প্রখ্যাত সাংবাদিক এ বি এম মূসা একাধারে একজন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের তিনি সুদীর্ঘ ছয় দশক সাংবাদিকতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১-এ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমৃত্যু সরকারের নির্মোহ সমালোচনায় তিনি ছিলেন নির্ভীক ও সোচ্চার। তার লেখনী ছিল ক্ষুরধার। তিনি আমৃত্যু সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। এ বি এম মূসার জন্ম ১৯৩১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তিনি ৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলে ‘মুসা ভাই’ বলে খ্যাত সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ বি এম মূসা ১৯৫০ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন। ওই বছর ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার এবং বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনি সংবাদে যোগ দেন। তবে ১৯৫৪ সালে অবজারভারে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করতেন। স্বাধীনতার পর বিটিভির মহাব্যবস্থাপক, মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন। দেশে ফিরে এসে ১৯৮১ থেকে ’৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ’৮৫ থেকে ’৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে কিছুদিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারবার সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ‘মুজিব ভাই’ নামের একটি বই রচনা করেন। ২০১২ সালে প্রকাশিত এ বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সংশ্রবের বয়ান রয়েছে। এ বি এম মূসা একুশে পদকসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু-পরবর্তী এক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়—‘এ বি এম মূসা ছিলেন আমাদের সাংবাদিক সমাজের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ও অভিভাবক।’
মন্তব্য করুন