ে অথবা বিএনপির বড় নেতাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে। কয়েকদিন আগে আমাদের মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য নিয়েছেন বলে মিথ্যা তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করল। এই মিথ্যা প্রচারণা জনগণ বোঝে।

কালবেলা: বেশ কিছু গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে যেতে চান। আপনার মন্তব্য কী?

শামা ওবায়েদ: আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর থেকেই বিএনপিকে ভাঙার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। গত ১৫ বছর তারা বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিএনপিকে ছাড়া ভাঙতে পারেনি। বিএনপিকে ভাঙার তাদের এ প্রচেষ্টা চলতে থাকবে এবং বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।

কালবেলা: বর্তমান এই সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?

শামা ওবায়েদ: আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে চায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলেরই অনেক রাজনৈতিক কর্মী রয়েছে যারা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে চায়। তারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়। তাদের রাজনীতিতে আসার সেই দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এটাই আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় অপরাধ। তারা রাজনীতিকে এতটাই সংঘাতপূর্ণ এবং নোংরা জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মানুষ তার মত প্রকাশ করতেও নিরাপদ বোধ করে না। কারও ব্যক্তিগত মতামত যদি সরকারের পলিসির বিপক্ষে যায় বা সরকারের কোনো কাজের বিপক্ষে যায় তার মানে এই নয় যে, আমি বিরোধী দল করি। একজন মানুষের ব্যক্তিগত একটি মতামত থাকতেই পারে। সেজন্য তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে, তাকে নির্যাতন করা হবে, তার ফ্যামিলিকে সাজা দেওয়া হবে—এই রীতি-রেওয়াজ বাংলাদেশ আগে কখনো ছিল না।

আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, তারা রাজনীতি করেছেন, বহুবার জেলেও গিয়েছেন। বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেলে গেছেন, আবার আওয়ামী লীগের সরকারের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলে গেছেন। কিন্তু তখন পরিবার জানত, তার পরিবারের সদস্য কোথায় আছে। পরিবার জানত, সে কোন থানায় রয়েছে, কোন মামলায় জেলে গেছে। আর এখন মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পরিবার জানে না কোথায় রাখা হয়েছে। তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলা হয় বছরের পর বছর তারা আর ফেরে না। এই যে একটা ভীতির পরিবেশ এবং একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ—সেটা তার সবচেয়ে বড় অপরাধ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুলনায় পাটের গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

পরকীয়ার জেরে ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা

চোর সন্দেহে স্কুলছাত্রকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ

আদালতে আ.লীগের ১৭ নেতাকর্মীর আত্মসমর্পণ, জামিন নামঞ্জুর

কুবি সাংবাদিকতা বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান

৭ ওভারের ঝড়ে বিধ্বস্ত পাকিস্তান

জবি ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়ার নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

রামপুরায় হঠাৎ রাস্তার পাশের দেয়ালধস, শিশুর মৃত্যু

বঙ্গবন্ধুর নাম পাল্টে লেখা হলো ‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়’

এমবাপ্পেকে নিয়ে ফ্রান্স দলে অশান্তি

১০

তেল কম দিল ফিলিং স্টেশন, অতঃপর...

১১

‘গণবিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির’

১২

সাফজয়ীদের পুরস্কৃত করল সাউথইস্ট ব্যাংক

১৩

পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে তালিকা করছেন ট্রাম্প

১৪

‘৩১ দফা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই’

১৫

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে একজনের কারাদণ্ড

১৬

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

১৭

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি লাল দল

১৮

আ.লীগের ষড়যন্ত্র দৃঢ় হাতে দমন করতে হবে : আমিনুল হক

১৯

ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে শিবিরের অভিনন্দন

২০
X