শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আবেদ খান
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:০৭ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কল্পলোকের গল্প

ভগবানের লীলা!

ভগবানের লীলা!

কৃষ্ণনগরের রাজ্যপাট কেমন করিয়া চলিবে তাহা লইয়া গবুচন্দ্র মন্ত্রীর চিন্তার অন্ত নাই। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কিংবা গোপাল ভাঁড়ের কোনো খবর নাই, এজন্য অবশ্য গবুমন্ত্রীর তেমন কোনো উদ্বেগ বা চিন্তা নাই, তাহার একমাত্র চিন্তা হইল কটা-ঘটা যেভাবে চাহিদা বাড়াইতেছে, তাহাতে তো মন্ত্রীর ‘খাই খাই তহবিলে’ আবার না টান পড়ে। কটা-ঘটা তো মিঠু-বিটুর কথা বলিয়া যেভাবে আবদারের পর আবদার করিয়া চলিয়াছে, তাহাতে তো মন্ত্রীর গোপন ভান্ডারে ভাটির টান ধরিবে যদি সিঁধ কাটিয়া রাজপ্রাসাদের ভেতর না পৌঁছানো যায়। এদিকে আরেক মুশকিল, কটা-ঘটাকে কাজ বন্ধ করার কথা বলাও যাইতেছে না। আবার এত খরচ করার পর যদি মাঝপথে কাজ বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে জানাজানির ভয়টাও তখন ভূতের মতো ঘাড়ে চাপিয়া বসিবে। আর মহারাজ কিংবা গোপাল... উফ, এই কথা আর কিছুতেই চিন্তা করা যায় না। এখন তো কোনো নতুন কিছু ফন্দি বাহির করিতেই হইবে।

ঠিক এই সময়ই তাহার মাথায় আসিল তাহার প্রিয় বন্ধু ভগবানচন্দ্র বণিকের কথা। তাহার সহিত কিছু শলাপরামর্শ করা যায় তবে কিঞ্চিৎ সাবধানে। ওর মগজে এত প্যাঁচ যে পেরেক ঢুকিলে তাহা স্ক্রু হইয়া বাহির হয়। তাই তাহাকে ততটুকুই বলা উচিত, যাহাতে নিজের স্বার্থ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হইয়া বরং ‘খাই খাই তহবিলে’ আরও কিছু জমে।

অতএব মন্ত্রী ভগবানচন্দ্রের সন্ধানে রওনা হইল। পথের মাঝখানেই দুজনের দেখা।

মন্ত্রী— এই যে ভগবানচন্দ্র, যাচ্ছ কোথায়?

ভগবান—দেখি, কোথাও কিছু পাওয়া যায় কি না। পেট তো চালাতে হবে!

মন্ত্রী—সে কি? তোমার আবার পেটের চিন্তা। হাসালে ভাই, তুমি তো রাস্তায় বেরুলেই টাকাকড়ি বৃষ্টির মতো মাথায় পড়ে।

ভগবান—থাক, থাক, অত আর বলতে হবে না। তুমিও তো কম যাও না। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের টাকশাল তো তুমি প্রায় ফাঁকা করেই এনেছ! তা তুমিইবা যাচ্ছ কোথায়?

মন্ত্রী—যাচ্ছিলাম তো তোমার কাছেই। একটা জরুরি পরামর্শ আছে। তুমি কৃষ্ণনগরের ব্যাপারে কোনো খবর-টবর রাখো?

ভগবান—কিছুটা শুনেছি অবশ্য, পুরোটা জানি না।

মন্ত্রী—কতটুকু জানো?

ভগবান—শুনেছি তুমি নাকি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আর গোপাল ভাঁড়কে একসঙ্গে হটিয়ে সিংহাসনে বসার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেই ফেলেছ?

মন্ত্রী—আরে না, না। এখানে আমি তো কিছুই করিনি। একদিন গোপাল ভাঁড় রাজসভায় এসে বলল, দিল্লির বাদশাহ নাকি মুর্শিদাবাদের নবাবকে বলেছেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে সরিয়ে দিয়ে মন্ত্রীকে সিংহাসনে বসানোর বন্দোবস্ত করতে। মহারাজ এটা শুনে তো আর তার প্রাসাদ থেকেই বের হচ্ছেন না। এ ঘোষণা দেওয়ার পরদিন থেকে তো গোপালও উধাও। এদিকে রাজসভায় কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের সমর্থকদেরও কাউকে গত এক-দেড় সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে না। আবার আমি রাজপ্রাসাদের ভেতরে কিংবা সিংহাসনের কাছে পৌঁছানোর কোনো পথও বের করতে পারছি না।

ভগবান—কেন? সুযোগ যখন পেয়েছ তখন তো গটগট করে দরবারে ঢুকে সোজা সিংহাসনে বসে যাও, তোমাকে এখন আর ঠেকাচ্ছে কে?

মন্ত্রী—এজন্যই তো যাচ্ছিলাম তোমার কাছে, কীভাবে কাজটা শেষ করা যায় তার একটা বুদ্ধি যদি দাও তবে—

ভগবান—হুম! তাহলে কিছু মালপানি ছাড়ো আগে, তারপর এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখব।

মন্ত্রী—ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি তৈরি হয়েই এসেছি, এই নাও পাঁচ হাজার টাকা।

ভগবান—কী বলছ মন্ত্রী! তোমার নজর এত ছোট হয়ে গেছে? শুনেছি তোমার একটা গোপন তহবিলও আছে আর তার নামটাও বেশ জুতসই—ওই ‘খাই খাই তহবিল’ বা ওই রকম কিছু!

মন্ত্রী—ছি, ছি ভগবান! কে বলেছে এসব কথা? আচ্ছা বাদ দাও। এই নাও আরও দশ হাজার—এটা আপাতত রাখো। এরপর বলো কীভাবে এগোনো যাবে!

ভগবান—আগে একটা লিখিত চুক্তি হোক। আগাম কত দেবে, কাজের মাঝখানে কত দেবে আর কাজ শেষ হওয়ার পর তুমি কৃষ্ণনগরের রাজত্ব পেলে আমাকে কোথায় বসাবে। রোজ রোজ তো আর এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না। একটা নিয়মটিয়ম তো থাকতে হবে। মাসে মাসে কত পাব, খাজনার সময় আমার কত অংশ থাকবে, এসবই তো একদম লিখে-পড়ে নিলে তারপর আমি মুখ খুলব, বুঝলে মন্ত্রী!

মন্ত্রী—কী মুশকিল ভগবান, তুমি আমাকেও বিশ্বাস করছ না?

ভগবান—টাকাপয়সার প্রশ্নে আমি আমার বাপ-ছেলে-বউ কাউকেই বিশ্বাস করি না মন্ত্রী। এখন পাক্কা পুরো পঞ্চাশ হাজার দিতে হবে বায়না হিসেবে—তারপর হবে লিখিত চুক্তি আর তারপর শুরু হবে ফাইনাল কাজ! বুঝলে মন্ত্রী মশাই?

মন্ত্রী—তাহলে তো আমাকে একটা দিন সময় দিতে হবে ভাবনাচিন্তার জন্য।

ভগবান—তা নাও, তবে আর একটা কথা তোমাকে বলে দিই মন্ত্রী, তুমি যদি এখন আর না এগোও তাহলে কিন্তু আমিও তোমার মতো কৃষ্ণনগরের সব জায়গায় তোমার ওপরই পোস্টার মেরে দেব, দেয়ালে দেয়ালে তোমার ছবি টানানো হবে, তোমার কীর্তিকাহিনি লেখা হবে পোস্টারে। তোমার অতীতের কথা, বর্তমানের কথা, ভবিষ্যতের কথা!

মন্ত্রী—সে কী ভগবান! কী বলছ এসব?

ভগবান—এমন কিছু নয় মন্ত্রী মশাই, এটাই ভগবানের লীলা!

লেখক : প্রধান সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১০

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১১

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১২

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৩

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৪

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৫

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৬

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

১৭

জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

১৮

মাদকাসক্ত ছেলেকে কারাগারে দিলেন মা

১৯

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : পরিবেশ উপদেষ্টা

২০
X