মাগুরায় আলোচিত ধর্ষণের শিকার শিশুটির অবস্থা গতকাল দুপুর পর্যন্ত ছিল সংকটাপন্ন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার জ্ঞান ফেরেনি। প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সরকার তার সুচিকিৎসার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে রিমান্ড। ঘটনার প্রতিক্রিয়া বা ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশ ফুঁসে উঠেছে। জোরেশোরে প্রশ্ন উঠেছে, এসব অপরাধে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিয়ে। সব মিলিয়ে বিষয়টিতে সামগ্রিক বা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। তবে বর্বরতার শিকার শিশুটির প্রাণপ্রদীপ চিরতরে নিভে যাওয়ার শঙ্কা কাটেনি।
চিকিৎসকের ভাষ্যে, শিশুটির যৌনাঙ্গ ও গলায় বড় ক্ষত রয়েছে। শিশুর ফাঁস দেওয়ায় বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেছে। অক্সিজেন স্বল্পতায় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন।
এদিকে গত শনিবারের মতো রোববারও ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের বিচার দাবিতে উত্তাল ছিল সারা দেশ। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘৃণা প্রকাশের সঙ্গে সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে ধর্ষক-নিপীড়কদের ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ-মানববন্ধন কর্মসূচি। ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ মিছিল, মশাল ও লাঠি মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ সময় তারা আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই; সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে; ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন নানা স্লোগান দেন। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি দাবি উঠছে ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসি। গতকাল সোমবারও বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছিল অব্যাহত।
এদিকে আদালত থেকে শিশুটি ও তার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুটি ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে এবং সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে আগামী ১৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা গত রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্তকাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ না হওয়ার অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। বর্তমান আইনে রয়েছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত।
সব মিলিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি এখন সামগ্রিক দাবি হয়ে ধীরে ধীরে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। সমাজ জাগলে রাষ্ট্র অবশ্যই জাগবে। তাই, ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সমাজের এই ঐক্যবদ্ধ-সোচ্চার অবস্থানের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান সরকার এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবিষয়ক আইন ও তার বাস্তবায়নের কার্যকর উপায় বাতলাবে এবং সে পথেই ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন এমন আইন না করা হয়, যার অপব্যবহারে নিরপরাধ ব্যক্তির অপূরণীয় ক্ষতি শিকারের সম্ভাবনা থাকে।
মন্তব্য করুন