জামাল নজরুল ইসলাম বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী, প্রফেসর ইমেরিটাস, গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং সৃষ্টিতত্ত্ববিদ। তিনি ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সাব-জজ এবং তার মা রাহাত আরা বেগম ছিলেন লেখক ও গায়িকা।
জামাল নজরুল ইসলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি (স্নাতক) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফাঙ্কশনাল গণিত এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় দ্বিতীয় বিএসসি (স্নাতক) ডিগ্রি পান। ১৯৬০ সালে এমএসসি (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে সফলভাবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষা- গাণিতিক ট্রিপোস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ট্রিনিটি কলেজ থেকে ফলিত গণিত এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন, ট্রিপোসের চূড়ান্ত অংশ (তৃতীয় খণ্ড) ডিস্টিংকশনের সঙ্গে শেষ করেন।
জামাল নজরুল ইসলাম পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগে সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে গবেষণা করেছেন। ফলিত গণিতের প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজে। এ ছাড়া ফেলো হিসেবে কাজ করেন বিজ্ঞান গবেষণা কাউন্সিল, ইউনিভার্সিটি কলেজ ও কার্ডিফে। ১৯৭৮ সালে ফ্যাকাল্টি হিসেবে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে ফিরে না আসা পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে গবেষণা করেন। দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগদান করেন এবং সেখানকার অধ্যাপক হিসেবে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৮৯ সালে তিনি গাণিতিক ও ভৌত বিজ্ঞানের গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সংস্থাটিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে মৃত্যুর আগপর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পেশাগতভাবে ড. ইসলাম ছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তার গবেষণার ক্ষেত্র ছিল আপেক্ষিকতা, বিশ্বতত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব। তিনি ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ এবং বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই প্রকাশ করেন। ১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত তার বই ‘দি আল্টিমেট ফেইট অব দি ইউনিভাস’ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। এটি জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোস্লাভ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরও বেশ কিছু বই স্প্যানিশ, জার্মান, ডাচ ও ইতালীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষায় তার সবচেয়ে বিখ্যাত ‘বই কৃষ্ণগহ্বর’ (ব্ল্যাকহোল)। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হলো ‘মাতৃভাষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’, ও ‘শিল্প, সাহিত্য এবং সমাজ’। তিনি ৭৪ বছর বয়সে ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ চট্টগ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।