বাঙালি যে উৎসবপ্রিয়, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নিজেদের ধর্মীয়, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় ও সংস্কৃতির উৎসবের পাশাপাশি ধারে নেওয়া উৎসবগুলোও মহানন্দে পালন করে থাকে। গত দুই দশকে বিজাতীয় নানা উৎসব বাঙালি জীবনে এমনই গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে যে, মনে হবে আদিকাল থেকে ওইসব উৎসব আমাদের উৎসব-সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। উৎসবগুলোতে মাত্রাজ্ঞান থাকে না, থাকে না পরিমিতবোধ। তাই বেপরোয়া ওইসব উৎসব কেন্দ্র করে ঘটে অবাধ ভোগবাদিতা। ঘটে ব্যাপক আর্থিক অপচয়। সাজসজ্জার, খাবারদাবার হতে ভোগবাদিতার কোনোই ঘাটতি থাকে না। আমাদের উৎসবমুখী করার ক্ষেত্রে এসব তৎপরতা শুধু উৎসব-বিনোদনের আনন্দ-ফুর্তির জন্য নয়, মুনাফার অভিপ্রায়ে পণ্য আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি আমাদের জাগতিক চেতনাকে এড়িয়ে যাতে আমরা সন্তুষ্টির চিত্তে বিদ্যমানতা অবলীলায় মেনে নিয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ি, ওই লক্ষ্যেও উৎসবের অভিমুখে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা সর্বত্র দৃশ্যমান।
সব ধর্মমতের বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র পার্বণটি বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে অসাম্প্রদায়িক একমাত্র উৎসব হিসেবে গণ্য এবং প্রচার-প্রচারণাও করা হয়। ধর্মীয় উৎসবের বাইরে বাস্তবিকই সব সম্প্রদায়ের বাঙালির পক্ষে একত্রে বাংলা নববর্ষ পালন করা সম্ভব। অথচ বাংলা নববর্ষ পালনে ভোগবাদিতা, ধর্মের সম্পৃক্ততাকে কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। অতীত আমলে তিথি, লগ্ন, লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে পহেলা বৈশাখ নির্ধারিত হতো। পরবর্তীকালে জেনারেল এরশাদ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ নির্ধারণ করেন। এতে পঞ্জিকার সঙ্গে এক দিন আগ-পিছ প্রায় ঘটে। আবার ১৪ এপ্রিলেও পঞ্জিকার সঙ্গে মিলেও যায়। পশ্চিম বাংলায় বঙ্গাব্দের নববর্ষ তিথি, লগ্ন, লোকনাথ পঞ্জিকার অনুসরণে পালিত হয়। সে কারণে বাংলা নববর্ষ পালনের ক্ষেত্রে দুই বঙ্গে এক দিন আগ-পিছ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল উদযাপিত হলেও, দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কিন্তু লগ্ন, তিথি, লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত দিনে নববর্ষ পালন করে না, করে ধর্মমতানুযায়ী। নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মযোগ এবং দিনক্ষণের বিতর্ক-বিভাজনের অবসান অবশ্যম্ভাবী মনে করি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখে আসছি, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নববর্ষকেন্দ্রিক পূজার্চনা হয়ে আসছে লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণে, রাষ্ট্রঘোষিত নববর্ষের দিনে নয়। বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র এই উৎসবকে ধর্মের বৃত্তে যুক্ত করে দিবসটির ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি কি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে না! একমাত্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক পার্বণের তকমাটা তাহলে থাকল কোথায়? ধর্মীয় উৎসবসমূহের বিপরীতে জাতিগত একমাত্র উৎসবের প্রচার-প্রচারণা তবে কি মিথ্যা প্রমাণিত হলো না!
কলকাতায় পহেলা বৈশাখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতা সেখানে দেখিনি। কেবল বিশেষ দু-চারটি মাঠে বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে দেখেছি। যাদবপুরে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুকরণে গত কয়েক বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করছে স্থানীয় বাঙালিরা। তবে কলকাতা শহরে নববর্ষকেন্দ্রিক কোনো আয়োজন দেখিনি। আমাদের শহরগুলোতে বর্ণিল সাজে পথে-পথে মানুষের ব্যাপক ঢল নামে, অথচ কলকাতায় তেমনটি দেখিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবই খোলা থাকে। শুধু পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকারের দপ্তরগুলো ছুটির আওতায় বন্ধ থাকে। পশ্চিম বাংলার জেলা ও মফস্বলের পরিসরেই শুধু বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসাকেন্দ্রে, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পরস্পর নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। পরিণত বয়সীদের নতুন পোশাক পরে সকালে মন্দিরে ছুটতে দেখেছি। পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলমানরা কিন্তু বাংলা নববর্ষ পালন করে না। কেন করে না? এমন প্রশ্ন করেছিলাম বেশ কজনকে। তাদের প্রত্যেকের জবাব ছিল, তারা এদিনটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পার্বণ হিসেবেই গণ্য করে এসেছে। এদিনের সূর্যোদয় থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতার আধিক্যে তারা বিবেচনাই করতে পারে না, এদিনটি বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র অসাম্প্রদায়িক পার্বণ। তাই বংশ পরম্পরায় তারা বাংলা নববর্ষ পালন না করে, দিনটিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পার্বণ হিসেবেই বিবেচনা করে।
বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদযাপনে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে ধর্মযোগ কাঙ্ক্ষিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব এই পার্বণটি ধর্মনিরপেক্ষতায় ফিরিয়ে আনা অতি আবশ্যক। তাহলেই বাঙালি জাতিসত্তার একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবরূপে বাংলা নববর্ষ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে। আমরা অতি আবেগে আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে দিনটিকে প্রচার করি, বিবেচনাও করি নিশ্চয়ই। আমাদের প্রান্তিকের সমষ্টিগত মানুষ সকালে পান্তাভাত, লবণ ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে আহার করে। ঐতিহ্যের অজুহাতে নববর্ষে পান্তা-ইলিশ ভোজের আধিক্যে মেতে ওঠে উৎসবে অংশ নেওয়া সমাজের সুবিধাভোগীরা। অথচ প্রান্তিকের মানুষরা তাদের অর্থনৈতিক কারণে নুন-পান্তা খেতে বাধ্য হয়, বাঙালি সংস্কৃতি কিংবা ঐতিহ্য রক্ষায় মোটেও নয়। ইলিশ বাঙালির প্রিয় খাদ্য ছিল বটে। তবে এখন মধ্যবিত্তদেরও ইলিশ কিনতে ভাবতে হয়, উচ্চমূল্যের কারণে। ঐতিহ্যের নামে কি পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ উপহাস বা তামাশা নয়? অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলা নববর্ষ প্রকৃতই ভূমি রাজস্ব-বিভাগের নববর্ষ। বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবর, খাজনা আদায়ের অনুকূল সময় বিবেচনায়। মোগল আমলে ভূমির পূর্ণ অধিকার ছিল কৃষক-প্রজার, জমিদারদের নয়। জমিদার শুধুই খাজনা সংগ্রাহক। ভূমির মালিকানা জমিদারদের ছিল না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনে কৃষক-প্রজা ভূমির অধিকার হারায়। ভূমির অধিকারপ্রাপ্ত হয় ইংরেজ কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমিদার শ্রেণি। এই জমিদার শ্রেণি খাজনা সংগ্রাহকের পাশাপাশি ভূমির মালিকানার স্বত্বও পেয়ে যায়। সামন্তবাদী নিপীড়নমূলক শোষণ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে।
পলাশীর যুদ্ধ জয়ে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার সর্বময় ক্ষমতা কোম্পানির করতলগত হয়ে পড়ে। অনুগত নবাবদের সামনে রেখে কোম্পানি মোগলদের আনুগত্য স্বীকার করেই এগোচ্ছিল। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে ১২ আগস্ট বার্ষিক ২৬ লাখ টাকা রাজকর পরিশোধের চুক্তিতে মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৬ সালে খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে পহেলা বৈশাখ ‘শুভ পুণ্যাহ’ উৎসবের সূচনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চৈত্রসংক্রান্তির দিবসের মধ্যে কৃষক-প্রজাদের খাজনা পরিশোধে বাধ্যবাধকতা আরোপিত ছিল। খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ কৃষক-প্রজাদের হালের গরু, লাঙল, তৈজসপত্র পর্যন্ত বিক্রি করে খাজনা পরিশোধ করতে হতো। আর যারা খাজনা পরিশোধে নিরুপায়, তাদের ভাগ্যে জুটত জমিদারদের নির্মম শোষণ-নির্যাতন। কৃষক-প্রজা নিগ্রহে আদায়কৃত খাজনার বদৌলতে জমিদাররা পহেলা বৈশাখে পালন করত লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত পুণ্যাহ উৎসব। এ পুণ্যাহ উৎসবই আজকের ঐতিহ্যের স্মারক বাংলা নববর্ষ উদযাপন। পহেলা বৈশাখের পুণ্যাহ উৎসব সামন্ত জমিদারদেরই উৎসব ছিল। সমষ্টিগত কৃষক-প্রজার জন্য দিনটি ছিল খাজনা পরিশোধে নিঃস্ব হওয়ার দুর্দিন। আমরা যে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠি সেটা অতীতের পুণ্যাহ এবং জমিদার শ্রেণির উৎসবেরই অনিবার্য ধারাবাহিক; সমষ্টিগত মানুষের উৎসব অতীতেও ছিল না, আজও নয়। সমাজের অধিপতি শ্রেণির আরোপিত উৎসব অনুসরণ সাধারণ মানুষের পক্ষে অতীতেও সম্ভব ছিল না, আজও নয়। কবি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসরের জমিদার রূপে জমিদারের কাচারি ঘরে পুণ্যাহ উৎসব করেছিলেন। কিন্তু আমন্ত্রিতদের শ্রেণি, বর্ণ ও সম্প্রদায়গত আসন বৈষম্যে হতবাক কবি আসন সমতার নির্দেশ দিয়েছিলেন নায়েবকে, কঠোর কণ্ঠে। শ্রেণি এবং হিন্দু-মুসলমানদের আসন বৈষম্যের অবসানের পরই কবি-জমিদার রবীন্দ্রনাথ পুণ্যাহ উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে তিনি বাংলা নববর্ষ কখনো পালন করেননি। তবে পহেলা বৈশাখ বরণে ধর্মীয় কিছু আচার স্বল্প পরিসরে কবি পালন করতেন। আজও শান্তিনিকেতনে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ পালিত হয় না। কবি রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার প্রবর্তন করেছিলেন। প্রতি বছরান্তে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা ধারাবাহিকভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে।
পাকিস্তানি আমলে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও, স্বাধীনতার পর ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে এখন মহা-উৎসবে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোতে ‘বৈশাখী ধামাকা’ ‘বর্ণিল বৈশাখ’ বিভিন্ন আকর্ষণীয় চটকদার শব্দের সম্ভারে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে নববর্ষ আগমনে। বিজ্ঞাপনের হিড়িকে গণমাধ্যমে যেন জোয়ার বয়ে যায়। ক্রেতা আকর্ষণে উৎপাদকরা ঢালাও বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রকাশ করে, মুনাফার অভিপ্রায়ে। তাদের কিন্তু ক্রেতারা নিরাশ করে না। শহরের বিপণিবিতানে প্রচণ্ড ভিড় ও বেচাবিক্রি সেটাই প্রমাণ করে। নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদী তৎপরতা দৃশ্যমান। মুনাফার লিপ্সায় নববর্ষ উদযাপনকে পুঁজিবাদ বেছে নিতে বিলম্ব করেনি। উসকে দিয়েছে সব শ্রেণির মানুষকে ভোগবাদিতার অভিমুখে। মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা, খ্রিষ্টানদের বড়দিন পৃথক পৃথক সম্প্রদায়গত প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু বাংলা নববর্ষ সব ধর্মমতের বাঙালির একমাত্র উৎসব বলেই পণ্য, পোশাক, খাদ্য ইত্যাদি ভোগ-বিলাস সমাগ্রীর ব্যাপক বেচাবিক্রির অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করে কোন বোকায়! পুঁজিবাদ তাই মুনাফার অভিপ্রায়ে মানুষকে উসকে দিয়েছে ভোগবাদিতার অভিমুখে। পুঁজিবাদী প্রবণতা বিরাজ করে বাংলা নববর্ষ উদযাপন ঘিরে।
মানতেই হবে আমাদের সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাড়া দেশের মোট জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু উৎসবে শামিল হতে পারে না, তাদের অর্থনৈতিক কারণে। যে উৎসব সব মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না, সে উৎসব জাতীয় উৎসব হিসেবে কি গণ্য করা যায়? যে উৎসব ধর্মমুক্ত নয়, সে উৎসবকে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব বলার যৌক্তিকতা কোথায়? জাতিগত উৎসবের আড়ালে জাতির মধ্যকার শ্রেণি-বৈষম্যকে উপেক্ষা করা যায় কি! জাতির মধ্যকার ঐক্য-সংহতি ক্রমাগত বৈষম্য ও বিভাজনের চূড়ান্ত সীমায়। জাতির মধ্যকার সম্প্রীতি যদি না-ই থাকে, তাহলে জাতির উৎসব পালন সর্বজনীন হবে কোন উপায়ে! জাতির মধ্যকার বৈষম্য-বিভাজন এবং ধর্মীয় আচার নির্মূল করা সম্ভব হলেই বাংলা নববর্ষ যেমন সর্বজনীন হবে, তেমনি হবে বাঙালি জাতির একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
মন্তব্য করুন