আমাদের দেশে চিকিৎসাব্যয় মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে ওষুধের ক্ষেত্রে এ ব্যয় সাধারণ মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। শুধু ওষুধে তাদের ব্যয় হয় ৬৪ শতাংশ টাকা, যার পুরোটাই যায় তাদের পকেট থেকে। ব্যয় কমাতে সরকারি হাসপাতালগুলোয় প্রচলিত ডিসপেনসারির পরিবর্তে ফার্মেসি চালুর চিন্তা করছে বর্তমান সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষ যে দামে ওষুধ কেনেন, তার তিন ভাগের এক ভাগ দামে কিনতে পারবেন। সত্যিকারই যদি তা হয়, তা অত্যন্ত ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় কাজ হবে—এ নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই।
বুধবার কালবেলায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন এসব ফার্মেসিতে বহুল ব্যবহৃত ২৫০ ধরনের ওষুধ কেনা যাবে প্রচলিত যে দাম রয়েছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ দামে। ওষুধের গুণগত মানও হবে সর্বোচ্চ। শুরুতে সব সরকারি হাসপাতাল চত্বরেই বসবে এ ফার্মেসি। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালের বাইরেও এ সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি ফার্মেসিতে এ ২৫০ ধরনের ওষুধ দিয়ে ৮৫ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি-ইডিসিএল। এবার থেকে বাড়বে বাজেট। প্রয়োজন অনুযায়ী বেশি পরিমাণে কেনা হবে ওষুধ। বাড়ানো হবে সরকারের উৎপাদন সক্ষমতা। সরকারি ফার্মেসির বড় চ্যালেঞ্জ ওষুধ চুরি ঠেকানো। তাই পুরো ব্যবস্থা ডিজিটাল করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব ফার্মেসিতে নিয়োগ দেওয়া হবে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। তবে এ আলোচনা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, কম টাকায় সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ সরকারের।
গবেষণা বলছে, প্রায় ১৮ শতাংশ পরিবার তাদের মোট খরচের ১০ শতাংশের বেশি খরচ করে স্বাস্থ্যসেবায়। এ ছাড়া ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ পরিবারকে তাদের খাবারের বাইরের ব্যয়ের মধ্যে ৪০ শতাংশ খরচ করতে হয় স্বাস্থ্যসেবার জন্য। এ ব্যয়ভারে বছরে অন্তত ৬১ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পৌঁছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত কয়েক কোটি মানুষ। একজন রোগীর গড় চিকিৎসা ব্যয় অধিকাংশের নাগালের বাইরে। ফলে ওষুধ কিনতে গিয়েই প্রতি বছর দরিদ্র হন অনেক রোগী। দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের প্রায় ৬১ শতাংশ বন্ধু ও আত্মীয়দের সহায়তা থেকে নেওয়া। এ ছাড়া প্রায়ই ধার ও সম্পদ বিক্রির মতো দুর্যোগকালীন অর্থায়নের মাধ্যমে মেটানো হয়। এসব পরিবারের প্রায় ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তির খরচ মেটাতে সম্পদ বিক্রি করা হয়।
আমরা মনে করি, দেশের অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চলমান ওষুধের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সরকারের এ উদ্যোগ নিয়ে ভাবনা সন্দেহাতীতভাবে সাধুবাদযোগ্য। কেননা, দরিদ্র পরিবারে অসুস্থতা অসহায়ত্বের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। একদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিরাজমান দীর্ঘদিনের অপ্রতুল চিকিৎসাসেবা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা; অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবার মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়—উভয় পরিস্থিতিই অধিকাংশ মানুষের জন্য বৈরী। এ অবস্থায় অন্তত ওষুধের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়, তা সবার জন্যই স্বস্তির খবর। আমাদের প্রত্যাশা, সরকারের এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেন একদিন জনবান্ধব ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে ওঠে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করবেন।
মন্তব্য করুন