মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) দুই দফায় নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও একসময় দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ ছেড়ে গঠন করেছেন নাগরিক ঐক্য। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, জোট গঠন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা-
কালবেলা: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ করে বদলে গেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। ১৫ বছরের মতো হয়ে গেল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। প্রথমবারের নির্বাচনটা আমলে নিলেও শাসনটা মেনে নেওয়ার মতো ছিল না। এরপর তারা ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারের টুঁটি চেপে ধরেছে। এর প্রতিবাদে কোনো যুক্তির কথাও তারা শুনত না। একটা পর্যায়ে এসে গুম, খুন, নির্যাতন ও গ্রেপ্তার বেড়ে যায়। হাজার খানেক মানুষ হারিয়ে গেল। স্বজন হারানো মানুষগুলো দেশের মধ্যে বিচার না পেয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের কাছে অভিযোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগে সাড়া দিয়েছে বা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারপর গুম ও ক্রসফায়ারে মৃত্যু কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর সরকার কিছুটা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন কথা বলছে। কিন্তু এখন এটা দৃশ্যমান- সরকার নতি স্বীকার করেছে। তারা মুখে বলছে যাব না আমেরিকায়, তাতে কি আসে-যায়। অথচ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, তারা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলতে রাজি আছেন। তার মানে বাধ্য হয়ে তারা আলোচনার কথা বলছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আলোচনার কথা বলেছেন। এগুলো হয়েছে একমাত্র আমেরিকার সাম্প্রতিক দুটি নীতির কারণে। একটি হলো র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা। আর একটা হচ্ছে ভিসানীতি। গত ৩ মে সরকারকে ভিসানীতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। অথচ সরকার দেশের মানুষকে কিছুই জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে জানানো হয় ২৩ মে। শুনি যে, অনেকের নামে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং সরকারের কাছে একটা বিরাট লিস্ট দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে তোমাদের এত লোক নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। এত বছর দেশ শাসন করার পরেও প্রধানমন্ত্রীর ন্যূনতম কোনো রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক জ্ঞান হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তিনি রেগে বললেন চলে আসো আমেরিকা থেকে, একটা লোকও আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর নিজের লোকও আসেনি। তার মানে এটা একটা অবাস্তব কথা, তারা চলে আসতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর নিজের পুত্র, পুত্রবধূ, বোন এবং অন্যরা আছেন। আমেরিকার ভিসানীতি কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নও অটোমেটিকভাবে অনুসরণ করবে। এখন দেখার বিষয়, এর বিপরীতে সরকার দাঁড়াতে পারবে কিনা। ভিয়েতনামে যখন লড়াই হয়েছে তখন তাদের পক্ষে সবাই দাঁড়িয়েছে। কারণ, ওটা ছিল অন্যায়। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশের সরকার অন্যায় করছে। যুক্তরাষ্ট্র সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলছে। এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। একটা উদাহরণ দেই- আমাদের ঢাকা থেকে দিনাজপুর পদযাত্রা চলছে; আজকেও কর্মসূচি আছে। আগে অনেক জায়গায় সরকারপক্ষ বাধা দিয়েছে একটা-দুটো জায়গায় সভা-সমাবেশ করতেই দেয়নি। তারা গায়ের জোর দেখিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় এমন হয়েছে যে, পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে চেষ্টা করেছে যেন আমাদের সভা হয়। তাদের আচরণ সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, পুলিশের এসপি কিংবা ওসি বুঝতে পেরেছেন যে, তারাও নিষেধাজ্ঞার বিপদে আছেন। পুলিশ সরকারি দলকে বলছে, তোমরা বাড়াবাড়ি করতে পারবে না আবার আমাদেরও বলছে- আপনারা ঠিক এই জায়গায় এভাবে এতখানি নিয়ম মেনে সভা করেন। আমরা আপনাদের ফুল প্রটেকশন দেব। এ রকম অন্তত দু-তিনটি জায়গায় হয়েছে।
কালবেলা: আওয়ামী লীগ সরকারের আচরণগত এ পরিবর্তনে কি বিএনপির সাড়া দেওয়া উচিত?
মাহমুদুর রহমান মান্না: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। আর এ ধরনের কথায় কান দেওয়ার সময় নেই। অনেকদিন ধরেই আমরা বলেছি কথা শুনেন। আলোচনায় বসেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু কোনো কথাই শুনেনি। খুবই বাজে আচরণ তারা করেছে। সেটা করতে করতে এমন একটা জায়গায় এসেছে যে, তাদের ওপর থেকে সব বিশ্বাস উঠে গেছে। এখন আমরা মনে করি না যে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব কেন? কথা একটাই- তোমরা ক্ষমতা থেকে চলে যাও, যাওয়ার পরে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে। তাদের সঙ্গেই আমরা কথাবার্তা বলে একটা পলিসি ঠিক করব। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারও কথা বলুক। আমরা মানা করছি না। আমরা শুধু বলছি- যারা ক্ষমতায় আছে তারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি মিথ্যাচার করেছে। তারা বলেছিল, আপনাদের কাদের কাদের নামে গায়েবি মামলা আছে তাদের লিস্ট দেন, আমরা দিয়েছি। গায়েবি মামলা প্রত্যাহার দূরে থাক, উল্টো তাদেরই ধরেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে তারা বলেছিল, আমাদের সংবিধানিক নিয়ম রক্ষায় নির্বাচন করছি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন করব। এত বড় মিথ্যাচার তারা অতীতে করেছে যে, আন্তর্জাতিক মহলও তাদের বিশ্বাস করে না। আমরা তাদের প্রতিনিয়ত দেখছি। আমাদের নেতারা বগুড়ায় গেছেন, রাতে তারা যে হোটেলে থাকবেন সেখানে গিয়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করে রাত ১২টার দিকে বের করে দিয়েছে। অমানবিকতারও একটা সীমা আছে। এখন তাদের সঙ্গে বসার কথা কেন আসবে? তারা কোনো নির্বাচিত সরকার না। যদি সেটা হতো তাও একটা কথা ছিল। এই অন্যায্য সরকার যে অত্যাচারটা করেছে তাদের সঙ্গে বসার প্রশ্ন আসাই উচিত না। এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান ঠিক আছে।
কালবেলা: বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৫২ বছর হলো। অন্য অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলেও রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। কেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: উত্তরণ কেন ঘটাতে পারব না। এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান নাই। কিন্তু আপনি সমস্যাটা সমাধান করতে চান কিনা এবং ঠিক পথে চেষ্টা করেন কিনা, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি এ ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আওয়ামী লীগের বেশি দেখি। স্বাধীনতার পর থেকে তারা যখনই ক্ষমতায় গেছে তখন তারা স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং ক্ষমতার বাইরে থাকলে আন্দোলন ও মারামারি করেছে। বিএনপি সেই তুলনায় আওয়ামী লীগের মতো এতখানি করেনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বেগম জিয়া জিতলেন ঠিকই কিন্তু তার দেড় মাসের মধ্যে আবার ইলেকশন দিলেন নিজেই। আওয়ামী লীগ এখন বলছে, আমাদের আন্দোলনের চাপে করেছে। আমি তখন আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলাম। খালেদা জিয়া নির্বাচন করার আগেই বলেছিলেন এটা আমার কনস্টিটিউশন অবলিকেশন, কাজেই আমি ইলেকশন করব। ইলেকশনের পরে আরেকটি নতুন নির্বাচন দিব। তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তার মানে বিএনপি নির্বাচন কখনো সঠিকভাবে করেনি বা বিএনপির অতীতে এ রকম অভিযোগ তোলার মতো বা আঙুল তোলার মতো কোনো বিষয় নেই, সেটা না। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনোই এগিয়ে আসেনি। জাতীয় সংসদে বেগম খালেদা জিয়াকে তবু মাঝে মাঝে বলতে আমিও শুনেছি, আমি নতুন মানুষ, আমি তো বুঝি না। আসুন আমরা উভয়ে মিলেই করি। যে রকম করে বিএনপি রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা থেকে সংসদ ব্যবস্থায় গেল। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া খুব জরুরি। হবে কি? এই প্রশ্নে আমি খুব ইতিবাচক বলব না। এখন পর্যন্ত তারা যা করছেন সেটা ছলাকলা ছাড়া কিছুই না। তাদের পতন আসন্ন, তাদের পরাজয়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। মানুষ তাদের চায় না, জাতীয়ভাবে চায় না এবং আন্তর্জাতিকভাবেও চায় না। এসব বুঝেও তারা শঠতা করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য দলটাকে বিশ্বাস করা যায় না। যদিও অতীতে আমি এই দলের একটা দায়িত্বে ছিলাম। তবুও আমি বিশ্বাস করার মতো কোনো জায়গা পাই না। আমি বলব যে, যারা এমন শঠতা করবে তারা যদি মনে করে অনাদিকাল তারা এটা করে চলে যেতে পারবে, তাহলে তারা ভুল করবে, তারা তা পারবে না। আওয়ামী লীগ এখন আগের চেয়ে অনেক ঘৃণিত। মানুষ আমাদের জিজ্ঞাসা করে- ভাই এ সরকার এখনো কেন যায় না। মাঝে মাঝে এমন এমন ভাষা ব্যবহার করে সেগুলো আমি এখানে বলতে পারব না; যেখানে তাদের চূড়ান্ত ঘৃণার প্রকাশ হয়। এবার আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে যে আন্দোলন করছি সেখানে আমরা বলছি যে, কেবল দলের বদলে দল- এমন ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য আমরা লড়াই করছি না। আমরা রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করতে চাই। আমরা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চাই। সেজন্য আমরা একটা কর্মসূচি দিয়েছি। বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। যদিও আমরা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে একসঙ্গে ঘোষণা করতে পারিনি। সেগুলো বিভিন্ন টেকনিক্যাল কারণ। কিন্তু আমি মনে করি, বিএনপি যদি ইতিবাচক আচরণ নিয়ে থাকে, তাহলে আমরাই শুরু করব। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কেউই হয়তো খেয়াল করে না একটা নতুন জেনারেশন তৈরি হয়েছে যারা রাজনীতির নামে মারামারি-কাটাকাটি পছন্দ করছে না। তারা দেখছে দুনিয়া এগোচ্ছে আর আমরা এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে আছি। তারা এটা পছন্দ করছে না। আর যারাই প্রগতি বা গতির পরিবর্তনের বিপক্ষে দাঁড়াবে তারা টিকতে পারবে না। পরিবর্তন একটা হবেই এবং আমার মাঝে মাঝে এ রকম মনে হয় এবারে যে পরিবর্তন হবে সেই পরিবর্তনটাই ভবিষ্যৎ গুণগত পরিবর্তনের একটা সূচনা করবে।
কালবেলা: আপনারা গত নির্বাচনে বিএনপির জোটের সঙ্গে ছিলেন আবার বের হয়ে আসলেন, এবার কি আলাদা নির্বাচন করতে চান নাকি কোনো জোটের সঙ্গে যেতে চান?
মাহমুদুর রহমান মান্না: বেরিয়ে আসলাম এটি নয় বরং বলেন বিএনপি নিজেদের সিঙ্গেল আউট করে ফেলল। আমরা তাদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টে ছিলাম, তারা অতীতে ২০ দলীয় জোটে ছিল। ঐক্যফ্রন্ট আর বসেই নাই, বসাবার চেষ্টা করা হয়নি, এগোনোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি। যদি এ রকম হতো যে, বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেছে আমরা যাইনি তাহলে একটা কথা ছিল। এখনকার বাস্তবতা হলো বিএনপি ২০ দলেও নেই। তারা নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে এবং সবাইকে বলছে, আপনারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেন। সেটা দলগত হতে পারে আবার জোটগত হতে পারে। এ অর্থে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি দলগুলোর সঙ্গে বসছে কিন্তু তারা তাদের মতো থাকছে। এখন নির্ভর করছে ভবিষ্যতে তারা কি করবে। তারা অবশ্য বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং তারা ক্ষমতায় গেলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। এটার মধ্যে একটা বার্তা আছে যে, ইলেকশন তারা একা করবে। তবে অন্যদের নিয়ে জাতীয় সরকার তৈরি করবে। এ রকম নয় যে, তারা বলছে, নির্বাচনে আমরা একটা জোট করব সেই জোট পরে সরকার গঠন করবে ইত্যাদি। আমরা আমাদের মতো কাজ করব; আমরা একটা জোট করেছি গণতন্ত্র মোর্চা। এটিকে এখনো আমি কোনোভাবেই নির্বাচনী মোর্চা বলতে পারছি না। এটা একটা আন্দোলনের মোর্চা। কিন্তু নির্বাচনও আন্দোলনের অংশ হতে পারে। সে রকম যদি হয় তখন সে রকম করে ভাবব, ভেবে সিদ্ধান্ত নিব।
কালবেলা: আপনি বলছেন এবার রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ চিন্তা কতটা বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: বর্তমানে যে বিষয়টি ডেভেলপ করেছে সেটা হচ্ছে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এর সঙ্গে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাটাও যুক্ত হয়েছে মানুষের মনে। বিএনপির মতো এত বড় একটা দল সম্মতি দিয়েছে। এই পরিবর্তনের কথা আওয়ামী লীগও বলছে। পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারছে না কেউই। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়লে একটা আদর্শের ভিত্তি তৈরি হবে। সংগঠনের ভিত্তি কতখানি তৈরি করে সেটা দেখার বিষয় আছে। কাজেই আমি দৃঢ়ভাবে বলব না যে হবেই। কিন্তু আমি মনে করি সেই রকম একটা সূচনা লক্ষ্য করছি।
কালবেলা: বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা কি বর্তমান সরকারের মতো আচরণ করবে না?
মাহামুদুর রহমান মান্না: আমাদের সঙ্গে বিএনপির যেসব কথাবার্তা হয়েছে বা হচ্ছে সেখানে অনেক কিছু ইতিবাচক পেয়েছি। আমরা যখন বলেছি রাষ্ট্র সংস্কারের কথা, তারাও বলেছে এবং বড় হেডিং আকারে সেগুলো এসেছে। তারা অঙ্গীকার করেছেন, দাবি-দাওয়া ইত্যাদির কথা বলেছেন। কিন্তু যখন আমরা ডিটেইলসে গেছি তখন কিছু কিছু জায়গায় আলোচনা করে সমাধান করতে পারিনি। পুরো বিষয়টিকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। আমি মানি ব্যক্তির ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু আমি এটাও মানি ব্যক্তি সমষ্টির ইচ্ছার বিপক্ষে যেতে পারবেন না। আমরা এটাও মনে করি, এই সময়ের মধ্যে একটা ভালো সূচনা করতে পারব। বিষয়টি আমি একটু ব্যাখ্যা করি- অনেকে হয়তো মনে করেন যে, এই সরকার গেলেই তারা ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু সেটা আইনগতভাবেই সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে একটা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হতে হবে। এখন এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কি? তার কাজ কী শুধুই নির্বাচন পরিচালনা হবে। বললে শুনতে ভালোই লাগে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- যেদিন নতুন সরকার আসবে সেই দিনই তার সামনে আসবে বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের সংকট, ডলার সংকট প্রভৃতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে শুধু নির্বাচনে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলার কোনো মানে নেই। আমরা বলছি অন্তর্বর্তী সরকারকে এটা করার অধিকার দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায় যেটা একটা পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে একটা কর্মসূচির কথা বলি আপনাকে, আমরা বলছি আমরা যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে আমরা একটা ডেটাবেজ তৈরি করব। সর্বোচ্চ তিন মাস লাগবে। ছয় কোটি মানুষকে প্রত্যেক মাসে এক হাজার করে টাকা দেব। একটা পরিবারে চারজন দরিদ্র লোক যদি থাকে সে পাবে ৪ হাজার টাকা। নিজের খরচ তো চলবেই সে কিছু টাকা জমাতেও পারবে। এটি দরিদ্রদের অর্থনৈতিক সুযোগ করে দেবে। আমরা হিসাব করেছি, এতে বছরে লাগবে ৭২ হাজার কোটি টাকা। আর একটা জিনিস আমরা বলছি- এ ধরনের মানুষের ডাক্তার এবং মেডিসিন ফ্রি দেব। আর এটাতে লাগবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। মোট সোয়া ১ লাখ কোটি টাকা দরকার। এবারের বাজেট হয়েছে সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার বেশি। বাজেট থেকেই এ অর্থ দেয়া সম্ভব। আমাদের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই এটি করুক। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে কি করবে। তাকে দেশ চালানোর অধিকার দিতে হবে নাহলে হবে না। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোকে বলছেন দেখ খুঁজে খুঁজে কি করা যায়। অথচ সরকার সব দলকে ডেকে বলছে না আসুন আমরা একসঙ্গে বসে সমাধান করি। ধরেন তারা যদি বলত এখানে কোনো রাজনীতি নেই, আমি বিদ্যুৎ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, আমি কি করতে পারি অথবা ডলারের এত সংকট আমরা কি করতে পারি। তারা এটা করে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজ করতে পারে। এটা যদি তারা না করে তাহলে সরকার কীভাবে চলবে, কিসের নির্বাচন করবে।
কালবেলা: জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
মাহমুদুর রহমান মান্না: সরকার যদি জুন মাসে বলে আমরা পদত্যাগ করব তো কার কাছে ক্ষমতা দেবে? আপনি কার কাছে দেবেন এজন্য তো অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা লাগবে এটার কোনো বিকল্প নেই।
পাকিস্তানেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। রাজনৈতিক সম্পর্কটা উন্নত হলে সরকার ক্ষমতায় থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটা হচ্ছে। কিন্তু সম্পর্কটা এমন যে, আপনি ক্ষমতায় থাকলে আমাকে জিততে দেবেন না। এটা যদি পরিবর্তন হয় তাহলে আপনি পারবেন আর যদি না হয় তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার লাগবে।
কালবেলা: ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বলে আপনাদের অভিযোগ। এবার যদি তারা ডাকে তাহলে আপনারা কি আলোচনায় যাবেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: এবার আমরা যাব বলে মনে হয় না। তাদের বিশ্বাস করার মতো কোনো জায়গা তারা রাখেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদলগুলোর আলোচনায় আমি ছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে আমাকে বিশ্বাস করেন। আমি আমার পিতার কসম করে বলছি এগুলো এগুলো করব। এরপর তিনি একটি প্রতিশ্রুতিও রাখেননি। তিনি আমারও নেত্রী ছিলেন। আমি তাকে নেত্রী হিসেবে মানতাম। কিন্তু মৃত পিতার নামে আপনি ওয়াদা করে সেটার বরখেলাপ করলেন তাহলে আপনাকে আর কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করব। তাকে এখন কেউ এমনিতেও বিশ্বাস করছে না।
কালবেলা: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখছেন কী?
মাহমুদুর রহমান মান্না: এখন পর্যন্ত এমন কোনো লক্ষণ নেই। আমি গণতন্ত্র চাই তাই আমি আমেরিকার সঙ্গে যাব বলছি না কিন্তু আমেরিকাতে গণতন্ত্র আছে, আমি গণতন্ত্রের সঙ্গে আছি। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় আমেরিকা বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে কিছু বলেনি। তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলছে সেখানে এমন কিছু বলেছে বলে আমি শুনিনি। ভেতরে যদি থাকে তখন সেটা মানিয়ে নিতে হবে কারণ, রাজনীতিতে কূটনীতি আছে। সেটা দিয়ে আপনাকে অভাব পূরণ করতে হবে।
কালবেলা: বর্তমান প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা সম্ভব?
মাহমুদুর রহমান মান্না: প্রশাসনের অনেকেই আছেন বাধ্য হয়ে সরকারের কাজ করছেন। তারা সরকারের নিয়ম না মেনে কি করবেন? কিন্তু এর মধ্যে বগুড়ায় বড় মিটিংয়ের জন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের বোঝার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যমান প্রশাসনকে কতটুকু ব্যবহার করতে পারবেন। যাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, তাদের বাদ দিতে হবে। কেউ কেউ অত্যাচার করেছেন, মানুষ খুন করেছেন, সম্পত্তি দখল করেছেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু খুব বড় আকারের অপরাধ না করলে কিছু মানুষকে নিতে হবে, নইলে প্রশাসন খালি হয়ে যাবে, দেশ চালানো যাবে না। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো হালকা বিষয় আমি মনে করি না। তারা যদি বুঝে কাজ করে এবং তাদের যদি সেই অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি ভালো হবে। তাদের বলতে হবে তোমার সামনে এই আছে তোমাকে এই এই করতে হবে। তাহলে আমি মনে করি সম্ভব। এই সরকার চলে যাওয়ার পর নতুন সরকার যেটা আসবে সেটা যদি ফালতু হয় তাহলে কাজ হবে না। নতুন সরকার যেন পুরো এজেন্ডা বুঝে করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
কালবেলা: আপনারা তো জনগণের সঙ্গে কথা বলছেন, তাদের সাড়া কেমন দেখছেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: আপনার সঙ্গে আমি যত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি সেটা জনগণের ধারণার মধ্যে নেই। জনগণ সাধারণভাবে মনে করে এই সরকার চলে যায় না কেন। তারা পরিবর্তন চায় এবং এর বদলে কি আনতে চায় সেটা তারা বুঝে না বা ব্যাখ্যা করতে পারে না। আমি যেখানে যেখানে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলেছি মানুষের চোখ বড় হয়ে গেছে। তারা বলছে, এটা দেওয়া যাবে। আমি বলেছি কেন দেওয়া যাবে না। অর্থ পাচারই তো হয় ২ লাখ কোটি টাকা, তাহলে আমি পারব না কেন। আগে কেউ করেনি কেন? তখন আমি বললাম কেন করেনি সেটা জানি না। কিন্তু আমি বলছি আমি যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে আমি এটা করব। আমাদের অর্থনীতিতে আমি কখনো দরিদ্রতা দেখি না। একইভাবে মানুষের অধিকার নিশ্চিতের জন্য নিম্ন আদালতে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা আনতে হবে। এভাবে সব জায়গায় সংস্কার করতে হবে। কোনোটাই আমার কাছে অসম্ভব মনে হয় না। আমি মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করি, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সম্ভব। কিন্তু এটা একা পারা যাবে না। একটা টিম লাগবে। সেটা করার জন্যই আওয়ামী লীগ ছেড়ে এখানে এসেছি। এখন জোট করছি, সবার সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করছি, আমি আশাবাদী।
কালবেলা: আপনি যে আশা করছেন সেই আশার জায়গাটা আসলে কোথায়? আপনি কি বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কাছে আশা করতে পারেন?
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি আওয়ামী লীগের কাছে এখন আশা করি না। এই দলটা পচে গেছে তাদের কাছ থেকে কিছু নেওয়া যাবে না, এটাও কিন্তু আমি বলছি না। এর আগে বিএনপি একবার বাদ গেছে, আওয়ামী লীগও বাদ গেছে, তারপর তারা ক্ষমতায় এসেছে। তাই আমি ভবিষ্যতের জন্য একটা প্রত্যাশা রাখছি। বিএনপির ব্যাপারেও আমি এখনই আশা রাখি না, তবে বেশকিছু জায়গায় আমি তাদের ইতিবাচক পেয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে আমাদের বড় মাপের একটা সম্মান আছে। তারেক জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি না কিন্তু বেগম জিয়ার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে কথাবার্তা হয়েছে। আমার তাকে সংস্কারের বিষয়ে বেশ আন্তরিক মনে হয়েছে। ফলে প্রত্যাশা করতে পারি। আমার প্রত্যাশা যদি পূরণ না হয় তাহলে আমি তো তাদের কাছে কিছু আত্মসমর্পণ করছি না। আমি আমারটা নিয়ে আমার জায়গায় আছি এবং আমার জায়গা থেকে লড়াইটা করব। একটা বিষয় দেখেন বাংলাদেশের সরকারি দলকে মানুষ দুই চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু বিরোধী দল যে জনপ্রিয় এবং মানুষ তাদের ওপর ভরসা করে বা আশা করে তেমনটা না। জনগণ আস্থা রাখতে চায় অন্যকিছুতে যেটা তারা পায়নি। আমি বিকল্প শক্তিকে মানুষের সামনে হাজির করাতে চাই। আমরা আছি দেখ আমাদের কি মনে হয়, ওদেরকেও দেখ যাদের ঠিক মনে হয় তাদের পেছনে যাও। এতে তোমার মুক্তি। এ কথাগুলো মানুষকে ঠিকমতো বলা হয়নি। আমি যেখানে এসব কথা বলি মানুষ শোনে এবং পরে আমার সঙ্গে কথাও বলে। ফেসবুক থেকে অনেক লেখালেখি হয় আমি সেগুলো দেখে আশাবাদী এবং আমি মনে করি মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আছে এবং তাদের বোঝালেও তারা আশাবাদী হচ্ছে।
কালবেলা: আমাদের দেশের অর্থনীতি একটা সংকটময় মুহূর্তে আছে। এর মধ্যে আবার যদি রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয় সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা তৈরি হতেও পারে। এখান থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমি ইতোমধ্যে সরকারকে বলেছি জুনের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হবে। এটা যদি শান্তিপূর্ণভাবে হয় তাহলে আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতিতে ফিরতে পারছে। যদি না করে তাহলে একটা জনরোষের মধ্যে পড়বে, যদি পড়ে তাহলে তাদের অবস্থা ভালো হবে না। আমার প্রত্যাশা তারা নাও মানতে পারে। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে চাই কোনো প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আমরা কিছু করব না। আমরা যেটা করব রাজনৈতিকভাবেই করব। এখন যে কথা তারা বলতে চায় সেখানে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা তাদের অবস্থানটা বুঝতে পারছে। আমি অনেকদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। তাদের দলের নিচের লেভেলের অনেকেই মনে করেন যে, যা হচ্ছে সেটা খারাপ। এটা যদি ঠিক হয় তাহলে বাকিটা নির্ভর করবে পরিবর্তনের পরে। প্রথম হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপরে হচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের বিচক্ষণতা ও ধৈর্যের ওপরে। প্রধান বিরোধী দল যদি মনে করে যে, না তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে নাহলে আমরা বিক্ষোভ শুরু করে দেব- তাহলে এটা একটা বিপদ হতে পারে। এজন্য আমি সবাইকে বলব ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে বিবেচনা করে এগোতে হবে। এখানে ক্ষমতা বড় না বড় হলো আমাদের সামনে যে কাজটা থাকবে সেটা। সবাই যদি আন্তরিক হয় তাহলে করবে আর যদি না হয় তবে বড় বিপদ হবে।
মন্তব্য করুন