দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি বাহিনীর মাধ্যমে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ইহুদিরা। সেই ইহুদিরা সাত দশক ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, তা নাৎসি বাহিনীর নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। টানা ১৫ মাস লড়াই শেষে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যুদ্ধে ইসরায়েল কৌশলগতভাবে নানা সাফল্য অর্জন করার দাবি করতে পারে, যেমন ইসমাইল হানিয়াসহ হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা, হামাসকে সমর্থন দেওয়া লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর, এমনকি ইরানে আক্রমণ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মেরে ফেলা ও ক্ষতিসাধন করা ইত্যাদি। কিন্তু ইসরায়েল তার প্রধান লক্ষ্য হাসিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজার ধ্বংসস্তূপের মাঝেও হামাস টিকে আছে।
যুদ্ধবিরতির পর এখন ফিলিস্তিনিদের নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন প্রহসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলে নিতে চাওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশের পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে এক উদ্ভট তত্ত্ব হাজির করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, সৌদি আরব নিজ দেশের মাটিতেই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে। কারণ, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়ার মতো যথেষ্ট জায়গা সৌদি আরবে আছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনিদের প্রস্তাবিত গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে চলে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে ইসরায়েলের সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে পুনর্বাসনের পর গাজা দখলে নিতে চাওয়ার যে পরিকল্পনার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তারপর এ নির্দেশ দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘সৌদি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেখানে তাদের অনেক ভূমি আছে।’ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। ইসরায়েল রাষ্ট্রকে বিপন্ন করবে, এমন কোনো চুক্তি তিনি করবেন না। যুক্তরাষ্ট্র সফরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন নেতানিয়াহু। ওই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে তার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ ছাড়া দুই নেতা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবল সম্ভাবনাই নয়; এটি ঘটতে চলেছে।’ তবে ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার কথা ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনটা হলে ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন শুরু হবে বলে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বিশ্বনেতারাও বলেছেন, ট্রাম্পের এ মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, অনৈতিকও বটে। আর ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা প্রয়োজনে মরবেন, তবু গাজা ছাড়বেন না। এমন একটি পরিস্থিতিতে আবারও মানবিক বিপর্যয় শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এমন বিপর্যয় এড়াতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।