গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ বাংলাদেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ধর্মঘট হয়। গতকাল মঙ্গলবারও এ ধারা অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এদিন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ইসরায়েলের নৃশংসতায় ক্ষোভের দানা বাঁধছে। জেগে উঠছে বিশ্ব বিবেক। নিরীহ ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি সেনারা যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, তা মানবসভ্যতার ইতিহাসের নজিরবিহীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ইহুদিরা। ওই সময় হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর সেই ইহুদিরা দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, তা হিটলারের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা আজ আপন দেশে পরবাসী। ওই এলাকায় যাদের রয়েছে চার হাজার বছরেরও বেশি সময়ের বসতির ইতিহাস; তারাই এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তুর মতো জীবনযাপন করছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরায়েলিরা এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এরই বিরুদ্ধে এখন সারা বিশ্বের মানুষ প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে। সারা বিশ্বের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষও চায় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার অবসান হোক।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের দেশে বিক্ষোভ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটার শোরুমে ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান দাবি করে এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাটার সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘাতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা কিংবা বাটা ইসরায়েলি মালিকানাধীন—তথ্যটি ভুল। এক বিবৃতিতে বাটা কর্তৃপক্ষ বলেছে, একটি ‘ভ্রান্ত’ ধারণা থেকে তাদের ব্যবসার ওপর এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে। বাটা ঘিরে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি মালিকানাধীন বা ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষে রাজনৈতিকভাবে জড়িত। নিজেদের ইতিহাস তুলে ধরে বাটার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাটা একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যার যাত্রা শুরু হয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে এবং কোনো রাজনৈতিক সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। দুঃখজনকভাবে, এ ভ্রান্ত ধারণার ফলে বাংলাদেশে আমাদের কিছু আউটলেট সম্প্রতি ব্যাপক ভাঙচুরের শিকার হয়েছে।’
বিক্ষোভের মধ্যেই বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁয় হামলা করা হয়। এটা খুবই লজ্জাকর ও দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। অন্যথায় আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তবে আশার কথা এই যে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকায় বাটা জুতার দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, ওই ঘটনার সঙ্গে আরও যারা যুক্ত ছিল, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে জনমত গড়ে উঠছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা, বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এ ভিন্ন আর কোনো পথ খোলা নেই।
মন্তব্য করুন