দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়। তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে। বিস্ফোরণের ফলে আগুনে দগ্ধ হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনাও। আমরা জানি, প্রাকৃতিক গ্যাসের তীব্র সংকট সারা দেশেই। দিন দিন এটি আরও প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশজুড়ে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। দিন দিন এলপি গ্যাস বা সিলিন্ডার গ্যাসের বাজার বড় হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কালবেলায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দুর্ঘটনাগুলো কেন ঘটছে এবং করণীয়ই বা কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় না। বরং বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে গ্যাস লিকেজ থেকে। মূলত সিলিন্ডার থেকে কানেক্টিং পাইপ, চুলার রাবার কিংবা রেগুলেটরের ত্রুটি থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে একপর্যায়ে হচ্ছে বিস্ফোরণ। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে তার একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ৭০৪টি। এর মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনা ৪৪টি। এ সময়ে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনে আহত হয় ৮ জন। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ৫৩ আর প্রাণ হারায় ৮ জন। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে; কিন্তু আগুন ধরেনি—এমন ঘটনা আছে ৯টি। এসব বিস্ফোরণে আহত দুজন ও প্রাণ হারায় তিনজন। সর্বশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ায় এক আবাসিক ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ১১ জন দগ্ধ হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুরে গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ ফেটে (লিকেজ) বিস্ফোরণে দগ্ধ হয় একই পরিবারের তিনজন। তার আগে ১১ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর-রামগাতী রুটে চলাচলকারী আল-মদিনা পরিবহন গ্রিনলিফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দেখভাল বা নজরদারির দায়িত্বে যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সেখানে কর্মরত রয়েছেন যারা, তারা কি ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করছেন? এ বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে, তা আরও হতাশার। যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে এর নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতের উদ্যোগে। তদারকি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তদারকির দায়িত্বে থাকা খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। খোদ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একজন বিস্ফোরক পরিদর্শকের ভাষ্য, পুরো ঢাকা বিভাগের জন্য মাত্র সাতজন পরিদর্শক রয়েছেন। তার দাবি অনুযায়ী এ জনবল দিয়ে শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশনেই তদারকি করা কঠিন। সেখানে বিভাগজুড়ে পরিদর্শন করা অসম্ভব। স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট পরিদপ্তরের প্রতি আমাদের প্রশ্ন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে তাদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় না। বিস্ফোরণ ঘটে সিলিন্ডারের অন্য যন্ত্রাংশে। অব্যবস্থাপনা, অবৈধ ব্যবহার ও মানহীন সংযোগরোধের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
আমরা মনে করি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এ নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট সংস্থায় জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। কঠোর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমাতে ব্যাপকভাবে সচেতনতা প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে যেন গ্রাহকরা নিরাপত্তাবিধি সম্পর্কে যথাযথভাবে সচেতন হতে পারেন। আমাদের প্রত্যাশা, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এ বিষয়ে তৎপর হবে।
মন্তব্য করুন