মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৭ এএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

ন্যায়বিচার পাবে!

ন্যায়বিচার পাবে!

মাগুরায় আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে তিন দিন পর মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি দিক দিয়ে কিছুটা অগ্রগতি হলেও বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হৃদয়বিদারক বর্বরতার শিকার শিশুটির জীবন এখনো ‘সংকটাপন্ন’।

গত শনিবার উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডিএমসিএইচ থেকে বলা হয়, তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তাকে ধর্ষণের পাশাপাশি তার গলা চেপে ধরা হয়েছিল। ফলে তার শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এ কারণেই তার সমস্যাগুলো আরও বেশি হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৮ বছরের শিশুটি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে বিলম্বে হলেও ঘটনার তিন দিন পর মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয় আসামিদের।

এদিকে এ ঘটনায় সারা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়ার। মূলধারার গণমাধ্যম তো রয়েছেই, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় এই পৈশাচিক ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে রাজপথে হচ্ছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। বিশেষ করে শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন। তারা এসব অপকর্মের জন্য দেশব্যাপী সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাকে দায়ী করছেন; যা নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, বর্তমান সরকারে চারজন নারী উপদেষ্টা থাকার পরও এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল রোববারও দেশব্যাপী ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলেছে। সবার একটাই দাবি, নারীর নিরাপত্তা এবং নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বাত্মক; অর্থাৎ আইন ও বিচারিক দিক দিয়ে কঠোর অবস্থানের।

আমরা জানি, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজের পরিচিত দৃশ্য। গত কয়েক দশকের এ চিত্রে দেখা যাবে, এ অবস্থার দিন দিন অবনতিই হয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে বেশকিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে দেখা গেছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু পরিস্থিতির আশানুরূপ অগ্রগতি ঘটেনি। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ঘটেনি, যা অত্যন্ত হতাশার। ধর্ষণের ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানও করা হয়। তবে বাস্তবে এর প্রভাব কতটুকু—এটিই বড় প্রশ্ন।

আমরা মনে করি, ধর্ষণের ঘটনাগুলোয় প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী। কেননা আমাদের সমাজে এ ধরনের অপরাধ করে অপরাধী নানাভাবে আইনের ফাঁক গলে পার পেয়ে যায়। অতীতেও আমরা একাধিক আলোচিত ধর্ষণের কথা জানি, যার যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। স্বভাবতই সেসব ঘটনা এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট ও বর্বরোচিত অপকর্মে লিপ্ত প্রকৃত অপরাধীকে যদি সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এই প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি পরিবার, ধর্মালয়, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রসহ সমাজের সব প্রতিষ্ঠানকে কল্যাণ সমাজ গঠনে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা চাই, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটিসহ প্রত্যেকে ন্যায়বিচার পাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিএনপি নেতা খুন

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের বিচার হবে : উপদেষ্টা মাহফুজ

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শরীয়তপুরে দুগ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, আহত ৭

নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহত, আহত ১০

৫ আগস্টের পরে সত্যিকারের ঈদ আনন্দ শুরু হয়েছে : জাহিদুল ইসলাম

অপহরণ চেষ্টার মামলায় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

বাজারে হামলার শঙ্কা, ১৪৪ ধারা জারি

ঈদের দ্বিতীয় দিনে যমুনা সেতুতে টোল আদায় ৭৯ লাখ

ঈদের মেলায় ফুচকা খেয়ে হাসপাতালে ৫০

১০

ইরানে হামলার হুমকি, ট্রাম্পকে সতর্ক করল রাশিয়া

১১

কুমিল্লায় গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

১২

মাইকে ঘোষণা দিয়ে টর্চের আলোতে সংঘর্ষে নামে গ্রামবাসী

১৩

বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ফিরছেন শ্রেয়াস আইয়ার

১৪

মার্কিন হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ‘বাধ্য হবে’ ইরান : খামেনির উপদেষ্টা

১৫

টেশিসকে হাইটেক পার্ক করে ‘চীনের পরিকল্পনা’ আনার চিন্তাভাবনা

১৬

ভারতের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র!

১৭

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ সদস্য নিহত

১৮

আগামী ১৫ বছর রিয়ালে থাকতে চান বেলিংহাম

১৯

পানিতে ভেসে গেল উপকূলের ঈদ আনন্দ, ১৫ হাজার মানুষ বন্দি

২০
X