বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৬ এএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কালবেলা বিশেষ সাক্ষাৎকার

‘সবার আগে বাংলাদেশ’ তরুণদের জন্য বিএনপির ব্র্যান্ডিং

‘সবার আগে বাংলাদেশ’ তরুণদের জন্য বিএনপির ব্র্যান্ডিং

পারভেজ মল্লিক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুক্তরাজ্য শাখা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় দেশে মা-বাবা দুজনকেই হারিয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর সম্প্রতি দেশে ফিরে কালবেলাকে সাক্ষাৎকার দেন

কালবেলা: দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এমনকি ছাত্রদলের রাজনীতিও করেছেন। আপনার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

পারভেজ মল্লিক: মূলত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। আমি যে স্কুলে এবং কলেজে পড়েছি, সেখানে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু তখন থেকেই ধানের শীষ বা বিএনপির প্রতি আমার এক ধরনের আগ্রহ ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। সেই যে যুক্ত হয়েছি, তারপর থেকে আজও বিএনপির একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করছি। ছাত্রদল থেকে আমি স্বেচ্ছাসেবক দল করেছি, আমি স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। এরপর বিএনপির রাজনীতিতে আসি।

কালবেলা: বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী বলে মনে করেন?

পারভেজ মল্লিক: আমি মনে করি, যে কোনো রাজনৈতিক দলের সামনে সবসময় কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই সামনে এগোতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ আসে নতুন নতুন আঙ্গিকে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিরোধী দল ও মতকে যেভাবে গলা চেপে ধরে রাখা হয়েছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটা আর ঘটেনি।

বিগত স্বৈরাচারী সরকার বিএনপি তথা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে, বিনা অপরাধে নাটক সাজিয়ে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশান্তরিত করা হয়েছে। জিয়া পরিবারের ওপর যে অত্যাচার এবং অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম নির্মমতা আর কোনো পরিবারের ওপর হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো কোনোরকম রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। প্রকারান্তরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। জিয়া পরিবারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসা অগাধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্ব যেটাই বলি না কেন, বাংলাদেশের ঐক্যের প্রতীক জিয়া পরিবার।

কালবেলা: বিএনপিকে আরেকবার ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এখন দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে বিএনপির নেতৃত্ব কীভাবে কাজ করছে?

পারভেজ মল্লিক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি তার গুণাবলি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমাদের স্ট্রাইকিং ফোর্সগুলো যেমন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল তারা মাঝেমধ্যে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। আবার কখনো কখনো দেখা যাবে তারা একত্রিত হয়ে কর্মসূচি করছে। কখনো বিএনপি একা একা প্রোগ্রাম করছে, কখনো সব অঙ্গসংগঠনকে একত্রে নিয়ে প্রোগ্রাম করছে। এর মাধ্যমে সবার সঙ্গে সবার একটি পারস্পরিক বন্ধন এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের সুসংগঠিত করা হচ্ছে।

আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ব্যক্তিগত কাজের বাইরে দিনের বাকি সবটা সময় দলের জন্য ব্যয় করছেন। দলের নেতাকর্মীদের জন্য তিনি তার সবটা সময় দিচ্ছেন। তার সঙ্গে যেমন দলের শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ হচ্ছে, তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে তার সরাসরি কথা হচ্ছে। আসলে তিনি শারীরিকভাবে দেশের বাইরে অবস্থান করলেও মানসিকভাবে পুরোটা সময় বাংলাদেশেই রয়েছেন। যেহেতু এখন ইন্টারনেটের যুগ, মুহূর্তের মধ্যে একটি ঘটনা বা সংবাদ সারা বিশ্বের মানুষ জেনে যেতে পারে। তাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রেও তার দেশের বাইরে থাকাটা খুব একটা অভাব তৈরি করছে না। তিনি সেখানে থেকেও সবকিছুতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।

আমি মনে করি তারেক রহমান যেভাবে দলের জন্য সময় দিচ্ছেন এবং কাজ করছেন তাতে দল কখনোই নিজেকে নেতৃত্বশূন্য মনে করছে না। আমি মনে করি, তার নেতৃত্বে আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

কালবেলা: বর্তমান সময়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার পথে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি দলের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের জন্য কী ধরনের সুযোগ তৈরি করছে বলে মনে করেন?

পারভেজ মল্লিক: আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন স্লোগান যুক্ত করেছেন। স্লোগানটি হলো—‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এই স্লোগানটি বিএনপির একটি ব্র্যান্ডিং হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত বিজয় দিবসে বিএনপি নতুন এই স্লোগান সামনে রেখে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন ফরমেশনে হাজির হয়েছিল। এই স্লোগানের মাধ্যমে মূলত তারুণ্যকে প্রমোট করা হয়েছিল।

আপনারা সেই প্রোগ্রামে তারুণ্যের জোয়ার দেখেছেন। তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার বা তারেক রহমান যে তরুণদের নিয়ে ভাবেন তার একটি বড় চমক হলো ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান। আমি মনে করি, ১৬ ডিসেম্বর নতুন স্লোগানের এ প্রোগ্রামটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য একটি ইতিহাসের ইতিহাস হয়ে থাকল। এ স্লোগানের মাধ্যমে তারেক রহমান এ দেশের তরুণদের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।

কালবেলা: বিএনপির ভবিষ্যৎ কৌশলে কোনো ধরনের নীতি পরিবর্তন বা আধুনিকীকরণ প্রয়োজন বলে মনে করেন কি?

পারভেজ মল্লিক: যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার নীতি-কৌশলে পরিবর্তন-পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করতে হয়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। তিনি যখন কথা বলেন তখন অনেক সময় নতুন আইডিয়া বা পরিবর্তনের কথাও বলেন। তিনি সেগুলো মিন করেই বলেন। বিএনপি ৩১ দফা নামে জনগণের সামনে একটি রাজনৈতিক সনদ পেশ করেছে। এই ৩১ দফার মধ্যে বিএনপির আগামীর পথ পরিকল্পনা ও নীতি পরিলক্ষিত। বিএনপি আগামী দিনে কী করতে চায়, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে কী করবে প্রতিটি পয়েন্টে আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করা আছে ওই সনদে।

খেয়াল করলে দেখা যাবে, মানুষ এখন যে সংস্কারের কথা বলছে তা আজ থেকে দুই বছর আগেই তারেক রহমান বলেছেন। তিনি ৩১ দফার মাধ্যমে এমন সব বিষয় জনগণের সামনে এনেছিলেন, যা জনগণ আজ মনেপ্রাণে চাইছেন। সুতরাং আমি মনে করি, বিএনপি সময়ের প্রয়োজনে এবং জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে তার নীতি প্রণয়নে সর্বদা প্রস্তুত।

কালবেলা: বিএনপি যেসব সংস্কারের কথা বলেছে তা অনেক দীর্ঘমেয়াদি। এটা প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করেন?

পারভেজ মল্লিক: যখন একটি সংস্কারের চিন্তা বা আইডিয়া সামনে আসে তখন তাৎক্ষণিকভাবে সেটা বাস্তবায়ন হয়ে যায় না। তবে আমি মনে করি, আগে শুরুটা হওয়া উচিত। বিএনপি যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আগে তাকে দেশের ক্ষমতায় আসতে হবে। আর ক্ষমতায় যেতে হলে প্রথমে জনগণের কাছে যেতে হবে, মানুষের ভোট পেতে হবে, নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন করতে হবে। ক্ষমতায় যাওয়ার পরই সংস্কারের দফাগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর দল প্রায়োরিটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে কোন কাজগুলো আগে করা হবে।

আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, বিএনপি তার প্রমিজে সবসময় অটল থাকে। বিএনপি যা বলে সবসময় তা করে দেখায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তিনি সেটা করেছিলেনও। তিনি বহু দলকে তার রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে যুগে একটি দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর দেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এটাও বিএনপি নিয়ে এসেছিল।

বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে এবং নিজেরা সংস্কারের জন্য কাজ করেছে। আমাদের দল সবসময় মানুষের চাহিদা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছে। মানুষ এখন যে সংস্কারের কথা বলছে, ২০২২ সালে তারেক রহমান সেই সংস্কারের কথা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। সুতরাং স্বীকার করতে হয়, বিএনপি সবসময় সংস্কারের দিকে একধাপ এগিয়ে আছে।

কালবেলা:অনেকে বলছেন বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধী হিসেবে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

পারভেজ মল্লিক: আমি মনে করি, বিএনপির জনপ্রিয়তা যারা ভয় পায় তারা এবং পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররা এ ধরনের কথা প্রচার করছে। এটাই সত্যি, প্রশাসনে এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা মনে করে, যদি দেশে একটি স্বাভাবিক নির্বাচন হয় এবং মানুষ যদি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপিই বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে। আর বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রশাসনের স্তরে স্তরে বসে থাকা পতিত স্বৈরাচাররা বিপদে পড়বে। তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে হয়তো অমিল হয়ে যাবে। এ কারণেই তারা এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে।

আমাদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সবাই মনে করে, ড. ইউনূস একজন ঐক্যের প্রতীক এবং তিনি বাংলাদেশের মানুষকে একটি ঐক্যের জায়গায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু বিষয় হচ্ছে, ড. ইউনূস একা তো সবকিছু করতে পারবেন না। দেশ পরিচালনা করতে হলে তার তো একটি টিম প্রয়োজন। আমার মনে হয়, সেই টিমের মধ্যে কিছু ইচ্ছে করে আমলা এবং ফ্যাসিবাদের দোসররাও ঢুকে গেছে। তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।

আমরা দেখেছি হাসিনা আমলের আমলা, সচিবরা এখনো যার যার জায়গায় বসে আছেন। আমি বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করল না কেন? শেখ মুজিবের মূর্তি বানিয়ে মুজিববাদ প্রচার করা ব্যক্তিকে পোস্টিং করা হলো কেন? তারা কি পুনরায় বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চান? এদের কর্মকাণ্ড দেখে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখেছি, হাসিনাকে বিতাড়িত করার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা জনমত গঠনে অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে কাজ করেছে, তাদের কোনো কাজে লাগানো হচ্ছে না, বরং দৃষ্টিসীমা থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে দুজনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বিষয়টাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আরও তো অনেকে রয়েছে যাদের কাজে লাগানো যেত। রাষ্ট্র সংস্কারে যাদের যুক্ত করা যেত কিন্তু তাদের সাইডে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়গুলো আমাদের সামনে প্রশ্ন তৈরি করে। সন্দেহ তৈরি করে, তারা কি আবার পতিত স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনতে চান? আমরা সরকারের বা সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই ফ্যাসিবাদী দোসরদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করি।

কালবেলা: ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকে আওয়ামী লীগের বিচার এবং নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছেন। অনেক রাজনৈতিক দলও এমনটা বলার চেষ্টা করছে। এ বিষয়টা আপনি বা আপনার দল বিএনপি কীভাবে দেখছেন?

পারভেজ মল্লিক: আমি মনে করি, একটি গণতান্ত্রিক দেশে আপনার যেমন রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আপনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে আপনার বিচার করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে সরকারের। এ সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই উচিত বলে মনে করি। দলগতভাবে বিএনপি কখনো বলেনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আবার বিএনপি কখনো এটাও বলেনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। বিষয় হলো, আমি একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে, একটি গণতান্ত্রিক দলের কর্মী হিসেবে কোনো অগণতান্ত্রিক কথা তো বলতে পারি না। আমি যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, সেই গণতন্ত্রকেই যদি আমি ব্যাহত করতে চাই তাহলে সেটা আমার দ্বিমুখী অবস্থান হয়ে যাবে।

আমি মনে করি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। বর্তমান যারা উপদেষ্টা রয়েছেন, যারা সরকার পরিচালনা করছেন তারা এটা নির্ধারণ করবেন। তবে এখানে জনগণের মতামত অবশ্যই নিতে হবে।

কালবেলা: বিএনপির আগামীর নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আনা উচিত এবং সেখানে তরুণ রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণ কতটা জরুরি বলে মনে করেন?

পারভেজ মল্লিক: বিএনপিতে প্রবীণ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যেমন রয়েছেন, ঠিক তেমনি তরুণ উদীয়মান রাজনৈতিক কর্মীও রয়েছেন। আপনি যদি ঢাকা সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনের দিকে তাকান, দেখবেন সেখানে বিএনপির দুজন প্রার্থীই তরুণ। একদিকে তাবিথ আউয়াল, অন্যদিকে ইশরাক হোসেন। তারা দুজনই উদীয়মান রাজনীতিবিদ এবং উচ্চশিক্ষিত। বিএনপি এ ধরনের নেতৃত্ব তৈরি করেছে এবং জনগণ তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। সুতরাং বিএনপিতে প্রবীণ অভিজ্ঞ রাজনীতি বিদ্যমান যেমন রয়েছেন, তেমনি তরুণদের নিয়েও কাজ করছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখানে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি দলে তরুণ নেতৃত্বকে বিকশিত করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।

বিএনপি মনে করে, দলে তরুণ ও প্রবীণ নেতৃত্বের সংমিশ্রণ থাকলে সেটা দলের স্প্রিটকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে। আমি মনে করি, বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

কালবেলা: আপনি কি মনে করেন বিএনপি আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত?

পারভেজ মল্লিক: অবশ্যই। বিএনপি আগেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সফলভাবে কয়েক ধাপে বিএনপি বাংলাদেশে সরকার পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের আজকের এ জায়গায় উঠে আসতে দলটির অনেক অবদান রয়েছে। বিএনপি জনগণের দল এবং সবসময় জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেছে। বিএনপির একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে, দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি মনে করি, মানুষ বিএনপির কাছে আশা রাখে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার। আর বিএনপিও এজন্য প্রস্তুত রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল

বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙা শুরু

পাবিপ্রবিতে শেখ মুজিবুর ও শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভেঙ্গে দিলেন শিক্ষার্থীরা

‘হাজারটা লাশ মাড়িয়েও যার একবিন্দু অনুশোচনা নেই...’

রাবিতে শেখ পরিবারের নাম মুছলো বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, নতুন নামে চার হল

সারজিস আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাস

জামায়াত আমিরের ফেসবুক স্ট্যাটাস

এবার আ.লীগ নিয়ে বিএনপির নতুন অবস্থান

সার বিক্রিতে আ.লীগ নেতার অনিয়ম, অতঃপর... 

এবার সুধা সদনেও আগুন

১০

সৌদি আরবে বাংলাদেশি যুবক খুন

১১

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেবে বিএনপি’

১২

সাংবাদিকদের ওপর হামলা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বহিষ্কার

১৩

কুষ্টিয়ায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো হানিফের বাড়ি

১৪

মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল, সম্পাদক মিন্টু

১৫

৩২ নম্বরের সর্বশেষ অবস্থা

১৬

১৫ বছরে ১৩ বার বদলি হন ডা. পলাশ

১৭

নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করুন : জামায়াত নেতা রফিকুল

১৮

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর, খালেদা জিয়াকে স্মরণ করলেন ইলিয়াস

১৯

৩২ নম্বর ভেঙে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা পিনাকীর

২০
X