শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এক নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি অপ্রত্যাশিত নয় মোটেই। নির্বাচনের আগেই তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে একমুহূর্তও দেরি করেননি। বলা যায় তিনি একেবারে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। ফলে এরই মধ্যে তিনি সারা বিশ্বে ‘ট্যারিফ ম্যান’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। সেই শুল্কের একাংশ সেদিন থেকেই কার্যকর হয়ে গেছে। বাকি অংশ বুধবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। চিঠিতে তারা বর্ধিত শুল্ক স্থগিতের আবেদন করেছিলেন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন তিনি। তবে এ সময় পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। অবশ্য চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, চীন ছাড়া যেসব সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ক স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে, তাদের ওপর আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করেছেন। এটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে। ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রার মানে কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে তিনি আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে সময় দেওয়া হোক, যাতে আমদানি বাড়িয়ে ও শুল্ক কাঠামো সংস্কার করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। চিঠির শেষাংশে ড. ইউনূস অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যে আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের এ অনুরোধ গ্রহণ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করতে আমরা যে অনুরোধ করেছিলাম, তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডার সমর্থনে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব আমরা।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শ্লথ হবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মনে করছে, বিশ্ব এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া ঘোষণার হার বাড়ছে। সাধারণ মানুষ তেমনভাবে অবসর বা বিনোদনে অর্থ ব্যয় করছে না। তার ওপর আমদানি পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার আবারও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিশোধমূলক শুল্কে দেশটির রপ্তানিও মার খেতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কোনো দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। উপরন্তু সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হতে পারে। তাই শুল্কনীতি বিষয়ে মার্কিনিদের নমনীয় হওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন