মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১
সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৯ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৯:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যর সর্বমোট সংখ্যা ছিল ১১টি এবং ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এই আট বছরে জিআই সংখ্যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১টি।

তখন আমি ও আমার মতো এই দেশের কিছু মানুষ অবাক হয়েছিলাম। কারণ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জিআই সংখ্যা দেখে, কারণ তখন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ৫১৭টির বেশি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য ছিল, আর (অন্যান্য দেশেও অনেক বেশি) সেই অনুযায়ী আমাদের দেশে জিআই স্বীকৃতি পণ্য ছিল অনেক কম।

যাই হোক, প্রথম জিআই পণ্যর স্বীকৃতি সাল থেকেও যদি বলি আট বছরে জিআই সংখ্যা ১১টি, সেখান থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ২০২৫ জানুয়ারি এই দুই বছরে নতুন করে ৪০টি জিআই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাদের দেশে ৬৪টি জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে ও প্রতিটি উপজেলায় দুইয়ের অধিক জিআই সংখ্যা পাওয়ার মতো পণ্য আছে এবং এটি হলো আমাদের উৎপাদিত দেশীয় সম্পদ।

এটা নিয়ে পুরোনো ও নতুন নতুন উদ্যোক্তার যেমন কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তেমনি উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন বাজার তৈরি করার শ্রেষ্ঠ একটি সময়। এখন যদি আমি সম্ভাবনার জায়গা থেকে সম্ভবের কথা বলি তাহলে বলব, এখন দেশীয় পণ্যর উদ্যোক্তাদের জিআই পণ্যর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্যিকীকরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে ও জিআই পণ্য বাজারজাত করার জন্য ও সঠিক পণ্য ও সঠিক মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি ইনস্টিটিউটগুলোকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে উৎপাদনকারী ও উদ্যোক্তাদের কিছু কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, যাতে ভোক্তা অনেক সহজে পণ্যকে ক্রয় করতে পারে। সে সময় একটি স্বীকৃতি জিআই পণ্যের ভৌগোলিক উৎপত্তিগত স্থানের ওপরও নির্ভর করে। আর এ উৎপত্তির বৈশিষ্ট্যগুলো জিআই পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করাতে অটোমেটিক সাহায্য করে।

জিআই স্বীকৃতি পেলেই পণ্যের আলাদা দেশে-বিদেশে সে পণ্যের ব্র্যান্ডিং তৈরি হয়ে যায়, বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া সহজ হয়। জিআই পণ্য আলাদাভাবে একটি বিশেষ পণ্য হয়ে যায়। তাই আমিও একজন উদ্যোক্তা হিসেবে মনে করি এখন শুধু সংখ্যার দিকে গুরুত্বের পাশাপাশি জিআই পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণে সুবিধাগুলো আমাদের লুফে নেওয়া।

দেশীয় উৎপাদিত খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্যে কখনো কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, কখনো স্থানীয় সরবরাহকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন ও বেশিরভাগ পণ্য মজুত বা গুদামজাত করে রাখে ও আবার অন্যান্য অনেক পণ্য আছে উৎপাদন করে পড়ে থাকে বিক্রি হয় না। একই পণ্য আমদানি পণ্যর ওপর নির্ভরতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পণ্য বেশি মূল্য ও পুরোনো পণ্য নতুন করে বাজারজাত করা হয়। তাই দেশে আমাদের অভ্যন্তরীণ যে পণ্যগুলো উৎপাদন হয় ও সেই পণ্য যদি আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে বাণিজ্যিকীকরণ সুযোগগুলো শুরু হয়, তাহলে চাহিদা আরও বেড়ে যাবে এবং গুদামজাত করার সুযোগ থাকবে না। ফলে ভোক্তারা সঠিক ও ভালো পণ্যটি ভোগ করতে পারবে।

একদিকে নতুন খাদ্যশস্য পণ্যকে অনেকদিন ধরে গুদামজাত করে ক্রেতাদের ভোগ করাচ্ছে, আবার অন্যদিকে উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটি জিআই স্বীকৃতি পণ্য যদি নিশ্চিতভাবে গ্রাহক বুঝতে পারে এটা জিআই পণ্য ও সঠিক পণ্যটা আমি হাতে পেয়েছি, তাহলে ক্রেতা বেশি দাম দিয়ে কিনতেও সমস্যা মনে করবে না। তাই জিআই পণ্যের সুনাম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য উৎপাদকদের এক হয়ে কাজ করতে হবে এবং নিয়মনীতি তৈরি করতে হবে ও মেনে চলতে হবে।

দেশে উৎপাদিত কৃষি, মৃৎশিল্প, হস্তশিল্পসহ অনেক পণ্য ১০০ ও ২০০ বছরের সাক্ষী এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে যদি সত্যিই দেশ ও দেশের বাইরে সঠিক প্রচার করতে চাই ও সেই পণ্য যদি আমাদের জিআই স্বীকৃতি পণ্য হয়, তাহলে আমরা প্রবাসী ক্রেতাসহ অন্যান্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। তবে নতুন করে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। পাশাপাশি দেশের জিডিপিতে অর্থনৈতিক বড় ধরনের অবদান রাখবে।

আমরা দেখি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো বাৎসরিক বিলিয়ন ডলারের একটি টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করে। তাই এই ৫১টি জিআই পণ্য দিয়ে ছোট ছোট সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের টার্গেট আমাদের হাতের কাছে। অর্থনীতিতে ৫১টি পণ্যের বিশাল পরিবর্তন ও সম্ভাবনা রয়েছে। এখনই সম্ভব জিআই ট্যাগ দেওয়া আমাদের দেশীয় পণ্যকে বিভিন্ন কৌশলে ও সরকারি রপ্তানির লজিস্টিক সুবিধা তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার তৈরি করার।

সাইফুল ইসলাম

দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তা

স্বত্বাধিকারী: বাকল

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ‘বাধ্য হবে’ ইরান : খামেনির উপদেষ্টা

টেশিসকে হাইটেক পার্ক করে ‘চীনের পরিকল্পনা’ আনার চিন্তাভাবনা

ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র!

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্য নিহত

আগামী ১৫ বছর রিয়ালে থাকতে চান বেলিংহাম

পানিতে ভেসে গেল উপকূলের ঈদ আনন্দ, ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি

পাকিস্তানে থাকা আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো শুরু

টানা ছুটিতে যেভাবে চলছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো

ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ যেন কেউ পরিবর্তন করতে না পারে : আমীর খসরু

সাভারে নৈশপ্রহরীকে গুলি করে হত্যা

১০

ভারতে আতশবাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ১৮ জনের মৃত্যু

১১

যশোরের চৌগাছায় বৃহৎ গ্রামীণ উৎসব

১২

টাঙ্গাইলে ফেসবুকে কমেন্টের জেরে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর

১৩

আধিপত্য বিস্তারে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের সংঘর্ষ, আহত ১০

১৪

বুয়েটের নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা

১৫

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ‘সিকান্দার’, দুই দিনে ১০০ কোটি পার

১৬

জুলাই বিপ্লবে শহীদ ডা. রুবেলের পরিবারকে তারেক রহমানের ঈদ উপহার

১৭

সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, নির্বাচন নির্বাচনের মতো : মির্জা ফখরুল

১৮

আফগানিস্তানকে শিগগিরই সুখবর দেবেন পুতিন

১৯

মিয়ানমারে ভূমিকম্প : মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭১৯

২০
X