আলম রায়হান
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমলাতন্ত্রের মৌচাকে ঢিল

আমলাতন্ত্রের মৌচাকে ঢিল

অনেকের বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আধুনিকতম ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান। এ মানুষটির প্রতি আমার গভীর নজর ছিল সাপ্তাহিক সুগন্ধায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময়। সিনেমার নায়ক-নায়িকা যেমন স্বপ্নের মানুষ হিসেবে পরিগণিত হন। সে সময় মাসুদ কামালসহ টিমের অন্যদের প্রতি কাতর অনুরোধ ছিল, মানের দিক থেকে সুগন্ধাকে যায়যায়দিনের সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া; কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। যদিও প্রচারসংখ্যা এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে যায়যায়দিনের থেকে কেবল নয়, বহুল প্রচারিত বহু পত্রিকার চেয়ে আগানো ছিল সাপ্তাহিক সুগন্ধা। এই প্রচারসংখ্যার কারণ নিয়ে অনেকেরই বিশেষ বিস্ময় ছিল। সম্ভবত এ বিষয়ে আগ্রহ ছিল সাপ্তাহিক বিচিত্রারও এবং এ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আসিফ নজরুল সুগন্ধা অফিসে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রদায়ক। মেধাবী এ মানুষটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা। শুধু তাই নয়, অনেকেরই ধারণা, ফ্যাসিস্ট হাসিনার মাফিয়া সরকার বিতাড়িত করার নেপথ্য কারিগরদের অন্যতম অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

কলামের সূচনা পর্বে কারও কারও মনে হতে পারে, শফিক রেহমান ও আসিফ নজরুল প্রসঙ্গে বন্দনাগীত লিখতে বসেছি। আসলে মোটেই তা নয়। তবে আজকের লেখার ভিত্তি হিসেবে শফিক রেহমান ও আসিফ নজরুলের কিছুটা হলেও ধারণাগত সংশ্রব রয়েছে। বিশেষ করে শফিক রেহমানের। গুণী এ মানুষটিকে অনেকেই নানান পরিচয়ে চেনেন। তবে সাধারণভাবে তিনি বিটিভির ‘লাল গোলাপ’ এবং সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের মালিক-সম্পাদক হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তবে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন যে দৈনিকে রূপান্তরিত হয়েছে, তা হয়তো আমজনতার খুব কমই জানা এবং আরও কম লোক জানেন, মৌচাকে ঢিল নামে শফিক রেহমান একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। তবে এটি তেমন জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা অথবা প্রচার পায়নি। অথচ প্রচার না পাওয়ার পত্রিকাটির প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল, কেবল নামের কারণে। কী কারণেই যেন এই নামের শানে-নজুল জানার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। সে সুযোগও এলো মাসুদ কামালের মাধ্যমে দৈনিক যায়যায়দিনে কাজ করার সুবাদে। শফিক ভাইর সঙ্গে কথা বলে এই আগ্রহের বিষয়টি কিঞ্চিৎ মেটানো গেছে। সম্প্রতি মনে হচ্ছে, যে বিবেচনায় গুণীজন শফিক রেহমান পত্রিকার নাম ‘মৌচাকে ঢিল’ রেখেছিলেন, সেই একই থিম থেকেই বর্তমান সরকার হয়তো আমলাতন্ত্রের মৌচাকে ঢিল মেরেছে। বলে রাখা ভালো, শফিক রেহমানের ‘মৌচাকে ঢিল’ নামের পত্রিকাটির আয়ু ছিল স্বল্পমেয়াদি। বলাবাহুল্য, কোনো পত্রিকা পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা এবং সরকারের আমলাদের আস্থার বিষয়টি জটিল ইকোয়েশনের ওপর নির্ভরশীল। আর এর ওপর নির্ভর করে দীর্ঘ অথবা স্বল্প আয়ুর বিষয়টি। আসলে পত্রিকার পাঠক এবং রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ইকোয়েশনের জটিলতা বাইরে থেকে ধারণা করা কঠিন। যেমন অনেকেরই ধারণার বাইরে, দন্তের প্রকারভেদ এবং এর গভীরতা কত। একইভাবে আমলাতন্ত্রেও শিকড় অনেক গভীরে।

লাইন ছাড়া যেমন রেল চলে না তেমনই রাষ্ট্র চলে না আমলা ছাড়া। আর ফেরাউনের আমলেও আমলাতন্ত্র ছিল। এ প্রসঙ্গ সামনে এনেছিলেন বিগত মাফিয়া সরকারের পরিচ্ছন্নমন্ত্রী আবদুল মান্নান। তিনিও সাবেক আমলা ছিলেন। তবে ফেরাউন বা অন্য কোনো সম্রাট থেকে একটা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র ভিন্ন হতে বাধ্য। একটা সৎ ও দক্ষ আমলাতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনাকে অনেক সহজ করে তোলে। একটা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবিধানিক চেতনা অনুসারে সরকারি আমলাতন্ত্রের কর্মপরিধি নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি আমাদের দেশে। অবশ্য এর পেছনে অনেক ধরনের খেলাধুলা ছিল এবং আছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে নানান ধরনের বিপত্তি।

সাধারণত সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু আমলারা থেকে যায়। আমলাদের এ অবস্থা অনেকটা সদ্যপ্রয়াত বিএনপি নেতা মিরপুরের আলোচিত এস এ খালেকের মতো। তিনি বলতেন, ‘আমি তো সরকারি দল করি, সরকার পাল্টালে আমি কী করব!’ রাজনীতিকের ক্ষেত্রে এটি একটি নির্লজ্জ অজুহাত হলেও চীন মুল্লুকে দুই হাজার বছর আগে শুরু হওয়া আমলাদের এটিই হচ্ছে ইনবিল্ড প্রবণতা এবং এটিই হওয়া উচিত। কারণ আমলাতন্ত্র হচ্ছে শাসনব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ফলে শাসক পাল্টালেও আমলা নিয়ে সংগত কারণেই বিগত দিনগুলোতে খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করা হতো না। বহু বছর ধরে চলে আসা বিষয়গুলোর একরকম বাস্তব ভিত্তি থাকে। সুফলও থাকে। অন্তত অসুবিধার চেয়ে সুবিধার মাত্রা বেশি। এটি স্বতঃসিদ্ধ। এর পরও একসময় অনেকটা মিউমিউ করে বলা হতো—‘সরকার বদলালে মন্ত্রীরা জেলে যায়, সচিবরা কেন যায় না!’ কিন্তু এবার বেশ ব্যতিক্রম ঘটেছে। সনাতনী ধারা ভেঙে বর্তমান সরকার আমলে জেলে যাওয়া বিষয়ে মন্ত্রী-আমলা অনেকটাই যেন একাকার হয়ে গেছে। অবশ্য মন্ত্রীরা যত না জেলে গেছেন, তার চেয়ে বহুসংখ্যক পালাতে সক্ষম হয়েছেন, যা কারও কারও বিবেচনায় রহস্যজনক।

এ ব্যাপারে কোনোই সংশয় নেই, বিগত সরকারের অনেক অপকর্মের মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রশাসনকে দলদাস করে ফেলা। পটপরিবর্তনের পর এই দলদাসদের খুবই সাবধানতার সঙ্গে চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের মধ্যে ৭৬৪ জনের তালিকা করার পদ্ধতিতে আমলাদের মধ্যে পরিত্যাজ্যদেরও চিহ্নিত করা উত্তম ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি; বরং প্রশাসন সংস্কার কমিশনকে কেন্দ্র করে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে বলে ধারণা অনেকেরই। এদিকে চাকরিতে থেকেও ‘বঞ্চিত আলখাল্লা’ পরা একদল কর্মকর্তার হা-হুতাশ ও লম্ফঝম্ফ সীমা ছাড়িয়েছে। আর সরকার পরিচালনার মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত আমলাতন্ত্র যে কোন অবস্থানে নেমেছে, তা দেশবাসীর কাছে নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে ডিসি নিয়োগকাণ্ডকে কেন্দ্র করে। কথিত ‘বঞ্চিতদের’ অবাঞ্ছিতদের চাপে চিড়েচ্যাপটা হয়ে একযোগে সারা দেশে ডিসি নিয়োগ কি সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে দেওয়া গেছে? মনে হয় না! আর এ বিষয়ে টংকা লেনাদেনার খবর তো মূলধারার গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে ডিসিদের প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই ‘আসল সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু সেই আসলের দশা কী?

স্মরণে রাখা প্রয়োজন, পলাতক স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে একে অন্যকে সাইজ করার জন্য ‘জামায়াত-বিএনপি’ তকমা দেওয়া হতো। এ তকমা দেওয়ার হোতারা ছিলেন আসলে ধান্দাবাজ। নানান কিসিমের ধান্দাবাজের ফাঁদে পা দিলে যে কী পরিণতি হয়, তা তো অকাট্যভাবে প্রমাণ করে গেছেন উড়ন্ত পলায়নের মধ্য দিয়ে দুরন্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। এই বাস্তবতা বিবেচনায় না রাখলে নানান ধরনের বিপত্তি যে ঘটতে পারে, তার বহু আলামত কিন্তু এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট। এদিকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’—একই তকমার বাতাসে যে কেবল হাসিনার অতি ভক্তরা কুপোকাত হবেন, তা কিন্তু নয়। বরং অনেক সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাও সাইজ হয়েছেন, হচ্ছেন। প্রসঙ্গক্রমে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া এ আমলার দক্ষতা ও সততার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবারই জানা। কিন্তু ওই অতিরিক্ত সচিবকে একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব করার দুদিনের মধ্যে ওএসডি করা হয়েছে। নিয়োগের দুদিনের মাথায় একজন সচিবকে পত্রপাঠ বিদায় করার যুক্তি কী? গুরুতর অপরাধ থাকলে তাকে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব করা হলো কেন! এ কি ওপরের কর্তাদের অদক্ষতা, নাকি প্রশাসনে নতুন দলবাজ চক্র আবার দানব হয়ে উঠেছে? স্মরণ করা যেতে পারে, সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের আমলে ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হতো। এ কারণে এরশাদ আমলে বিদ্রুপ করে ‘সিএমএলএ’-এর অ্যাব্রেবিয়েশন করা হয়েছিল, ‘ক্যানসেল মাই লাস্ট অ্যানাউন্সমেন্ট।’ বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, সামরিক সরকার যেসব কাণ্ড করে পার পেয়ে যায়, তা কিন্তু অন্য সরকারের বেলায় হওয়ার নয়।

এদিকে প্রশাসনে কেবলই পলাতক স্বৈরাচারের ছায়াভূত দেখার বিষয়টি এক ধরনের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, প্রকৃত প্রস্তাবেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা প্রশাসনে ভক্ত-অনুরক্ত-অবৈধ সুবিধাভোগীদের হাটবাজার বসেছিল। অনেকটা রেড লাইট এলাকার মতো। যেটি রাজনীতির অঙ্গনে করেছেন আমাদের দেশের সামরিক শাসকরা। এতে রাজনীতি কলুষিত হয়েছে। শেখ হাসিনা আর কয়েক ধাপ নেমে রাজনীতি-সরকার-বিচারসহ সবই নষ্ট করেছেন। আর এই ধারায় সরকারের মেরুদণ্ড আমলাতন্ত্রের সর্বনাশ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু হাসিনা আমলের চাকরিজীবী, বিশেষ করে আমলারা কি আগের কেবলায় আছেন? নিশ্চিতভাবে বলা চলে, যারা শেখ হাসিনার প্রতি অতি অনুগত ছিলেন তারাই ৫ আগস্টের পর সবার আগে কেবলা বদল করেছেন। আর এটি নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং এটিই আমলাদের ইনবিল্ড প্রবণতা। অতএব যারা হাসিনা সরকারের অনুগত ছিলেন তারা পরবর্তী সরকারের অনুগত হবে না—এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। আর কেবল আনুগত্য নয়, দুর্নীতিতেও আমলাদের চ্যাম্পিয়ন করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যেমনটা সামরিক শাসকরা রাজনীতিকদের করেছেন। মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনীতিকরা দুর্নীতি না করলে ছোট-বড়-মাঝারি আমলা তো অনেক দূরের কথা, পিয়নও দুর্নীতি করতে পারে না। কাজেই সরকারের অভ্যন্তর থেকে দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে অব্যর্থ দাওয়াই হচ্ছে রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রী এবং অরাজনৈতিক সরকারের উপদেষ্টাদের দুর্নীতিমুক্ত থাকা। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ড. ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এখনো শুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর কোন খবর বের হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। অবশ্য মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টারা কেবল সৎ হলে হয় না, পারঙ্গমও হতে হয়। যে দীক্ষা রাজনীতিকরা বছরের পর বছর নানান টানাপোড়েন ও সংকট মোকাবিলা করে এবং মানুষের সঙ্গে মিশে অর্জন করে থাকেন। আর প্রশাসন ক্যাডারের লোকেরা তা শেখেন বিভিন্ন ধরনের সরকারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, যা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেলায় সাধারণত ঘটে না। বলা হয়, পেশাজীবীরা ছাত্র হিসেবে মেধাবী। কথা সত্য। কিন্তু এই মেধা একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আর এই মেধাবী ডাক্তার-প্রকৌশলী-কৃষিবিদরা শুরুতে প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশ না করে অনেকটা মাঝপথে প্রশাসনের মেরুদণ্ডে শামিল হতে চান কেন? এ তো দেখি শুরুতে সড়ক পথে চলার পর মাঝপথে ট্রেনে ওঠার মতলবি বাসনা। একটু তলিয়ে দেখলেই অনুধাবন করা সহজ হবে, এই বাসনা শুদ্ধ ধারণা থেকে প্রসূত নয়। যেমন শুদ্ধ নয় হাসিনা সরকারের আমলে ‘ঘরে ঘরে বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার মতো ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারের আমলে ব্র্যাকেট-বন্দি অসংখ্য ক্যাডার সৃষ্টি করা। এতে সরকার কাঠামো ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ১৯৯৬ সালে কথিত জনতার মঞ্চের নামে আমলাতন্ত্রকে দলীয় কলঙ্কের ট্যাগ দেওয়ার অপকর্ম করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সেই ধারায় ক্রমান্বয়ে আমলাতন্ত্র এক ধরনের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। যেখানে আলু-পটোল-আন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেখানে আমলাতন্ত্রের কঠিন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা কতটা সম্ভব? তবে এটি কঠিন হলেও অসম্ভব কিন্তু নয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, পোড়খাওয়া রাজনীতিকদেরই যেমন দেশ চালাতে হবে, তেমনই দেশের প্রশাসন চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্যাডার থাকতে হবে। ঘুণে ধরা হলেও এ ক্ষেত্রে এখনো ভরসা হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডার। এদের অধিকতর দক্ষ করে তুলতে হবে। আর সততা? সেটি সরকারের মেরুদণ্ড তথা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভরশীল সরকারের মাথা তথা মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ওপর। এর প্রমাণ কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রেখে গেছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি এরশাদের সময়ও আমলাতন্ত্র ততটা দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

অধুনা খবর হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে নানাভাবে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে ৭৬৪ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি গত ৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদনের পর এক প্রকার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এসব কর্মকর্তার ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকলে রাষ্ট্র বা জনগণের কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। বরং ৭৬৪ জনের মধ্যে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট আছেন এবং যাদের দক্ষতা ও সততা প্রমাণিত তাদের প্রশাসনে ফেরানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সনাতনী পদ্ধতি তো আছেই। এটা করা না হলে আমলাতন্ত্রের মৌচাকে যে ঢিল মারা হয়েছে তার প্রতিক্রিয়া কতটা সামলানো যাবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানান মত রয়েছে। কে জানে প্রশাসনে এখনো একজন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘাপটি মেরে খেলছে কি না। এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। অন্তত ফেরাউনের চেয়ে নিজেকে শক্তিশালী মনে করা কারোরই সমীচীন নয়। যেমনটি মনে করে অকল্পনীয়ভাবে ধরা খেয়েছেন শেখ হাসিনা। অতএব সাধু সাবধান!

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ডিইউএমসিজেএএ’র

আ.লীগ নিষিদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

তিলকারত্নের বিদায়: নারী দলের কোচ খুঁজছে বিসিবি

রূপগঞ্জে ছুরিকাঘাতে আহত ২ কিশোরের মৃত্যু

টেন্ডার ছাড়াই ৭০ হাজার টাকায় ১৮ বিঘা জমি নিলেন বিএনপি নেতা

সরকারি চাকরির স্বেচ্ছায় অবসরের বয়স-পেনশন নিয়ে যেসব প্রস্তাব

হাজিদের মোটা অঙ্কের অর্থ ফেরত দিচ্ছে এশিয়ার মুসলিম দেশ

‘বিএনপি ও প্রশাসনের কতিপয় লোকজন আ.লীগকে রক্ষা করছে’

ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে নির্বাচন যেন বিলম্বিত না হয় : সাইয়েদুল আলম

বিইউ’র নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম

১০

কামরুলের ১৫ হিসাবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা অবরুদ্ধ

১১

দেশকে খুনি হাসিনা ধ্বংস করে গেছে : ড. খন্দকার মারুফ

১২

রংপুর শহরে বন্ধ সব পেট্রল পাম্প, ভোগান্তি চরমে

১৩

কমেছে বিদেশগামী অভিবাসীর সংখ্যা, বেড়েছে নারীদের বিএমইটি নিবন্ধন  

১৪

পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

১৫

বাংলাদেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ

১৬

৫০ হাজার টন গম এলো আর্জেন্টিনা থেকে

১৭

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় খালাস পেলেন যারা

১৮

নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য নাম ও প্রতীক চাইলেন শিক্ষার্থীরা

১৯

আহতদের জন্য আসা বিদেশি চিকিৎসকদের সুখবর দিল এনবিআর 

২০
X